উপাচার্যকে অপসারণ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মু. আবদুল জলিল মিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্য এতটাই দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করেছেন যে তাঁকে স্বপদে বহাল রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে না।
সরকারের নির্দেশে গঠিত ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। একজনের (উপাচার্য) খেয়াল-খুশিমতো পরিচালিত হচ্ছে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত (চার্জশিটভুক্ত) আসামিকেও চাকরি দিয়েছেন ওই উপাচার্য। আইন ভঙ্গ করে নিজেই নিয়োগ কমিটির সভাপতি হয়ে ১১ জন নিকটাত্মীয়কে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
কমিটির সদস্যরা বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতে এ ধরনের অনিয়ম হয়েছে কি না, তা তাঁদের জানা নেই।
ইউজিসি সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দেরি করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সুযোগে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও উপাচার্য এখনো নিয়োগ-প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, উপাচার্যের অনিয়মের প্রতিবাদে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করছে। ২৫ মার্চ তারা নতুন কর্মসূচি ঠিক করবে।
জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কিছু অভিযোগ এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কয়েক দিন আগে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক সচিবের সঙ্গে দেখা করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।
জানতে চাইলে উপাচার্য প্রথম আলোকে বলেন ‘ওনারা (তদন্ত কমিটি) কী অভিযোগ করেছেন বা কী সুপারিশ করেছেন, সে বিষয়ে আমি জানি না। আপনার কাছেই শুনলাম। তাই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের নির্দেশে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ইউজিসি। কমিটির সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য মোহাম্মদ মোহাব্বত খান, আবুল হাশেম ও উপসচিব ফেরদৌস জামান। গত ২৯ জানুয়ারি তাঁদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত কমিটির কাছে উপাচার্য স্বীকার করেছেন, ১১ জন নিকটাত্মীয়কে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে এই তালিকার বাইরেও উপাচার্য তাঁর কয়েকজন আত্মীয়কে বিভিন্ন পদে চাকরি দিয়েছেন। এসব নিয়োগের বাছাই বোর্ডে উপাচার্য নিজেই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আইন অনুযায়ী নিকটাত্মীয় প্রার্থী থাকলে সেই বোর্ডের সভাপতি বা সদস্যের দায়িত্ব পালন করা থেকে তাঁর বিরত থাকার কথা।
নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে আছেন গবেষণা কর্মকর্তা পদে মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলিল, হিসাবরক্ষক (পদে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা) পদে আপন ভাই মো. মাহবুবার রহমান, আপন ভায়রা সহকারী অধ্যাপক (পরে সহযোগী) মো. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, প্রভাষক পদে শ্যালিকার মেয়ে আরা তানজিয়া, কম্পিউটার অপারেটর (পরে শাখা কর্মকর্তা) হিসেবে ভাইয়ের মেয়ে সীমা আক্তার, বোনের মেয়ে মনিরা খাতুন, শ্যালিকার মেয়ে তাহমিনা আফরোজ, বন্ধুর মেয়ে সুভেনির, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে (পরে সহকারী পরিচালক) ভায়রা রেজাউল করিম শাহ, অফিস সহকারী পদে আপন শ্যালক ওবায়দুর রহমান ও এমএলএসএস পদে ভায়রার দেবর আবদুল মান্নান।
উপাচার্যের ছোট ভাই মাহবুবার রহমান তৃতীয় শ্রেণীর হিসাবরক্ষক পদে যোগদান করলেও কিছুদিনের মধ্যে তাঁকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। নথি পরীক্ষা করে কমিটি দেখতে পায়, রংপুরে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ ক্যাম্পাস থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে মাস্টার্সের সনদ তিনি জমা দিয়েছেন। অথচ এই পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বাণিজ্যে স্নাতক সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ টি জি এম গোলাম ফিরোজ নামে একজনকে ২৬ দিনের ব্যবধানে দুটি পদে অস্থায়ী (অ্যাডহক) নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রথমে নবম গ্রেডের প্রকল্প পরিচালকের একান্ত সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার ২৬ দিন পর পঞ্চম গ্রেডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দিয়ে পরে অভ্যন্তরীণ প্রার্থী হিসেবে নিয়োগের শর্ত শিথিল করে নিয়মিতকরণ করা হয়।
মোরশেদ উল আলম নামে একজনকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ ছাড়াই সহকারী রেজিস্ট্রারের স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাহবুবুল আলম নামে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা স্থায়ী পদে নিয়োগ পান। কিন্তু তিনি আবেদনের শেষ তারিখের মধ্যে ব্যাংক ড্রাফটসহ আবেদনই করেননি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাঁরা নিয়োগের শর্ত পূরণ করতে পারেননি, তাঁদের প্রথমে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে পরে অভ্যন্তরীণ প্রার্থী হিসেবে শর্ত শিথিল করে নিয়মিত করা হয়। বিতর্কিত ও অবৈধ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের রংপুর ক্যাম্পাস থেকে সনদ নিয়ে কয়েকজনের চাকরি হয়েছে।
ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ফেরারি আসামি মো. আবদুল মজিদকে প্রথমে ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিতে এমএলএসএস পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে তাঁকে স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। চিকিৎসাকেন্দ্রে অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কার্যক্রম না থাকলেও ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির কাছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত জনবলের যে তালিকা দেয়, তাতে দেখা যায় যে ইউজিসির অনুমোদনের বাইরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে ১৪৬ জনকে নিয়োগ (অ্যাডহক ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক) দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, তাঁকে স্বপদে বহাল রেখে এই সমস্যার সমাধান হবে না। উল্লেখ্য, উপাচার্যের মেয়াদ আগামী ৭ মে শেষ হবে। এ ছাড়া ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া সব ধরনের নিয়োগ-প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য দুই ভাগে বিভক্ত শিক্ষকদের একত্রিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে ওই কমিটি।
Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তোমাকে লিখলাম প্রিয়
আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন