হয়তো লেখা হতে পারত, এক যে ‘ছিল’ শিশু। শিশুটির বয়স চার, নাম ফাহিম হাসান অরণ্য। তার মায়ের নাম সুবর্ণা, আর আব্বু এ এইচ এম সলিমুল্লাহ সেলিম। মা সামারফিল্ড স্কুলে শিক্ষকতা করেন; আর আব্বু সংযুক্ত ছোটখাটো একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে প্রতিবেদনটি সেভাবে শুরু করার প্রয়োজনীয়তা ঠিক এ মুহূর্তে দেখা দেয়নি। তবে, দিতে আর কত দূর? উত্তর নির্ভর করছে আমাদের ওপর।
শিশুটির মা ও আব্বাকে আমি ভালোভাবে চিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অতি পুরাতন বসবাসকারীদের একজন হওয়ায় জনাব সলিমুল্লাহ সেলিমের প্রয়াত পিতা ছিলেন আমার প্রতিবেশী। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক। আর শিশুটির মা আমার সাক্ষাৎ ছাত্রী।
সদাচঞ্চল অরণ্য হঠাৎ মাসখানেক আগ থেকে নির্জীব হয়ে পড়তে শুরু করে। মাঝেমধ্যে স্তব্ধ হয়ে পড়ে কথা বলার স্পৃহা। ব্যথায় কুঁকড়ে যায় মুখমণ্ডল। তখন অবশ হয়ে যায় সমস্ত শরীর। আতঙ্কিত মা-বাবা শরণাপন্ন হন চিকিৎসকের। তার চিকিৎসা শুরু হয়, ব্রেইন অ্যান্ড স্পাইন সার্জন, নিউরোসার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. মইনুল হক সরকারের তত্ত্বাবধানে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নির্ধারিত হয় শিশুটির অসুস্থতার প্রকৃত পরিচয়। চিকিৎসক রায় দেন, এ অসুস্থতার নাম, থ্যালামিক গ্লিওমা (right thalamic glioma)। এ রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। চিকিৎসার কোনো সুযোগই নেই বাংলাদেশে। তাকে অতি দ্রুত নিয়ে যেতে হবে ব্যাংককের বামরুগ্রাদের হাসপাতালে বা সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে। অসহায় শিশুটি এখন দিন গুনছে ইবনে সিনা হাসপাতালের ধানমন্ডি শাখার ২০৪ নম্বর কেবিনে কয়েক সপ্তাহ ধরে।
আজকের দিনেও, বিনা চিকিৎসায় নয়, সুচিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে অসহায় শিশু। হয়তো এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের করার কিছু থাকে না। দুঃখ পাই, নীরব দর্শক হয়ে থাকি। কিন্তু আমার মনে হয়, এই শিশুটির ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে আসতে পারি। কিছু করণীয় আছে আমাদের। তার ব্যাংকক কিংবা সিঙ্গাপুরের চিকিৎসার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা, যা কোনোভাবেই তার নিম্নমধ্যবিত্ত বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজনের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে চিকিৎসা বাবদ ধারদেনা করতে হয়েছে প্রচুর, ছয় লাখ টাকার মতো। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব বাড়িয়ে দিতে পারি সাহায্যের হাত।
বিবেকের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, অরণ্যকে কি এইভাবে আমাদের ছেড়ে যেতে দিতে পারি? আসুন, আমরা সবাই মিলে দ্রুত সাড়া দিই শিশুটির আর্ত আহ্বানে। সময় বড়ই মূল্যবান, দ্রুত গড়িয়ে যেতে দিলে, হয়তো নাগালের বাইরে চলে যাবে সব প্রয়াস। তখন আর কে কাকে দুষব আমরা। তাই বলি, সময় থাকতে এগিয়ে আসুন। চোখভার জল নিয়ে আপনাদের দিকে তাকিয়ে অরণ্যর মা-বাবা সুবর্ণা ও সেলিম।
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: সুবর্ণা সেলিম, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর : ১৩৮২১০২০০০২৭৬৯, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, আসাদ গেট শাখা, ঢাকা। যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য: ০১৭১৭১৬৩৩১৬ অথবা ০১১৯০৩৪৬২০৫।
মোহাম্মদ রফিক: কবি। অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্য সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৪:১৬