লেখকঃ তানিয়া সুলতানা
প্রকাশণীঃ লেখচিত্র প্রকাশন
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১১
মূল্যঃ ২০০ (গায়ে লেখা)
প্রকাশকালঃ বইমেলা ২০১৬
Genre: সামজিক,গ্রামীণ, আবহমান বাংলা

ভাঙা জোছনা!
পূর্ণতার মাঝে অপূর্ণতাই ভাঙা জোছনা!
বইটা পড়ে তাই মনে হল।
অনূভূতি আর কী প্রকাশ করব! আমি অবাক! হতভম্ব! মুগ্ধ!
এমন লেখা আমি আসলে কয়টা পড়েছি - নিজেও জানিনা।
শুরুর দিকের গ্রামীণ চিত্রটা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাসটাকে।
এরপর ধীরে ধীরে 'ভাঙা জোছনা'র আলো আলোকিত করে গেছে বইটাকে। স্বরূপটা ফুটিয়ে তুলেছে।
শুরুটা যেমন - শেষটা পুরোটাই অন্যরকম। এমনকী শেষ পৃষ্ঠার শেষ দৃশ্যায়ণটার আগের মুহুর্ত পর্যন্ত সেটা আঁচ করা যায়নি। হঠাৎই কেমন করে যেন এসে গেল।
প্রতিটা চরিত্রই স্বরূপে ফুঁটে উঠেছে। প্রতিটা চরিত্রের সাথে ঘটনা তাদের ঘটনাগুলোও।
সত্যি বলতে - বইয়ের প্রতিটা পাতা মন কেড়ে নিয়েছে। প্রতিটা ঘটনাও।
তবে সবচেয়ে বেশি মনটা কেড়েছে 'মনা পাগলা' আর 'রাবেয়া'র আড়ালে থাকা ভালবাসাটা। হয়তো, এটা আশাই করিনি। তাই বেশি ভাল লেগেছে।
গল্পের ফাঁকে ফাঁকে থাকা গীতগুলো উপন্যাসটাকে কাব্যিক মাত্রা দিয়েছে। পড়তে শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তিও নেই।
খুবই সরল-সহজ লেখনী! এইটা এখন বলতে গেলে বিরলই। এতটা সহজভাবে কেউই লিখে না। বলা যায়, লিখতে পারে না। লেখিকা এই কাজটা খুব সুনিপুণভাবেই করে দেখিয়েছেন।
প্রতিটা বাক্যেই কাব্যিক ধারাটা ছিল। যেইটা একটা আলাদা অনুভূতি দিয়ে গেছে - শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
বাক্যগুলো যে খুব ব্যতিক্রম কিছু তা নয়। খুবই সাধারণ বাক্য। কিন্তু এগুলোই অন্যরকম ভাবে ধরা দিয়েছে।
যেমন - 'একসময় দিনকে কথা দেয়া সন্ধ্যা ধীর পায়ে নেমে এল পৃথিবীর গায়ে' (পৃঃ ২২)
খুব সাধারণ বাক্য। কিন্তু কাব্যিক রূপকতার সাথে ভাবলে কিছুটা মুগ্ধতা এসেই যায়!
সুজন মতি চরিত্রটা খুব বেশিই ভাল ছিল। হয়ত উপন্যাসে তার বিস্তৃতি এতটা না। কিন্তু পুরোটাতেই অলক্ষ্যে সে রয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে তার কথাগুলোর আবেশটা।
লিলি - চরিত্রটা নামের মতই পদ্মফুলের সদৃশ! কিন্তু কিছুটা চাপা স্বভাবের। যেন বাঙালী ঐতিহ্যবাহী মেয়েদেরই প্রতীক।
রানু - সাহসী কন্যা। সমাজ মেয়েদেরকে কিছুটা চেপে দূরেই রাখতো আগের সময়ে। কিন্তু এসবের মাঝেও কিছু কিছু মেয়ে সাহস নিয়েই এগুতো। ভাল থাকার জন্য, ভাল রাখার জন্য। রানু চরিত্রটা তাদেরকেই তুলে ধরেছে।
আরো অনেক চরিত্রই আছে। যাদের প্রত্যেককে নিয়েই অনুভূতি প্রকাশ করা যায়। সেইটা করব না। স্পয়লার হয়ে যেতে পারে।
উপন্যাসটায় সবই ছিল। একটা বাচ্চার দুনিয়াতে আসার মুহুর্তে মায়ের কষ্টের বর্ণনাটাও।
কীরে এতটা পরিপূর্ণতা একটা উপন্যাসে থাকতে পারে - তা ভেবেই অবাক। যেইখানে লেখিকার এইটাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস!
উপন্যাসের সবচেয়ে সেরা দৃশ্যকল্পটা, আমার মনে হয় এটাকে অনেকেরই সেরা মনে হবে...
রানু তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, 'এত্ত কষ্ট করছ তুমি, মা। কত্ত কষ্ট দিছি তোমারে, মাফ কইরা দিও...'
লেখিকা যেভাবে ঐতিহ্যের সেই গ্রামীণ বাঙলাকে ফুঁটিয়ে তুলেছেন - সেইটা এখনকার যুগে সম্ভব না। এখন সবই বদলে গেছে বাঙলার। তাই লেখক-লেখিকাদের লেখা থেকেও বাঙলার সেই রূপটা হারিয়ে যাচ্ছে।
এই সময়ে এমন একটা লেখা সত্যিই দরকার ছিল।
লেখিকা দেশে না থাকাতেই হয়ত - কল্পনায় বাঙলাটাকে সেই আগের মত করে ধরে রেখেছেন। ভাগ্যিস! নাহলে এত সুন্দর লেখাটা পেতাম না আমরা।
রেটিং - ১০/১০! (হয়ত কিছু সমস্যা আছে - কিন্তু কোনভাবেই উপন্যাসটার ভাল লাগার রেশটা কোন নম্বর কাঁটতে সাহস করলো না)
প্রাপ্তিস্থলঃ বুকস্ট্রিট (পেজের ইনবক্সে বইয়ের নাম আর লেখকের নাম লিখে মেসেজ দিলেই ওরাই সব কিছু জানিয়ে দিবে)

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




