somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট এবং একটি রুমডেট

২৬ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনাদের অনেকের কাছেই হয়তো শব্দটা অপরিচিত। আমার মত আপনারাও সেকেলে বলেই হয়তো। কিন্তু বিশ্বাস করুন আজকালকের ছেলে-মেয়েদের, বিশেষ করে ইংরেজি মিডিয়াম আর ভার্সনের ছেলে-মেয়েদের কাছে খুব পরিচিত আর “রেগুলারলি ইউজড ওয়ার্ড” এটা।

আমাদের সময়ে আমরা পরিচিত হতাম, বন্ধুত্ব করতাম হাতে গোনা কিছু মানুষের সাথে। তাদের মাঝেই কাউকে মনে ধরতো, মনের কথা মুখ ফুটে বলতেই অনেকটা সময় চলে যেত। হয়তো সেও বুঝত, সাড়া দিত আবডালে। তারপর একদিন সাহস করে বলে ফেলা আর সম্পর্কের নতুন নাম প্রেম!! কিন্তু এই যে বন্ধুত্ব আর প্রেমের মাঝের দিনগুলো, সম্পর্কটা?? সেটার আমরা কোন নাম দিতে পারতাম না। বলতাম বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিন্তু প্রেমের চেয়ে কম!! মাঝামাঝি কিছু একটা। কিন্তু সেই সম্পর্কে কোন নোংরামো ছিলনা। সেই সব দিনের বেশির ভাগ প্রেমই ছিল খাঁটি।

কিন্তু আজকাল দেখছি বন্ধুত্ব আর প্রেমের আশপাশে আরো ২ টা সম্পর্ক চলে এসেছে!! এখনকার ফ্রেন্ডশিপের স্টেজগুলো এমনঃ
১। ফ্লার্টিং (খাশ বাংলায় টাংকি বাজি)
২। ফ্রেন্ডশিপ
৩। ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট আর সব শেষে
৪। এফেয়ার (প্রেম)
একটু খেয়াল করুন, এই জেনারেশানের ছেলেপিলের সম্পর্ক শুরুই হয় নেগেটিভ একটা শব্দ দিয়ে, ফ্লার্ট !! আমাদের সময় টাংকিবাজি করতো পাড়ার বখাটে ছেলেরা। আমরা কাউকে ভাল লাগলে চেষ্টা করতাম যতটা ভদ্রতা দিয়ে পারা যায়, মন জয় করতে। কত তফাৎ আমাদের সাথে ওদের চিন্তা-ভাবনায়!!

যাদের রিলেশানের ১ম ধাপেই ভুল তারা এইসব সম্পর্কের বেলায় বারবার ভুল করাটাই স্বাভাবিক, তাই নয় কি? ওরা ফ্রেন্ডশিপ টাকেও ঠিকমত হ্যান্ডেল করতে পারেনা। ওদের ভাষ্যমতে, ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট এর এডভান্টেজ হল, সব ডিমান্ড ফুলফিল হয় কোনরকম কমিটমেন্ট ছাড়াই। একটু ব্যাখ্যা করি, তাহলেই ব্যপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

ধরুন সায়েম আর সামান্তা ২ জন খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড। সায়েমের প্রেমিকা অর্নি আর সামান্তার প্রেমিক রাফি। সায়েম-অর্নি বা সামান্তা-রাফির সম্পর্কের কোন ঝামেলা হলে বন্ধু হিসেবে অপরের পাশে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক রীতি তাইনা? কিন্তু এখনকার উইথ বেনিফিটে কি কি ইনক্লুডেড বলতে পারেন? টিনেজাররা মোটামুটি ছেলে-মেয়ের মধ্যকার সব ধরনের সম্পর্কের ব্যপারেই ওয়াকিবহাল। ইন্টারনেটের যুগে এসে ওরা আর আমাদের সময়ের মত ১৮ বছরের বালক বালিকা কিংবা নাদান বাচ্চা নেই। অনেক সময়ই দেখা যায় তাদের ফিজিক্যাল ডিমান্ডগুলো আমাদের সময়ের মত করে ওরা চেপে রাখেনা। বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের কাছে চাহিদাটা জানায়। যখনি রিফিউজড হয়, তখনি জন্ম নেয় ১ ১ টি ফ্রেন্ড উইথ বেনিফিট। কি দরকার বলেন ঝগড়াঝাঁটি, কান্নাকাটির? আজকের ওরা অনেক স্মার্ট। ওরা অনেক খোলামেলা এসব বিষয়ে। অর্নি রিফিউজ করেছে তো কি হল? ডিমান্ড তো বিসর্জন দেয়নি সায়েম তাইনা? সে দুঃখের কথা জানাতে হয়তো কল দিল সামান্তাকে। যদি সে তার ফ্রেন্ড উইথ বেনিফিট হয়, হয়তো সান্ত্বনা দেবে। আদর করে একটা চুমু দিবে। কি যায় আসে? মোবাইলেই তো তাইনা? হয়তো রাফি কোন কারনে সামান্তার সাথে রাগ দেখালো, সামান্তা চলে গেল সায়েমের কাছে কষ্টের কথা বলতে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করা, কপালে ছোট্ট একটা আদুরে চুমু একসময় ঝড়ে রূপ নিতে পারে। এই রকম আনলিমিটেড শেয়ারিং একদিন পরিনত হয় রুমডেটে।

