somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেকারত্বের দিনগুলি - দ্বিতীয় অংশ

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পূর্ববর্তী পর্বে আপনারা পড়েছেন আমি মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সে দারিয়ে নয়নের অপেক্ষায় ছিলাম। তারপর একসাথে বাসায় এলাম, খাওয়া দাওয়া এবং খোশগল্প করেছি। এবং একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল সেই লেফাফা!

বিছানায় শুধু পরে ছিলাম, ঘুম চোখে ঘুম যে সেরাতে কোথায় গায়েব হয়েছিল আমার জানা নাই! পাশে দেখলাম নয়ন ফোনে কি যেন গেইমস খেলছে। জিজ্ঞেস করলাম, "কিরে ঘুমাবি কখন?"
"ভাইয়া, না ঘুমিয়ে তিনরাত জেগে আছি! আজও থাকবো। একেবারে বাসায় গিয়ে সারাদিনের ঘুম দিবো!" আমি বললাম, "এতে শরীর খারাপ করবে।"
"আমি ওসব ভাবি না, আর লোকে কি ভাববে সেটা নিয়ে তো আরও ভাবি না!" আমি বললাম, "সেটা না ভাবাই ভাল তবে আমি তোরে যতটুকু জানি সে হিসেবে তুই চেঞ্জ হচ্ছিস!"
সে কিছু বললো না। আমি আবার বললাম, "কেউ যদি বলে আমাকে তুই কেমন তাহলে তো নির্দ্বিধায় বলতে পারবো তুই ভাল ছেলে এবং কোনো খারাপ গুণাবলি নাই! তোকে কেউ আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে কি বলবি?"
আমার জীবনে যদি ষ্টুপিড, বলদ কিংবা নিতান্তই বেওকুফ বা বেয়াক্কেল ধরণের প্রশ্ন করে থাকি তাহলে সেটা ছিল এটা! হাসতে হাসতে নয়ন স্ট্রেইট বলে দিল, "আরে ভাইয়া আমি কেমনে বলবো তুমি কেমন আর কেই বা আমাকে এটা জিজ্ঞেস করবে?"
কথা সত্য কিনা জানি না, হতেও পারে! বুঝলাম ধীরে ধীরে সে ইচ্ছাকৃতভাবে স্বজনদের ইগনোর করা শিখছে! আমিও হালকা সম্মতির সুরে বললাম, "ওহ হ্যাঁ! তাও ঠিক! যাস্ট এ জেনারেল অবজারভেশন।"

দুপুরের দিকে নয়নকে বাসের জন্য এগিয়ে দিতে আসলাম। বললাম, "ঠিক আছে বাস তো এসে গেছে, তুই পৌছে জানাস।" বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেল সে আর আমি বাসায় ফিরে এলাম। বারবার সেই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, ওর ইচ্ছাকৃত এড়িয়ে যাওয়া কোনোভাবেই মাথা থেকে নামছে না আমার। হঠাৎ মনে পরলো সেই লেফাফার কথা৷ ফাইল থেকে কাগজটা বের করলাম, পড়া শুরু করলাম,
"টু হুম ইট মে কনসার্ন!"
বেশি পড়লাম না, কারণ আমিই জানি। তবে একটু পিছনে ফেরা যাক?


আনুমানিক দেড় বছর পূর্বে,
আমি তখন সদ্য গ্রাজুয়েট। নিশ্চিন্তের দিনগুলো ক্রমেই শেষ হয়ে আসছিল। এমনই একদিন এশার জামাতের সময়, জুতা হাতে নিয়ে মসজিদে ঢুকতে যাবো তখনই ফোনে কেঁপে উঠলো! দেখি আমার আরেক কাজিন সাগর ভাইয়ের কল। ওদিকে আয়াত শুনে বুঝতে পারলাম হুজুর সুরা ফজরের মাঝামাঝি আয়াত তেলাওয়াত করছেন। কথা বলার সময় হবে বিধায় আমি কল রিসিভ করলাম, "হ্যা ভাইয়া, বল।"
"শোন, তোমার জবের বিষয়ে একজনের সাথে কথা বলছি এবং নম্বর তোমাকে একটা নম্বর মেসেজ করেছি সেটায় কল দিয়ে কথা বল।" আমি বললাম, "ভাইয়া একটু দেরি হবে, নামাজে আসলাম।" তিনি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন, "আরে এখনই কথা বল।"
বিরক্ত নিয়ে বললাম, "রাকাআত মিস হয়ে যাবে ভাই, এখন কথা বলতেই পারবো না, জামাত শেষে কল দিচ্ছি।" আর দেরি করলাম না কল কেটে দিতে।

