কিভাবে বিশ্বকে আরেকটু বাসযোগ্য করা যায়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে আরেকটু বাসযোগ্য রাখা যায়। সেই উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর এ দিনে (২২ এপ্রিল) পৃথিবী/ ধরিত্রী দিবস পালন করা হয়। এটি একটি পরিবেশ-সচেতনতামূলক দিবস যা বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে সুস্থ পরিবেশ টিকিয়ে রাখার গুরুত্ব ও উপায় তুলে ধরে।
১৯৭০ সালে আমেরিকার যুব সমাজ হিপ্পি আন্দোলন আর বিটলস শিল্পী জিমি হেন্ড্রিক্সের মৃত্যুতে পাগলপ্রায় । অন্যদিকে চলছে ভিয়েতনাম যুদ্ধ । আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিবেশ । ছাত্র-যুবসমাজ উত্তাল হল মিছিলে।
পরিবেশ, উন্নয়ন, সুস্থ জীবন - এগুলো পত্রিকার কলামেই শোভা পেতো। সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা এসব থেকে তখন অনেক দূরে।
সেই সময় এসব ডামাডোলের ভীড়ে দুটি ঘটনা ঘটে গেল। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হল রেচেল কার্সন রচিত তৎকালীন নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার 'সাইলেন্ট স্প্রিং' যা পরবর্তী বছরগুলোতে ২৪ টি দেশব্যাপী প্রায় ৫০,০০০০ কপি বিক্রি হয়। বইটির মূল বিষয়ই ছিল পরিবেশ দূষণ এবং এর ভয়াবহ পরিণতি।
দ্বিতীয়টি ঘটল তার কয়েক বছর পর। সেটি ছিল ১৯৬৯ সালের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায় তেল ছড়িয়ে পড়া। এই মর্মান্তিক ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল মারাত্মক। শুধু উপকূলবর্তী ওই এলাকায় পাখীই মারা যায় প্রায় ৩৬৮৬ টি। বাকী অগুণতি প্রাণী আর উদ্ভিদের কথা তো বলাই বাহুল্য।
এ দু'টি ঘটনার প্রেক্ষিতে আমেরিকার উইস্কন্সিনের গভর্ণর গেলর্ড নেলসনের মাথায় আর্থ ডে'র ধারণা আসে। যুব সমাজ ও সাধারণ মানুষের সামনে 'টেকসই পরিবেশ রক্ষা'র মতো একটি অর্থপূর্ণ, দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য দেয়াই ছিল এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।
তিনি ধারণা কাজে লাগাতে রক্ষণশীল রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান পিটার ম্যাকক্লাক্সিকে উদ্বুদ্ধ করেন। তাকে সহকারী করে মিডিয়ার সামনে বিস্তারিতভাবে বিষয়টি নিয়ে আসেন। পর্যায়ক্রমিকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালান পুরো দেশে।
ফলে ২২ এপ্রিল, ১৯৭০ সালে ২০ মিলিয়ন আমেরিকান রাস্তায়, পার্কে, উপকূলে, এমনকি শপিং মলে স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ করে। হাজারো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী সুস্থ পরিবেশের দাবীতে বাকী সবার সাথে একাত্ম হয়। জনতার এই স্বতঃস্ফূর্ততা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের একসারিতে নিয়ে আসে। শ্রেণীবিভেদ ভুলে একসাথে হয় ধনকুবের, শ্রমিক, মজুর এবং বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবী সাধারণ মানুষ। সবার লক্ষ্য ছিল অভিন্ন- নিজেদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে সুস্থ পরিবেশ চাই।
আর্থ ডে নেটওয়ার্ক বিশ্বের ১৯২ দেশের ২২০০০ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ক নানারকম সচেতনতামূলক কাজ করে থাকে। এ বছরও বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন দেশে এ দিনটি পালিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ http://www.earthday.org
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