somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রিয়াজ শাহেদ
ভন্ডামির কোনো শেষ নাই, ভন্ডামি তাই সর্বদাই

একটা জায়গায় ভুল হচ্ছে, বারবার, বারবার...... [রিপোস্ট]

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

{ গত জুনে সৃষ্টি হয়েছিলো লেখাটি, সাড়াও পেয়েছিলো ভালো; তবে পোস্টের চেয়ে কমেন্টগুলো হয়ে গিয়েছিলো বেশি আকর্ষণীয়, প্রচুর ব্লগারের প্রাণবন্ত আলোচনা চলেছিলো দীর্ঘদিন ধরে।

হঠাৎই রিপোস্ট করতে ইচ্ছে হলো... }

প্রিয় ব্লগার, মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা ঘটনা বলি আপনাকে; এ পোস্টটা লেখার পেছনে যে কয়টা ব্যাপার জোরালো ভূমিকা রাখছে, তাদের মধ্যে এ ঘটনাটা আছে।

সে আজ থেকে তিন বছর আগের কথা, ফেব্রুয়ারির অমর একুশে বইমেলা চলছে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বের আশীর্বাদে প্রায় প্রতিদিনই ঢুঁ মারি প্রাণের মেলায়। সুমন্ত আসলামের “বাউন্ডুলে” নিয়মিত পড়তাম তখন, অসাধারণ আবেগী লেখাগুলো ছুঁয়ে যেতো মন। সেদিন গিয়েছিলাম পার্ল পাবলিকেশন্সে, বাউন্ডুলে কিনতেই; গিয়ে দেখি স্বয়ং সুমন্ত হাজির। খুব যে উচ্ছ্বসিত হলাম তা নয়, অটোগ্রাফও নেই নি (সুমন্তদা কি মাইন্ড করলো একটু?!), ৪২ টাকা দিয়ে বইটা কিনে স্টল থেকে বেরিয়ে এলাম। ঘুরছি ঘুরছি, হঠাৎ মনে হলো, আরে তাইতো, বইটার দাম এতো কম হওয়ার কথা নয় তো! হিসেব করে দেখলাম ৫৬ টাকা আসে; ফিরে চললাম আবার পার্লের দিকে।

ব্যাপারটা সেলসম্যান কে বলতেই লজ্জিত হয়ে ভুল স্বীকার করলেন। আমি বাড়তি টাকা ক’টা দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, পেছন থেকে সুমন্তদা-র ডাক; পুরো ব্যাপারটাই তো দেখেছেন তিনি। ঘুরে দাঁড়ালাম, অতঃপর প্রশংসার ফুল ঝুরি ঝুরি হয়ে পড়লো আমার ওপরে, ফেললেন সুমন্তদা, “আপনার মতো সৎ মানুষই তো দেশটার দরকার + আমি অভিভূত + এ ব্যাপারটা নিয়ে একটা বাউন্ডুলে লিখে ফেলতে হবে- আমাদের দেশে এখনো এরকম মানুষ আছে, কাজেই হতাশ হওয়ার কিছু নেই + আমরা এরকম দশটা সৎ ছেলে চাই” ইত্যাদি ইত্যাদি...

লজ্জা পাচ্ছিলাম, কারণ ওভাবে ভাবিই নি আমি, টাকাগুলো মেরে দেয়ার কোনোরকম চিন্তাই আসে নি মাথায়; কিঞ্চিৎ গর্বিত হচ্ছিলাম, কারণ সবকিছুর শেষে আমি তো একটা মানুষই। কিন্তু সব অনুভূতি ছাপিয়ে যে কথাগুলো মনে এলো, এক নিঃশ্বাসে বলেই চলে এলাম বিস্মিত সুমন্ত আসলামকে পেছনে রেখে, “দশ জন কেনো, এরকম বা এর চেয়েও ভালো দশ হাজার জন সৎ মানুষ পাবেন আপনি খুঁজলে; লাভ নেই, সৎ মানুষগুলো কোনো কাজে আসবে না দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে, যতক্ষণ না রাজনীতির ভেতরে তারা ঢুকতে পারছে। হ্যাঁ, আমরা যতোই আশাবাদী হই না কেনো, এদেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকে রাজনীতিবিদদের ওপর নির্ভর করতেই হবে; ওজায়গাটা সততাশূন্য থাকলে ভাঙ্গনের সুর খেলা করবে, সর্বদা এবং সর্বত্র।”

এই হচ্ছে ঘটনা। আড়াই বছর আগের প্রায় ভুলে যাওয়া এ ঘটনাটা হঠাৎ করে জাগরূক হয়ে উঠলো কেনো- প্রশ্ন আসতেই পারে আপনার কাছ থেকে। উত্তরের জন্যে যেতে হবে আমার ক্ষুধা সম্পর্কিত একটি গুরুতর সমস্যা গল্পের পোস্টটায়, এখানে প্রিয় রন্টি চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, “রিয়াজ শাহেদভাইকে আরেকটা পোষ্টে বলেছিলাম, আমাদের সবার ছোট্ট ছোট্ট অনুভবই আমাদের কাজকে এগিয়ে নেবে, তার এই লেখাটাও এগিয়ে যাবার পথে একধাপ। আমার জানা মতে রিয়াজশাহেদের বয়স খুব বেশী না। আমাদের তরুনরা এভাবে ভাবে...আমরা খুব বেশীদিন আর এমন থাকব না, অবস্থা পাল্টাবেই। আমি আশাবাদী।”

