আমি স্বাধীনতা দেখিনি। অনুভব করতে পারিনা। দেশ বিভাগ, স্বাধীনতা যুদ্ধ আমি দেখিনি। দেখিনি স্বাধীনতার জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনা মানুষের মুখ। তাই আমি জানিনা ৯ মাস যুদ্ধের পর অর্জিত স্বাধীনতার স্বাদ কেমন ছিল। আমি শুধুই পূর্ব-পুরুষদের ছিনিয়ে আনা স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি। ৭ কোটি বাঙ্গালির কষ্টার্জিত ১৪৭৫৭০বর্গ কিমি জায়গার মালিকানা দাবি করতে পারি। তাই হয়তো স্বাধীনতার মুল্য দিতে পারিনা, স্বাধীনতা শব্দটা শুনলেও কোনদিন রক্তে বান ডাকেনি। আমার এই স্বাধীনতা এতোদিন পূর্ণতাই যে পায়নি।
সব মিলে ১৬২ টি ছিটমহল। আমাদের দেশের ৫২ টি আর ভারতের ১১১টি। তাই বলে কি তাদের গল্প ভিন্ন? তাদের কান্না, বিলাপ, স্বাধীনতার, একটি মানচিত্রে ঠাঁই পাবার আকাঙ্খা কি আলাদা? না। ছিটমহল যে দেশেরই হোক, তাদের অভিন্ন যাপিত জীবন।
৭৫ বছর বয়সি একজন বৃদ্ধ যখন দাঁতহীন মাড়ি বের করে হাসিমুখে বলে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে পেলাম পাকিস্তান, সেখান থেকে হয়েছি ভারতের। আর আজ ৪৪ বছর পরে ৩য় স্বাধীনতার পর পেলাম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। ৬৮ বছর পর পেলাম সত্যিকারের স্বাধীনতা!!! একমাত্র তখনই আমি স্বাধীনতার মানে বুঁঝতে পারি। সব রকম অন্যায়, তাচ্ছিল্য সয়ে আজ আনন্দ মিছিল করতে থাকা মুখগুলো দেখলে আজ আমার রক্তে বান ডাকে। আমি আজ বুঝি ১ জীবন অপেক্ষা শেষে স্বাধীনতা পাওয়ার স্বাদ কেমন। ৫২ হাজার উজ্জ্বল মুখ আমাকে শিখতে বাধ্য করে কিভাবে স্বাধীনতা বুকে ধারন করতে হয়। এই ছোট্ট দেশটার আয়তন কতটুকু বেড়েছে? নতুন মানচিত্রে ১ মুঠো ভূখন্ড যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার পাল্লায় ৫২ হাজার স্বাধীনতা!!!
অভিনন্দন ছিটমহল বাসীদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা পাওয়ায়, একটি মানচিত্র, একটি দেশের অংশ হতে পারায় এবং বাংলাদেশ-ভারত সরকারকে, ৭৪ সালের সেই চুক্তি অবশেষে সাফল্যের মুখ দর্শন করাতে সক্ষম হওয়ায়। অভিনন্দন নিজেকে, এই জীবনে স্বাধীনতা দেখে উপলব্ধি করতে পারায়।