ভাই আমায় জিজ্ঞেস করলেন - 'কী খাবা?'
- রুটি, সাথে অন্য যে কোনো কিছু।
উত্তর শুনে ভাই জিজ্ঞেস করলেন হোটেল বয়কে - মামা, গ্রিল আছে?
এত দিন শুনে এসেছি গ্রিল থাকে জানালায়। গ্রিল থাকে বারান্দায়। জানালার কাঁচের ওপারেই গ্রিল দেখা যায়। কিন্তু রুটির সাথে গ্রিলের কী সম্পর্ক তা আমার একাদশ শ্রেনি পড়ুয়া মস্তিষ্ক আয়ত্তে আনতে অক্ষম ।
হোটেল বয়ের সবিনয় উত্তর - 'না মামা। গ্রিল শেষ। কাবাব আছে।'
এই কাবাব আমি চিনি। শিক ভেতরে ঢুকিয়ে মাংশ পোড়ানো হয় বলে এর নাম শিক কাবাব। বড় ভাই শিক কাবাব আর রুটি দিতে বলায় হোটেল বয় মামা মামা করতে করতে কাঁধে রাখা তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে চলে গেলো।
সদা গম্ভীর আর স্বীয় ডুগডুগি স্বহস্তে বাজাতে সিদ্ধহস্ত ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম - ভাই গ্রিল মানে কী?
'যেটা চেনোনা, নতুন করে চেনার দরকার নাই। বাদ দাও।'
যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে কেমন ব্যথা পেয়েছিলো জানিনা। জানিনা কেমন লেগেছিলো স্বীয় শর্টগানের আঘাত হিটলারের কাছে। তার চেয়েও বেশি বিদ্ধ হয়েছে এ উত্তর আমার মনে। ঢাকায় নতুন এসেছি। না চিনি উত্তর না চিনি দক্ষিণ। দু'বছর আগে পৃথিবীতে এসেছেন বলেই হয়তো দু'বছর আগে ঢাকা এসেছেন। তাই বলে এভাবে বলতে হয়না ভাই। শেষ কথাগুলো মনে মনেই বেজে গেলো।
ছোট বেলায় যখন নিজ বড় ভাইয়ের সাথে ফেনী শহর আসতাম বড় বড় দালানের দেয়ালে অনেকগুলো টেপ রেকর্ডার ঝুলতে দেখে ভাইকে জিজ্ঞেস করতাম এগুলো কী?
ভাই হেসে উত্তর দিতেন - 'ওগুলো এসি। এসি মানে এয়ার কন্ডিশন। না শীত না গরম।'
আজ এক ছোট ভাইকে নিয়ে খেতে গেলাম। নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকরা সাবজেক্টে চান্স পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ নগরীতেই। সে যেখান থেকে উঠে এসেছে সেখান থেকে এতদূর আসতে বুকের পাটা লাগে। তার সেটা আছে। অদম্য প্রচেষ্টা তাকে ভবিষ্যৎ কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে গ্রহণ করেছে। খাবার শেষে জিজ্ঞেস করলাম - লাচ্ছি খাবা?
চোখ দু'টোকে কোটরের মধ্যে ঘুরিয়ে কিভাবে জানি মাথাটা ডান থেকে বামে নেড়ে সম্মতি দিলো!
লাচ্ছির স্ট্রতে একটা টান দিয়ে আবার চোখটা বড় করে জিজ্ঞেস করলো - 'ভাই এটা কী দিয়ে বানায়? আগে কখনও খাইনি।'
ঠিক তখনই চলে গেলাম দু'হাজার দশ সনে ঢাকার জিগাতলার গাউছিয়া হোটেলে। কিন্তু সেই ভাইয়ের মতো ভাব নিতে পারিনি। নিজেকে শুধু আগের জায়গায় কল্পনা করেছিলাম। আর অকপটেই তাকে বলতে লাগলাম লাচ্ছি বানানোর উপায় ও উপকরণ। ঠোঁটে স্ট্র নিয়ে মুখটা নিচের দিকে রেখে কপাল ভাঁজ করে চোখ দু'টো আমার চোখ বরাবর রেখে সে লাচ্ছি পান করছে আর শুনছে লাচ্ছিতে কী কী দেয়া হয়। খাবার শেষে যখন লাচ্ছি তলানিতে বসে যায় তখন কুরুত করে একটা শব্দ করে জানান দেয় যে, সে ফুরিয়ে গেছে। সাথে সাথে সে বলে ওঠে - 'ভারি ফাইনতো ।'
- হ্যাঁ, লাচ্ছি খেতে দারুণ মজা ।
'আরে না ভাই, আপনি মানুষটা ভারি ফাইন !'
ছবিঃ ইন্টারনেট