আমাদের সময় হাত ধরাও কত সাহসের ব্যপার ছিল। কিন্তু আজকাল অবাধ মেলামেশায় এই একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। গিলটি ফিলিং কমে যাচ্ছে আমাদের। সায়েম-সামান্তারা অবাধে সময়ের, শরীরের আর মনের দাবি মেটাচ্ছে। এতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই, নেই হারানোর কষ্ট। যা পাও তাই লাভ, তাই বেনিফিট। অর্নি বা রাফি হয়তো কিছুই জানেনা। জানেনা তারা ভালবেসে প্রতারিত হচ্ছে। কিংবা হয়তো আঁচ করতে পেরে রিলেশানটাই ভেঙ্গে দেয়। তারা তখন নতুন সম্পর্ক গড়ে নতুন কারো সাথে। কষ্টের সেই তীব্রতাও থাকেনা তাদের মাঝে। কিংবা হয়তো সায়েম-সামান্তা্রা জুটি হয়ে ওঠে। মোট কথা কোনটাতেই লাভ ছাড়া লস নাই।

এই ধরনের মানসিকতা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে যাচ্ছে। চোখ খুলে একবার তাকিয়ে দেখুন চারপাশে। আপনিও দেখতে পাবেন। এত ফ্রাসট্রেশান, এত ব্রেকাপের পেছনে কারন কি? কারন আমাদের মানসিক বৈকল্য, আমাদের যাপিত জীবন। আমাদের কাছে সম্পর্কগুলো ঠুনকো হয়ে গেছে। ভালোবাসার মিষ্টি ঘ্রান কামের সুতীব্র গন্ধের কাছের কাছে হার মানছে। মন ভাঙ্গা এখন আর দেবালয় ভাঙ্গার পাপ নয়। বরং পুরোনো বাতিল মাল ছুড়ে ফেলার মতই ব্যপার।

অনেকের মত আমিও নাম শুনেই নাটকটার প্রতি আগ্রহী হয়েছিলাম। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের যে আজন্ম লোভ। অনেক আলোচনা, সমালোচনা, পর্যালোচনা শেষে, অমত, সহমত, কিংবা দ্বিমত পোষনকারীর কাছ থেকে শুনে আমি থার্ড বেলের “রুমডেট” নাটকটি দেখলাম। পরিচালক ঠিকই বলেছেন, এমন রগরগে ট্রেইলার না দিলে নাটকটা হয়তো অনেকেরই চোখ এরিয়ে যেত, এত কথা হতোনা এটা নিয়ে। যে যাই বলুক আমার নাটকটি ভাল লেগেছে। ঢাকঢাক গুড়গুড় করার তেমন কিছু নেই এখানে। আর যতটা দেখানো হয়েছে সেটা সবাই জানে। কেউ শুনে, কেউ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। আমি লেখাটি লিখতে বসেছিলাম এই কারনে যে নাটকের মেসেজটি আপনি যেভাবেই নিন না কেন, বাসবতা কিন্তু ভিন্ন কিছু নয়। আজ এত ধর্ষন, আত্মহত্যা, প্রতারনা, চারিত্রিক ও নৈতিক অবনতি সব কিন্তু এক সুতোয় বাঁধা।

তাই আসুন আমরা নিজেকে, সমাজকে কলুষতা মুক্ত করি। বন্ধু হই, ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×