somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাচেলর স্বামী

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'__এক কাজ করো , তুমি লেখালিখি শুরু করে দাও । মুখ তো ভালই চলে । লেখাটাও খারাপ চলবেনা । মুখের কাজ হাতে কলমে করবে । মন্দ কী?'

'মুখের সব কাজ কি হাত দিয়ে করা যায়?'

‘সব সময় সব কথা ওদিকে টেনে নিয়ে যাও কেন বশির ?’

মালার মুখে এ নামে সম্বোধন আমার জন্য চপেটাঘাতস্বরূপ । বশির ছাড়া আরও একটি শব্দ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটে আমার নামের ঘরে । তামাম দুনিয়া আমায় সে নামে চিনলেও এক মালা-ই আমায় ডাকে বশির । তবে সবসময় না । যখন খুব অভিমানে ভেসে বেড়ায় । তবুও এক গাল হেসে প্রমাণ করি – আরে মজাইতো করছি । বাস্তবেতো যাইনি । অবশ্য গেলেও বা কী এমন মহা ভারত অশুদ্ধ হবে ? মেয়েরা পুরোপুরি বিশ্বাস স্থাপন না করে কোনো হাতে হাত রাখেনা ।

মালা চুপচাপ বসে আছে । দৃষ্টি সামনের সরু রাস্তায় ভেসে বেড়াচ্ছে । মনযোগ সহকারে দেখছে আমাদের বহনকারী রিকশার পাশ দিয়ে কিভাবে একটি মটর বাইক সাঁই করে চলে গেল । যার পেছনে এক নারী এক হাতে বাচ্চাকে, আরেক হাতে তার স্বামীকে আঁকড়ে ধরে আছে । স্বামীর মাথায় হেলমেট নেই । তার হেলমেট পেছনে বসা বাচ্চার মায়ের মাথায় । পরম মমতায় পেছন থেকে ডান হাতটা কোমরের ডান পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে স্বামীর ভুড়ি আগলে রেখেছে । বাইক দম্পতি সামনের বামের গলিতে অদৃশ্য হয়ে গেল ।

হঠাৎ ঝাঁকুনি । রাস্তার স্পিড ব্রেকারগুলো ওই ধবধবে শাদা বা কুচকুচে কালো গাড়িগুলোর জন্যই । এই রিকশার জন্য না । ঝাঁকুনিতে মালার বুক থেকে ওড়নাটা খসে গেল । যেন হঠাৎ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে শাদার মাঝে গোলাপী ফুলের এ বস্ত্রটুকরো । অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সহিত ওড়না ধরে মাঝপথ থেকে আবার আগের গন্তব্যে ফিরিয়ে দিতে দিতে বলছে – ঢাকা শহরের রিকশা গুলো অনেক বড় , তিনজন নিয়ে টানতে না চাইলে এত বড় রিকশা নিয়ে কেন ঘোরেন মামা ?

চালক তার কথায় উত্তর না দিয়ে মাথা ঝাঁকাচ্ছে একটু একটু করে । তার গালের ডান পাশ দিয়ে গোঁফের কিনারা দেখা যাচ্ছে । একটু পর আবার অদৃশ্য হয়ে গেছে । সামান্যতম কলহের আভাস বুঝতে পেরে চালক হাসি থামিয়ে আবার নীরব শ্রোতা হয়ে গেল । মাথার পেছনে রিজার্ভ চোখ থাকলে হয়তো নীরব দর্শকও হতে পারতো । কিন্তু মানবজাতির জন্য বিধাতা তা সমীচীন মনে করেননি ।


বড় রিকশাটাকে একটু ছোট করার চেষ্টা করলাম । এতেও মালার বিদ্রোহী সুর –
‘ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে নাকি ?’

মালার অভিমানের তীর আমায় স্পর্শ করেনা । নিশ্চুপ থাকি তার প্রতি দফা দাবি আদায়ের শ্লোগানে । শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয় তার প্রতিটি নেত্রপল্লব, কিঞ্চিৎ রক্তবর্ণ ধারণ করে চোখের শ্বেত অঞ্চল, কেঁপে ওঠে গলার স্বর। আন্দোলনে হামলা করলে সে আন্দোলনের সম্পূর্ণ বা আংশিক দাবি মেনে নিতে হয় । আমার পক্ষে দাবী আদায়ের ক্ষমতা থাকলেও সুযোগ নেই ।

মালার খোলা চুল উড়ে বেড়াচ্ছে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত নতুন কোনো দেশের পতাকার মতো । ফাগুনের শেষ দিকের খানিক বাতাস অস্বাভাবিক কিছু নয় । রিকিশার চাকার দ্রূত গতির ঘূর্ণন সে পতাকাকে আরও সগৌরবে ওড়ার স্বাধীনতা দিয়েছে । সে স্বাধীনতায় মালার চুল আমার ঠোঁটে গালে আলতো ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে একটু একটু । সুড়সুড়ি লাগলেও সরানো যাচ্ছেনা আন্দোলন তীব্রতর হবে বলে ।

