somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউঃ ভাঙা জোছনা

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বইঃ ভাঙা জোছনা
লেখকঃ তানিয়া সুলতানা
প্রকাশণীঃ লেখচিত্র প্রকাশন
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১১
মূল্যঃ ২০০ (গায়ে লেখা)
প্রকাশকালঃ বইমেলা ২০১৬
Genre: সামজিক,গ্রামীণ, আবহমান বাংলা



ভাঙা জোছনা!

পূর্ণতার মাঝে অপূর্ণতাই ভাঙা জোছনা!


বইটা পড়ে তাই মনে হল।

অনূভূতি আর কী প্রকাশ করব! আমি অবাক! হতভম্ব! মুগ্ধ!
এমন লেখা আমি আসলে কয়টা পড়েছি - নিজেও জানিনা।

শুরুর দিকের গ্রামীণ চিত্রটা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাসটাকে।
এরপর ধীরে ধীরে 'ভাঙা জোছনা'র আলো আলোকিত করে গেছে বইটাকে। স্বরূপটা ফুটিয়ে তুলেছে।

শুরুটা যেমন - শেষটা পুরোটাই অন্যরকম। এমনকী শেষ পৃষ্ঠার শেষ দৃশ্যায়ণটার আগের মুহুর্ত পর্যন্ত সেটা আঁচ করা যায়নি। হঠাৎই কেমন করে যেন এসে গেল।

প্রতিটা চরিত্রই স্বরূপে ফুঁটে উঠেছে। প্রতিটা চরিত্রের সাথে ঘটনা তাদের ঘটনাগুলোও।

সত্যি বলতে - বইয়ের প্রতিটা পাতা মন কেড়ে নিয়েছে। প্রতিটা ঘটনাও।

তবে সবচেয়ে বেশি মনটা কেড়েছে 'মনা পাগলা' আর 'রাবেয়া'র আড়ালে থাকা ভালবাসাটা। হয়তো, এটা আশাই করিনি। তাই বেশি ভাল লেগেছে।

গল্পের ফাঁকে ফাঁকে থাকা গীতগুলো উপন্যাসটাকে কাব্যিক মাত্রা দিয়েছে। পড়তে শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তিও নেই।

খুবই সরল-সহজ লেখনী! এইটা এখন বলতে গেলে বিরলই। এতটা সহজভাবে কেউই লিখে না। বলা যায়, লিখতে পারে না। লেখিকা এই কাজটা খুব সুনিপুণভাবেই করে দেখিয়েছেন।
প্রতিটা বাক্যেই কাব্যিক ধারাটা ছিল। যেইটা একটা আলাদা অনুভূতি দিয়ে গেছে - শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

বাক্যগুলো যে খুব ব্যতিক্রম কিছু তা নয়। খুবই সাধারণ বাক্য। কিন্তু এগুলোই অন্যরকম ভাবে ধরা দিয়েছে।

যেমন - 'একসময় দিনকে কথা দেয়া সন্ধ্যা ধীর পায়ে নেমে এল পৃথিবীর গায়ে' (পৃঃ ২২)
খুব সাধারণ বাক্য। কিন্তু কাব্যিক রূপকতার সাথে ভাবলে কিছুটা মুগ্ধতা এসেই যায়!

সুজন মতি চরিত্রটা খুব বেশিই ভাল ছিল। হয়ত উপন্যাসে তার বিস্তৃতি এতটা না। কিন্তু পুরোটাতেই অলক্ষ্যে সে রয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে তার কথাগুলোর আবেশটা।

লিলি - চরিত্রটা নামের মতই পদ্মফুলের সদৃশ! কিন্তু কিছুটা চাপা স্বভাবের। যেন বাঙালী ঐতিহ্যবাহী মেয়েদেরই প্রতীক।

রানু - সাহসী কন্যা। সমাজ মেয়েদেরকে কিছুটা চেপে দূরেই রাখতো আগের সময়ে। কিন্তু এসবের মাঝেও কিছু কিছু মেয়ে সাহস নিয়েই এগুতো। ভাল থাকার জন্য, ভাল রাখার জন্য। রানু চরিত্রটা তাদেরকেই তুলে ধরেছে।

আরো অনেক চরিত্রই আছে। যাদের প্রত্যেককে নিয়েই অনুভূতি প্রকাশ করা যায়। সেইটা করব না। স্পয়লার হয়ে যেতে পারে।

উপন্যাসটায় সবই ছিল। একটা বাচ্চার দুনিয়াতে আসার মুহুর্তে মায়ের কষ্টের বর্ণনাটাও।

কীরে এতটা পরিপূর্ণতা একটা উপন্যাসে থাকতে পারে - তা ভেবেই অবাক। যেইখানে লেখিকার এইটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস!

উপন্যাসের সবচেয়ে সেরা দৃশ্যকল্পটা, আমার মনে হয় এটাকে অনেকেরই সেরা মনে হবে...
রানু তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, 'এত্ত কষ্ট করছ তুমি, মা। কত্ত কষ্ট দিছি তোমারে, মাফ কইরা দিও...'

লেখিকা যেভাবে ঐতিহ্যের সেই গ্রামীণ বাঙলাকে ফুঁটিয়ে তুলেছেন - সেইটা এখনকার যুগে সম্ভব না। এখন সবই বদলে গেছে বাঙলার। তাই লেখক-লেখিকাদের লেখা থেকেও বাঙলার সেই রূপটা হারিয়ে যাচ্ছে।
এই সময়ে এমন একটা লেখা সত্যিই দরকার ছিল।

লেখিকা দেশে না থাকাতেই হয়ত - কল্পনায় বাঙলাটাকে সেই আগের মত করে ধরে রেখেছেন। ভাগ্যিস! নাহলে এত সুন্দর লেখাটা পেতাম না আমরা।

রেটিং - ১০/১০! (হয়ত কিছু সমস্যা আছে - কিন্তু কোনভাবেই উপন্যাসটার ভাল লাগার রেশটা কোন নম্বর কাঁটতে সাহস করলো না)

প্রাপ্তিস্থলঃ বুকস্ট্রিট (পেজের ইনবক্সে বইয়ের নাম আর লেখকের নাম লিখে মেসেজ দিলেই ওরাই সব কিছু জানিয়ে দিবে)

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৩
৩৩টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×