প্রথম পর্ব : বিলম্ব মানেই মৃত্যু-১ ( লাইকারগাস )
বিজ্ঞানীরা আর শিক্ষাবিদেরা বহুদিন আগে থেকেই শিশুর ভবিষ্যৎ ব্যাক্তিতের বিকাশে টার জীবনের প্রথম কয়েকটি বছরের ভুমিকার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। লাইকারগাসের অনুগামীদের পাওয়া যাবে আজকের যুগেও, কিন্তু একেবারে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের জন্য বাধ্যতামুলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করতে সাহসী হয়েছে এমন রাষ্ট্র একটা ও পাওয়া যাবে না। সব বাবা-মায়েরাই বাচ্চাদের ভালবাসেন , তাদের জীবনের রাস্তা থেকে বাধাগুলি দূর করে , বিপদগুলি থেকে থেকে বাঁচিয়ে, রোগজ্বালা থেকে আড়াল করে রাখতে চান। আমরা কি আশা করব তাঁরা অন্য আচরন করবে ??? শিশুকে ভালবাসা স্বাভাবিক, সেটা সবাই বোঝে। নিজের শিশু সন্তানের প্রতি ভিন্ন প্রকারের আচরন করার কথা চিন্তা করাই শক্ত। তবে প্রায়ই বাবা-মায়েরা বাড়াবাড়ি করে থাকেন এবং এই ভাবে যারা তাঁদের কাছে প্রাণাধিক প্রিয় তাদের অপূরণীয় ক্ষতি করে থাকেন ।
পরীক্ষা থেকে দেখান গেছে যে ইঁদুরের ক্ষুধা , তৃষ্ণা , আর শৈত্য আরও অনায়াসে সহ্য করতে পারে যদি তাদের যান্ত্রিক উপায়ে সঞ্জীবিত করা যায় অথবা খুব বাচ্চা বয়সে শিতল পরিবেশের মধ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। গৃহপালিত পশুপাখিদের খুব বাচ্চা বয়সে প্রভাবিত করে দেখা গেছে যে তাদের কত গুলি অভ্যাসের তারতম্য ঘটানো সম্ভব । কৃষকদের মধ্যে রেওয়াজ আছে সদ্যোজাত বাছুর , ভেরা বা ছাগল ছানা দের শীতল পরিবেশে রেখে দেয়ার। এর ফলে প্রাণীগুলোর শরীরে শীততাপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা স্থিরতা আসে, তাই প্রানিগুল বড় হলে শীতের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ে ।
আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রেও অনুরুপ ব্যবস্থা নিলে তাদের ভালই হবে। কিন্তু তাদের মজবুত করে গড়ে তলা দূরে থাকুক আমরা তাদের পক্ষে জরুরি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে দিতেও চাই না, জীবনে তুচ্ছতম অসুবিধার মধ্যেও তাদের পড়তে দিতে চাইনা।বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের সবকিছু থেকে বাঁচাতে চান।তারা ভাবেন , আহা বড় হয়ে উঠুক , টার পরে জ্ঞান হলে তাঁরা সব শিখে নিবে কি করে জীবনের সব সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় , এই মনভাব এমনি অবাস্তব যে চেঁচিয়ে উঠতে ইচ্ছা হয় , কেন আপনারা শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বিকাশের পথে বাগড়া দিচ্ছেন ।
এই সাবধান বানি কিন্তু নিরর্থক উচ্চারন করছি না। প্রত্যেক দক্ষতার বিকাশ হওয়া চাই ঠিক সেই সময়ে যখন শিক্ষাটা আত্মস্থ করা যায় সবচেয়ে সহজে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারপরে শেখাটা আর হয়েই উঠবে না, টা সে যত কঠোর ভাবেই না চেষ্টা করা হক।