আসলেই, আমাদের মতো আশাবাদী মানুষ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই; আশায় আশায় কেটেছে ৩৭ বছর, দেশের সর্বনাশ যা হওয়ার হয়েছে; আশায় আশায় কাটবে আরো কত্তো বছর জানি না, সামনে নতুন কী সর্বনাশ অপেক্ষা করে আছে তাও জানি না। ৩৭টা বছর! “আমি আশাবাদী”, “আমরা আশাবাদী”, “সামনে আসছে নতুন দিন”, “মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য উঠবেই”, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবোই”, “আর নয় হানাহানি, আসুন সকলে মিলে সোনার বাংলাদেশ গড়ি”, “হতাশ হওয়ার কিছুই নেই”......................................................................... প্রিয় ব্লগার, এই ৩৭টা বছরে কম করে হলেও ৩৭ কোটি বার উচ্চারিত হয়েছে এ কথাগুলো, বাংলাদেশের মাটিতে। আমি বলেছি, বলেছেন আপনিও। সত্যি করে বলুনতো, সত্যি করে বলুনতো, সত্যি করে বলুনতো, আপনি কি সত্যিকার অর্থেই দেশটার উন্নয়ন (বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটা জায়গায় নয়) চান? নাকি শুধু চান নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন? কোনোভাবে সেটা হয়ে গেলেই মনে করছেন, দেশের প্রতি আপনার দায়িত্ব পালন করা হয়ে গেলো, কারণ এখন আপনি দেশকে সার্ভিস দিচ্ছেন?

উন্নয়নের নামে আমরা যা করছি তা হলো, দেশটার ক্ষতের ওপর একটা রঙিন প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করছি যাতে ক্ষত ঢাকা পড়ে থাকে; ক্ষত সারানোর কোনো চেষ্টা আমাদের নেই, এমনকি ৩৭ বছরে ক্ষত কতোটা গভীর হয়েছে সেসম্পর্কে সঠিক ধারণাও নেই।

ব্লগার, আপনি কি রাস্তাঘাটে চলার সময় থুতু, চিপসের প্যাকেট, ড্রিঙ্কসের বোতল ফেলেন? বাসায় অকারণে লাইটফ্যান চালিয়ে রাখেন? ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও নিচ দিয়ে রাস্তা পার হন? সিগনাল না মেনেই গাড়ি চালিয়ে দেন? আইন থাকার পরও প্রকাশ্যে ধুমপান করেন?

আমি জানি, আমি ভালোভাবে জানি- ফেলেন, রাখেন, হন, দেন, করেন। কারণ আপনার দলে যে আমিও পড়ি! খুবই জরুরী অথচ সামান্য এই নিয়মগুলোই মানতে পারছি না, আমরাই আবার “আশা” করি, একদিন স্বপ্নের দিন আসবে...

আচ্ছা, ধরে নিচ্ছি সবাই আমাদের মতো নন, “দশটা সৎ ছেলে” অনেক আছে আমাদের। কী করতে পেরেছে তারা, এই এত্তোগুলো বছরে? তেমন কিছু যদি করতে পেরে না থাকে, কেনো পারলো না?

রাজনীতির ভেতরে যদি না ঢোকে যৌক্তিক, বৌদ্ধিক, শুদ্ধ আর সঠিক মানুষ, কোনোভাবেই দাঁড় করানো যাবে না দেশটাকে, উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেই ফেলে দেয়া হবে ল্যাং মেরে; ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার লোক এই দেশে প্রচুর। ঘরে বসে “আমি আশাবাদী আমি আশাবাদী” তসবিহ জপে গেলে কচু হাতি ঘন্টা হবে দেশের। চোখে রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে বসে আছি, দেখতে পাবো কিভাবে চারদিকে নেমে এসেছে মধ্যযুগের চেয়েও গাঢ় অন্ধকার? ভাবছি কেবল “এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে”, করছি না কিছুই, আশা করে আছি অন্য কেউ শুরু করবে বলে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উন্নতি দেখে নিজেদের ধন্য ধন্য করছি, ভাবছিও না যে একটা দেশের সামগ্রিক উন্নতি ৩৭ বছরেও না হলে আর কবে হবে।

এ জায়গাটাতেই ভুল হচ্ছে আমাদের, বারবার।

বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যে সবার আগে দরকার রাজনীতিবিদদের “হোমো সেপিয়েন্স” থেকে “মানুষ”-এ রূপান্তরিত হওয়া।

[ সাবধান! এটি একটি আপাদমস্তক বিলাসিতা ও ভন্ডামিপূর্ণ পোস্ট ]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:০৪
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×