একজন মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে যে রকম ভাবে, স্বপ্ন দেখে, ভালবাসে, স্নেহ করে, তিল তিল করে বড় করে তোলে; পৃথিবীর কোন সন্তানই এরকমটি করতে পারে না। সম্ভবও নয়।
এই যে সন্তানের প্রতি মায়ের এত ভালবাসা এত আবেগ এত মহব্বত- এসব কিছুই কিন্তু চর্চা করে আনা সম্ভব নয়। অন্য রকম এক চিরন্তন সম্পর্কের সাথে আবদ্ধ থাকে সন্তান তার মায়ের সাথে। তাইতো দেখা যায় কোন অপরাধীরও পাশে এসে দাঁড়ানোর কেউ না থাকলেও মা ঠিকই এসে দাঁড়ান পাশে। তাঁর কাছে অপরাধের যৌক্তিক কারণগুলোর চেয়েও সন্তানের প্রতি ভালোবাসাই থাকে প্রগাঢ়, এটাকে তিনি ছিঁড়তে পারেন না। সত্যিই, এ এক অতুলনীয় দান সৃষ্টিকর্তার, অদ্ভুত রকমের সুন্দর নেয়ামত।
এস এস সির পাঠ শেষ করার পর মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হই। বিচ্ছিন্নতা এ অর্থে, একসাথে একই ছাদের নিচে বহুদিনের জন্য আর থাকা সম্ভব নয়। যেদিন বিদায় নিলাম মা ছিলেন স্বাভাবিক। বাসা থেকে বের হয়ে গেছি, জামা থেকে সূতা বেরিয়ে ছিল দেখে ফিরে গেলাম মায়ের কাছে। মা কাঁচি দিয়ে সূতা কাটছেন, কিন্তু সূতা খুঁজে পাচ্ছেন না, বাইরে দিয়ে প্যাঁচ দিচ্ছেন। খেয়াল করলাম মায়ের চোখে পানি। তাইতো চোখে ঝাপসা দেখছেন। আমারও হঠাত মনটা ভেঙ্গে গেল, ডুকরে কেঁদে উঠলাম। মাকে বুঝতে দেইনি।
বাস্তবে মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারিনি। মা আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। যত ভাল ভাল রসিকতা আছে, সবই করি মায়ের সাথে। মায়ের হাসি দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। মোবাইলে মায়ের সাথেই সবচেয়ে বেশি কথা হয়, এক্ষেত্রে পিক আওয়ার অফ পিক আওয়ার মূখ্য বিষয় নয়। বিপদে পড়লে মাকেই আগে জানাই।
বাসায় যখন যাই, সবভাই বোন আব্বা আম্মা মিলে একসাথে খেতে বসি। সময়টুকুকে টেনেটুনে লম্বা করি। সে সময়টুকু সত্যিই কতই না মধুর। সকালে সাধারণত আমরা খিঁচুড়ী খাই। কিছুটা অংশ রয়ে যায়। মা বেঁচে যাওয়া অংশটা অর্ধ দুপুরে পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে মাখিয়ে নিজ হাতে আমাদের খাওয়ান। বড়ই মজাদার এসব দৃশ্য।
আম্মাজী পেশায় একজন গৃহিনী, তবে প্রচুর সোস্যাল ওয়ার্ক করেন। যেখানেই যান, সেখানকার মধ্যমনি হয়ে যান খুব অল্প সময়ের মধ্যে। নানা বাড়ী ও দাদা বাড়ীতে মায়ের অ্যাপ্রোভাল ছাড়া কোন কাজই হয়না। নানা বাড়ীতে মা যেমন বড় মেয়ে, দাদা বাড়ীতে তেমনি বড় বউ। বহু মানুষ 'মানুষ' হল আমার মায়ের স্নেহ ভালবাসায়।
সন্তান দিবসের কথা কখনও শুনিনি, মা দিবসের কথা জানি। কিন্তু কেন? কারনটা বোধহয় এটাই, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা যতটা ন্যাচারাল, তেমনটি মায়ের প্রতি সন্তানের নয়। তাইতো সচেতনতার প্রশ্ন, মায়ের প্রতি ভালবাসা বাড়াতে হবে আর সেখান থেকেই দিবস- 'মা দিবস'। আমাদের রাসূল সা. তো আর এমনি সাধে মাকে পিতার চেয়ে তিনগুণ উপরে স্থান দেন নি। এরকমও কখনও হয় নাকি ..... প্রথম তিনটি স্থানই একজনের দখলে। বিচারটা অদ্ভুত বটে!
আর এই অদ্ভুত এবং সুন্দর বিচারকেই শ্রদ্ধা জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৩২