somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনশটি লাশ, তিনশটি লাশ...

২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিলো, আমি কোন কথা বলিনি, কারণ আমি কমিউনিস্টনই। তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল, আমি নীরব ছিলাম, কারণ আমি শ্রমিক নই। তারপর ওরা যখন ফিরে এলো ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে ভরে মারতে, আমি তখনও চুপ করে ছিলাম, কারণ আমি ইহুদি নই। আবারও আসল ওরা ক্যাথলিকদের ধরে নিয়ে যেতে, আমি টু শব্দটিও উচ্চারণ করিনি, কারণ আমি ক্যাথলিক নই। শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে ধরে নিয়ে যেতে, আমার পক্ষে কেউ কোন কথা বলল না, কারণ, কথা বলার মত তখন আর কেউ বেঁচে ছিল না।”

প্রখ্যাত জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ ও লুথেরান যাজক ফ্রিড্রিশ গুস্তাব এমিল মার্টিন নেমলারের বিখ্যাত এই উক্তির মতো প্রতিদিনই আমাদের কাউকে না কাউকে ‘ওরা’ ধরে নিয়ে যায়। আর হদিস মেলেনা। কারো হদিস মিললেও লাশ ভাসে শীতলক্ষ্যায়। রাস্তার ধারে। ব্রিজের কাছাকাছি। আমরা দেখি কিন্তু কথা বলি না। কারণ যাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তারা আমাদের কেউ না। দেশে “ওদের’ এই ধরে নিয়ে যাওয়া অনেক আগ থেকেই।

২০১০ সালের ২৫ জুন রাত ৯ টায় রাজধানীর ইন্দিরা রোড এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে ধরে নিয়ে যায়। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে হোটেল রুপসী বাংলা থেকে বের হওয়ার পর আর বাড়ি ফেরেননি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। এভাবে প্রতিদিনই বেড়ে চলছে বাড়ি না ফেরা মানুষের সংখ্যা। তালাশ মিলছেনা তদন্তেও।
সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে নারায়নগঞ্জ থেকে অপহৃত হন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার চার সহযোগী। প্রায় একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহৃত হন আইনজীবী চন্দন সরকার। ওই সাতজনও আর বাড়ি ফেরেননি। তাদেরকে ফিরতে দেওয়া হয়নি। তিন দিন পর তালাশ মিলেছে শীতলক্ষ্যায়।

নারায়ণগঞ্জে নিহত ওই প্যানেল মেয়রের হত্যার পেছনে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে শুরু থেকেই একটি মহল অভিযোগ করে আসছে। তবে নিহতের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ৪ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে র‌্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। এর জন্য আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে র‌্যাব ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের উপস্থিতিতেই তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব আমার জামাতা নজরুলসহ সাতজনকে খুন করেছে। ২৭ মে দুপুরে যখন নজরুলকে দুটি গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আমাদের জানিয়েছেন, দুটি মাইক্রোবাসে করে ওদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ যেখানে ওই দিন সকাল থেকেই র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি অবস্থান করছিল। শহীদুল বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা বিষয়টি এমপি শামীম ওসমানকে জানাই। শামীম ওসমান আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি সেখানে গেলে সিও আমাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেন।’
কাউন্সিলরের শ্যালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ র‌্যাবে পৌঁছাই। কিন্তু আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। রাত নয়টায় র‌্যাবের সিও আমাদের দেখা দেন। তিনি এ সময় আমাদের বলেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো ঝামেলা আছে? আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান। এরপর আমরা রাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে রাইফেল ক্লাবে দেখা করতে যাই। তিনি আমাদের সামনেই নানা জায়গায় ফোন করেন।’


এমনি করে সারাদেশ জুড়েই বাড়ি না ফেরা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ অপহৃত হচ্ছেন। এরপর খোঁজ মিলছেনা। অথবা মিললেও বিচারবহির্ভূত হত্যার পর লাশ হয়ে ফিরে আসছেন।


মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ২৬৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের পর ছেড়ে দেওয়া হয় ২৪ জনকে। পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় ১৪ জনকে। কিন্তু ১৮৭ জনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজই মেলেনি।

পুলিশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখা বলছে, দেশের অপরাধ পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে অপহরণ বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। ২০১১ সালে দেশে অপহরণ ছিল ৭৯২ জন, ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৫০; আর ২০১৩ সালে হয়েছে ৮৭৯। ২০১৪ সালের তিন মাসেই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১৯৬টি।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও জনসংযোগ শাখা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত র‌্যাবের কাছে দুই হাজার ৬৪১ জনকে অপহরণের অভিযোগ আসে। এর মধ্যে এক হাজার ৮৭ জনকে র‌্যাব উদ্ধার করে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকের ৪ এপ্রিলের শিরোনাম ছিল ‘জননিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে’। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সভনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও দেশের এ অবস্থাকে মৃত্যুকূপের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রোববার একজনসভায় তিনি বলেন, দেশ এখন মৃত্যু কূপ ও মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।


গত ২৮ এপ্রিল এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ‘গুম-অপহরণ সীমা অতিক্রম করেছে’ মন্তব্য করে বলেন, ‘সরকারের বাইরে আরেক সরকার থাকলে তো চলবে না। এখানে দুর্বলতা দেখানো যাবে না, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। ক্রমাগত এ-জাতীয় অপহরণ ও গুম আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত নয়। মানুষ আইনের কাছে যায় বিচারের আশায়। সেখান থেকে অপহরণ হলে আইনের শাসন বৃথা হয়ে যাবে।’ আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এই অপহরণের পর আইনের শাসনে বিশ্বাসী মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক “দেখি নাই”, “জানি না”, “বুঝি না” এগুলো বললে চলবে না। এটা কোনোভাবে আইনি শাসন নয়।


মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলছে বাংলাদেশে গত চার মাসে ৮৭টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং ১৯ জনকে গুমের ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এসব মানুষদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারগুলোর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এর পর থেকে তারা গুম হয়েছেন অথবা তাদের লাশ পাওয়া গেছে৷ যদিও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করছেন৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে আটক ব্যক্তিকে জনসমক্ষে হাজির করছে অথবা দূরবর্তী কোনো থানায় নিয়ে হস্তান্তর করছে৷

এরফলে, রাষ্ট্র-সরকার এবং তার বাহিনীগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও প্রমাণ জনগনের সামনে উপস্থাপন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জনগণের ভয়-আতঙ্ক কমবে না। গুজব ছড়াতে থাকবে যে, যাদের ওপরে রক্ষকের দায়িত্ব তারাই ভক্ষক সেজে বসে আছে কিনা? কারণ, সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনীহা দেখালে, ঘটনাকে অস্বীকার করলে, গোঁজামিল দিলে মানুষের মধ্যে কেবল রহস্য আর প্রশ্নের জন্ম হতে থাকবে। অপহরণ, গুম ও বিচার বহির্ভূত খুনের যে সংস্কৃতি গড়ে তোলা হচ্ছে, সেটি কি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ঘটছে? রাষ্ট্র কি কার্যকর রয়েছে নাকি রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য অন্ধকারের শক্তিরা এগুলি ঘটিয়ে চলেছে? যদি তাই হয় তাহলে এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য আরো ভীতিকর খবর হবে। এ সকল প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর রাষ্ট্র-সরকার দিতে না পারলে সকল দায়ভারই তাদের বহন করতে হবে।

আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর মাঝে আমরা প্রয়াত গায়ক সঞ্জীব চৌধুরীর গাওয়া সেই গানের চিত্র দেখতে চাইনা। যে গানে বলা হয়েছে, ‘‘ওরা বলে ওই গাড়িতে করে আমাদের জন্য খাদ্য ও পানীয় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু বিশ্বাস করুন বন্ধুগণ আমি জানি ওই গাড়িতে
করে আমাদের জন্য কোনো খাদ্য ছিলনা আমাদের জন্য কোনো পানীয় ছিলনা

তিনশটি লাশ, তিনশটি লাশ...
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×