নামাজের পর, সেই নম্বরে কল দিয়ে কথা বললাম। যার সারমর্ম ছিল, "তোমাকে যদি বলে কেন এখানে কাজ করতে চাও তবে তুমি বলবে স্যার আমি আপনার সাথে কাজ করতে চাই।" তারপর আরেকটা নম্বর দিয়ে পরেরদিন দুপুরে কথা বলতে বললেন তিনি।
আমি পরেরদিন কল দিলাম যোহরের নামাজের পূর্বেই। ফোন রিসিভ হল ওপাশ থেকে। মিনিট দুয়েক কথা বলার পর বললেন, "আপনি অফিসে চলে আসেন।" আমি বেশ দোটানায় পরে গেলাম। প্রথমত অফিস বাসা থেকে অনেক দূর, দ্বিতীয়তা ফ্রেশ ইস্ত্রি করা পোশাক নেই এবং লন্ড্রির দোকান বন্ধ, তৃতীয়ত, আমি খুব ক্ষুধার্ত!

যাই হোক, কোনো রকম চলার মত শার্ট-প্যান্ট পরে বিনা খেয়েই রওনা দিলাম অফিসের উদ্দেশ্য। দুপুর আড়াইটায় সেখানে পৌছালাম। একটা চারতলা ভবন, ২য় ও ৪র্থ তলায় তিনটা অফিস এবং বাকিগুলো ফ্যামিলি ফ্ল্যাট! সময় পেরিয়ে ঘন্টা যায় তবুও ডাক আসে না আমার৷ ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৫টা বেজে গেছে এবং তখন থেকে সেই একই স্থানে বসা আমি! এদিকে পেটে খিদের আওয়াজ একটু পরপর নোটিফিকেশনের মত বের হচ্ছে! শেষে একজনকে বললাম, "ভাইয়া, আমি ইন্টারভিউ দিতে এসেছি এবং অনেকক্ষণ হল কিন্তু ডাক পাচ্ছি না, স্যার কি অনেক ব্যস্ত আজ? আমার অনলাইনে ক্লাস আছে। একটু যদি জানাতেন প্লিজ!" উনি আরেকজনকে ডেকে স্যারের কাছে পাঠালেন। এর দুইমিনিটের মাথায় তিনি ডাকলেন আমাকে৷ গেলাম ভিতরে এবং তিনি বসতে বললেন। উনাকে দেখে ধারণা করলাম বয়স আমার বাবার কাছাকাছি। তিনি নানান কথা বললেন এবং প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু কোনোটাই একাডেমিক না বিধায় বেঁচে গেছি সেদিন। আমি পরিচয় দিলাম, ভাইয়ের পরিচয়ও দিলাম এবং শেষে তিনি বললেন, "এই যে তোমাকে এতটা সময় আমি দিলাম, এর পরিবর্তে আমি কি পাবো? আমার কোনো লাভ হল? উল্টো ক্ষতি হল না আমার প্রোডাকশনের?" আমি কি উত্তর দিব উনার এই প্রশ্নের! শুধু ভ্যাবলার মত এদিক ওদিক তাকিয়ে হা হু করলাম। শেষে তিনি বললেন, "তুমি আসতে পারো আজ এবং দুই একদিনের মাঝে জয়েন কর।"
এটা শুনে স্বাভাবিকভাবেই যে কারও খুশি হওয়ার কথা? কিন্তু আমার ভিতরে কেমন যেন দ্বিধা-সন্দেহ তৈরি হল বা নাখুশ হয়ে গেলাম। অফিস থেকে বের হয়ে প্রথমে শার্টের ইনটা ছেড়ে দিলাম। হাটতে হাটতে বের চলে গেলাম মেইন রোডে।

বাসে উঠেই বাসায় জানিয়ে দিলাম জয়েন করার কথা। সবাই খুশি, ঘন্টাখানেকের মাঝেই সবাই জেনে গেল আমি চাকরি পেয়েছি। সেদিন সারা রাত আমার মাথায় এটাই চিন্তা যে আমি কেন খুশি হতে পারছি না? এদিকে অফিসের লোকেশনটা যে খুব ভাল তাও না। অনেকের সাথে কথা বললাম। সবাই দুইভাবে উপদেশ দিলেন,
এক, "আরে আগে একটা কোম্পানিতে ঢুকে যাও, বাকিটা পরে দেখা যাবে!"
দুই, "দেখো, যা ভাল মনে কর।"


[ চলবে.... ]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×