চুলে কী শ্যাম্পু মেখেছো মালা ? অনেক সুন্দর ঘ্রাণ ।

চোখ দুটোকে মার্বেলের মতো ঘুরিয়ে এক টানে চুল গুলো পিঠে চালান করে দিয়ে রিকশাটাকে আবার বড় করে দিয়ে কাকে যেন বলছে – ‘হিজাব ছাড়া কখনও বের হইনা । তোমার কথায় আজ খোলা চুলে বের হয়েছি । হলের বান্ধবীরা কেমন জানি আড়চোখে তাকাচ্ছিলো । আর কত দিন এভাবে লুকিয়ে বেড়াবো।‘

মাথায় কাপড় দিতে তো না করিনি ।

‘ঘোমটাতো ছিলো । রিকশায় বসে তুমিইতো বলেছিলে খোলা চুল দেখবে ।‘

দেখা হয়ে গেছে । তোমার হলের কাছাকাছি এসে গেছে রিকশা । আমি না হয় আগেই নেমে যাই ।

‘চলো আজ আমি তোমায় তোমার হলে নামিয়ে দিয়ে আসি । হলের একটু আগেই নেমে যেও । ভিসি চত্বরে । রিকশা ঘুরিয়ে আমি না হয় আবার ফজিলাতুন্নেসা হল আসবো ।‘

নারীজাগরণের এমন দৃষ্টান্তে বিমোহিত হয়ে চালককে বললাম পুনরায় দোয়েল চত্বরের দিক থেকে আরেকটু ঘুরিয়ে টি এস সির দিকে যেতে ।

‘আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি , তোমার লেখার হাত ভাল । তুমি লেখালিখি চালিয়ে যেও । বার্ষিক ম্যাগাজিনে তোমার লেখা পড়ে রুমমেট রুমালী আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে বলছে – আমাদের ডিপার্টমেন্টে একটা ছেলে আছে । নাম বশির রায়হান । নিরন্তরের এবারের সংখ্যায় তার চমৎকার একটি লেখা এসেছে । ব্যাচেলর স্বামী শিরোনামে । দ্যাখ, দ্যাখ...’

'কই দেখি? ও এটি ? এ আর এমন কী !' - এসব বলে আমি যখন তাদের উৎকণ্ঠার পারদকে শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনি তুমি বুঝবেনা রায়হান আমি কত শত-সহস্র আয়তনের অনিবার্য ঈর্ষার অনলে পুড়ে মরি। জর্জরিত হই আপন অধিকার হতে বঞ্চণার দারুণ দ্রোহে । হিমালয়ের উচ্চতাসম হিংসা বাসা বাঁধে এ বুকে । এসব কী তোমার বোঝার সময় আছে ? তুমি আছো তোমার প্রতিষ্ঠিত হওয়া নিয়ে । এতই যখন প্রতিষ্ঠিত হতে চাইবে তাহলে কেন বিগত একটি বছর ধরে আমায় এমন অদৃশ্য অনলে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করছো ? মালা মুখ দিয়ে কথাগুলো বের করতে চাইলেও তার ঠোঁট দু’টি অবরোধ ডেকেছে আগামী অর্ধবেলার জন্য । অর্ধবেলা মালার ঠোঁটের কাঁপন দেখেই বুঝে নেওয়া যাবে সে কখন কী বলতে চাইছে, কিন্তু বলছেনা ।

টি এস সির কোলাহল আজ অনেক প্রাণবন্ত । মেলা বসেছে পথে প্রান্তরে । সে মেলায় কেউ বাদাম বিক্রেতা , কেউবা ক্রেতা । টি এস সি থেকে বাকী পথ হেঁটেই যাব । পাবলিক লাইব্রেরির সামনে জাহিদ দাঁড়িয়ে আছে ঘণ্টাখানেক যাবৎ । তুমি বরং রিকশা ঘুরিয়ে নাও । সব কিছু আড়াল করে মাথাটা মালার কানের কাছে নিয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললাম । আজ দিনটি আমাদের জন্য একটু আলাদা হবার কথা । দু'জনেই তা জানি কিন্তু কেউই কাউকে মন করিয়ে দিচ্ছিনা । কারণ একটাই, আমার বেকারত্ব ।

জাহিদ আমায় নতুন চাকরির সুখবর দিবে । তা বুঝতে পেরেছি । মানুষের গলার স্বরে আহ্বানের কারণ বোঝা অত কোষ্ঠকঠিন কিছু নয় । গত মাসে একই তারিখে দু'টি সাক্ষাৎকার থাকায় দু’জন দু’জায়গায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম । দু’জনের নামেই চিঠি এসেছে । সকালে পিয়ন জালাল ভাই থেকে জাহিদ আমার চিঠিও নিয়ে নিয়েছে । সে আনন্দে মনটা কিঞ্চিৎ চনমনে থাকায় আজ মালার বিষাদে ভাগ বসাতে ইচ্ছে করছেনা । মাস দু’য়েকের মাঝেই একটা বিহিত হয়ে যাবে । রিকশা থেকে নেমেই হাটা শুরু করতে যাবো এমন সময় মালার ঠোঁট দুটো ধর্মঘট ভেঙ্গে নড়ে উঠলো । বেরিয়ে এলো এক কিন্নর কণ্ঠের আবেগী আবদার –

শোনো ! আজ আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিলো । এটাও যে তোমার মনে নেই প্রতিষ্ঠিত হবার তাড়নায় । এ নিয়ে কিছু লিখো । অনেক বাহবা পাবে ।

২৩/০৩/২০১৭

ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×