আর অল্প দিন পরই ঈদ। বিশ্বাসীদের জন্য মহা আনন্দের এক ক্ষণ। তাগিদ থাকে, সকলে ভুলে যাবে পুরাতন দুখের কথা, বিভেদের কথা। তাগিদ থাকে, আগামী একটি বছরের জন্য শুরু থেকে শুরু করার। থাকবে না অন্যায়-জুলুম, বিভেদের দেয়াল হবে চূর্ণ; মানুষ হবে মানুষের বন্ধু-ভাই।
ইসলাম যেমন তাগিদ দেয়, তেমনি বাস্তব কর্মপন্থাও রেখেছে তার সৌন্দর্যে। ইসলাম বলে, তুমি মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তুমি অন্যের জন্যে তাই পছন্দ করবে যা নিজের জন্য করো। ঈদুল ফিতরে ইসলাম ফিতরার ব্যবস্থা রেখেছে। সামর্থবান প্রত্যেককে এই ফিতরা দিতে হয়, সমাজের প্রত্যেকে যাতে স্রষ্টার বরাদ্দকৃত ঈদের এই আনন্দে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু পেটে ক্ষুধা রেখে, শরীরে ময়লা কাপড় রেখে তাদের খুশীর তাগিদ দেয়া এক ধরনের রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সমাজের বাস্তব চিত্র বড় করুণ। একদিকে বিত্তবানেরা সামগ্রীর দামের প্রতিযোগীতায় বেশী লিপ্ত থাকে, সে উঁচু শ্রেণীতে উঠতে চায়। নিচু শ্রেণী যদি তার নাগালে এসে পড়ে তবে তার দাম থাকে না! অন্যদিকে অভাবীরা কেবল ধনীদের এই আস্ফালন দেখে নিজেদের অভাবকেই বাড়িয়ে নেয়। বড়ই ফালতু জীবন বোধ আমাদেরকে কাবু করে রেখেছে। আমরা ভুলে গিয়েছি জীবনকে প্রকাশই স্বাধীনতা নয়, জীবনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারায় স্বাধীনতা।
ঈদ আমাদের যান্ত্রিকতাকে থামিয়ে দেয়। আমরা সবাইকে নির্মল আনন্দে ভাসিয়ে দিতে চাই। আমাদের অনেকের হয়ত দুর্দশাগ্রস্তের কষ্টকে দুর করার মত সামর্থ নেই, কিন্তু তার কষ্টকে শোনার মত মহানুভবতা কি আমরা দেখাতে পারি না? প্রত্যেকেই যে পরিমন্ডলে ঈদ উদযাপন করবেন খুঁজলেই হয়ত এমন এক দুইজনকে পাবেন। তাদের কথা শোনার মত একটু সময় কি আমরা পেতে পারি? এমনও তো হতে পারে, তার কথা শোনার পর আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ খরচের তালিকায় তার জন্যও ছোট্ট একটু বরাদ্দ এসে যেতে পারে, আর এভাবে আমি পেতে পারি মহান স্রষ্টাকে খুশী করতে পারার এক অনাবিল আনন্দ।
ধরলাম, আপনার ছোট শিশু অথবা ছোট ভাই বা বোন, ভাতিজা, ভাগ্নে বা এরকম নিকটজনের বন্ধু থাকতে পারে যাকে দেয়ার মত তার বাবা, চাচা, মামা, ভাই নেই। তাহলে প্লিজ, আপনি আপনার ছোট শিশু, ভাই বা বোন, ভাতিজা, ভাগ্নেকে এ কাজে শামিল করুন। তার হাত দিয়ে একজন অভাবীর কষ্টকে দুর করতে সহায়তা করুন। ছোট শিশুটি দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ পাওয়ার এই সুন্দর প্রচেষ্টার সাথে নিজেকে এখনই জড়িয়ে নিক।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের শিশুরা এটা জেনে বড় হয়ে উঠুক- আমাদের জীবন স্বার্থপরতার নয়, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।