এটা ঠিক শিশুদের বিকাশ কিভাবে ঘটে সে বিষয়ে এখনো আমরা অনেক কিছুই জানি না, কিন্তু পশুপাখিদের ছানাপোনাদের বিষয়ে অনেক তথ্য আমরা যোগার করেছি। নিম্নস্তরের কি উচ্চস্তরের , সকল প্রাণীদেরই সদ্যোজাত বাচ্চাদের মস্তিস্কে তাদের আচরনবিধির জন্য অত্যন্ত নির্ভুল এবং বিশদ স্মারকলিপি থাকে যা না থাকলে তারা বাঁচতেই পারত না। স্তন্যপায়ীদের শাবকেরা সকলেই জানে স্তন্য চুষে খেতে, পাখিদের শাবকেরা যখন একসঙ্গে দিম থেকে ফুটে বেরয় তখন থেকেই তারা বাবা মা খাওয়াবে বলে ঠোঁট দুটি খুব বড় করে ফাঁক করতে জানে। হাঁসের বাচ্চা , রাজহাঁসের বাচ্চা ,মুরগির বাচ্চা এবং খুরয়ালা অনেক প্রানির শাবকেরা জন্মানোর পরমুহুরথ থেকেই তাদের মাকে অনুসুরন করতে পারে। সব বাচ্চারাই বিপদ এলে কোথায় লুকাতে হবে সেটা জানে ।
এই যে সব জটিল আচরন প্রকাশ , এগুলি সব যেমন তেমন আপনা আপনি ঘতছে না , নির্দিষ্ট উদ্দিপনা থেকেই হচ্ছে তাদের উদ্ভব। মার্জার ( সিংহ শিশু , বাঘের শিশু , বেড়াল ছানা ) বা সারমেয় ( কুকুর ছানা , নেকড়ে ছানা , শেয়াল শিশু ) জাতির সকল গোষ্ঠীর বাচ্চারাই মায়ের শরীরের লোমের মধ্যে নাক ঢুকিয়ে দিয়েই দুধ পান করা শুরু করে জন্মের পর পরই। খুরয়ালা প্রানির বাচ্চারা ছায়া পরছে বুঝতে পারলেই মাথা তলে স্তন্য পানের জন্য তইরি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় এটা ঘটে যখন তাদের মা এসে দাড়ায় বাচ্চার পাশে।
পাখিদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় বাচ্চা রা হা করে যখনই বাসার ওপরটার আলোতে আড়াল পরে বা বাসাটি অল্প নড়ে। আর বাবা-মা যখন বিপদ- সুচক ডাকটা ছাড়ে বাচ্চারা তখন ঢুকে যায় নিরাপদ আশ্রয়ে ।
এই ধরনের শিক্ষাকে বলা হয় মুদ্রিত জ্ঞান । এটা ঘটাতে পারে জীবনের কেবল একটা সময়েই। সদ্যোজাত হাঁসের বাচ্চা প্রথম চলন্ত যে বস্তুটি দেখবে তাকেই মা বলে মেনে নেবে টা সেটা হাঁস বা ফুটবল , কুকুরছানা বা কলের পুতুল যাই হক না কেন। জন্মের পরে পাঁচ ঘণ্টা যদি সে কোন চলমান বস্তু কে অনুসরন করে তাহলে টার প্রতি সে অনুভব করবে একটা ঘনিষ্ঠতা , টা সে নিজের মা হক কিংবা পালঙ্কত্রি মা । মুদ্রণটা ভাল হয় ডিম ফুটে বেরবার পরে তের থেকে সতের ঘণ্টার মধ্যে। এর পরে যেমন ধরেন ত্রিশ ঘণ্টা বয়সের একটা হন্স শিশুর ক্ষেত্রে এই মুদ্রন ঘটবেই না, তার সারা জীবন কাতবে অনাথ হয়ে , মা বাবার কাছে বসবাস করেও।
অনেক দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখানো যায় যে একটা প্রানির জীবনটাই বরবাদ হয়ে যেতে পারে যদি ঠিক সময়ে তাকে ঠিক শিক্ষা না দেয়া হয়।বাচ্চা বয়সে মা-হারা মেষ শিশু বড় হয়ে না পারে পালের মধ্য মাহে যেতে , না শিখবে দলের নিয়ম কানুন, তার জাতের অন্য ভেড়াদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারবে না। ঘর সংসার করতেও সিখবে না। অস্ট্রেলিয়ার মেষ পালকেরা এই ব্যাপার টা ভাল ভাবেই জানে তাই মা হারা মেষ শিশু দের তারা দয়া মায়া না দেখিয়ে মেরে ফেলে।
(....চলবে...)
প্রথম পর্ব : বিলম্ব মানেই মৃত্যু-১ ( লাইকারগাস )
বিলম্ব মানেই মৃত্যু-২ ( শিশুর বাল্যশিক্ষা )
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি
মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমস্যা মিয়ার সমস্যা
সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।
তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন