somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি-অনুভবে :- কবি শামসুর রাহমান

২৩ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠকবি ও স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন মানে বাঙালির আনন্দের একটি দিন।আমাদের প্রজন্মের সৌভাগ্য যে তাঁকে চাক্ষুষ করেছি।আমরা মাইকেলকে দেখিনি, রবীন্দ্রনাথকে দেখিনি, নজরুলকে দেখিনি, জীবনানন্দ-বুদ্ধদেব-সুধীন-অমিয়-বিষ্ণুকে দেখিনি, সুকান্তকে দেখিনি, জসীমকে দেখিনি, কিন্তু কবি শামসুর রাহমান দেখেছি।নিজের দশকের শীর্ষস্থানীয় তো বটেই নিজের সময়ের বড় কবি হিসেবেই তিনি প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছিলেন।কেবল কবিতা নয়,শিশুসাহিত্য, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধসাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তিনি ব্যাপক সাফল্যের নজির রেখে গেছেন।

সমকালীন বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি ও স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমানের ৮২তম জন্মদিন আজ।তাঁর নানাবাড়ি পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর।আদি পৈত্রিক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরার পারাতলীতে।তবে আজন্ম ঢাকাতেই কাটিয়েছেন তিনি,বিশেষ করে পুরান ঢাকায়।তাই তাঁর রচনায় বিশেষ মাত্রা নিয়ে উঠে এসেছে পুরান ঢাকা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর প্রাতিষ্ঠানিক শিৰার পর পেশাগত জীবন শুরম্ন সাংবাদিকতা দিয়ে। অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সম্পাদক ছিলেন তিনি।

দীর্ঘ ৫০ বছরের সাহিত্য চর্চায় তার ৬১টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার রচিত কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি', 'তোমাকে পাওয়ার জন্য,হে স্বাধীনতা', 'গেরিলা' সহ এ সময়ের অন্যান্য কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কাব্যগ্রন্থ 'বন্দী শিবির থেকে'।কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস 'অক্টোপাস', 'এলো সে অবেলায়', বেশকিছু ছোট গল্প, ছোটদের জন্য ছড়া, আত্মজীবনী 'কালের ধুলোয় লেখা' এবং পত্রিকায় বিপুল সংখ্যক নিবন্ধ লিখেছেন।বাঙালি জাতির বিগত ৫০ বছরের সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক উত্থানপর্বের প্রতিটি ঘটনার উজ্জ্বল উপস্থিতি ঘটেছে শামসুর রাহমানের কবিতা, উপন্যাস, গান, প্রবন্ধ আর সাংবাদিকতায়।তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে রক্তে রাঙানো ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুতোষ, অনুবাদ, সম্পাদনা, সাংবাদিকতায় কলামসহ কবির জীবিত অবস্থাতেই ১১২টি গ্রন্থ প্রকাশ পায়।

মহান ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থান, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ,স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামসহ জাতীয় জীবনের চলমান ঘটনাবলীর পাশাপাশি শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনাচরণ, প্রেম ভালবাসা, সাধারণ মানুষের জীবন সংগ্রাম এক কথায় বাঙালীর জীবনচিত্র উঠে এসেছে তাঁর অজস্র পঙক্তিমালায়, যা তাঁকে এনে দিয়েছে বিস্ময়কর সাফল্য।আর তিনি হয়ে উঠেছেন আবহমান বাংলার কবি শামসুর রাহমান।যাঁর হীরকদু্যতিময় প্রাণস্পর্শী কবিতায় সমকালের সংগ্রাম, প্রতিরোধ, যুদ্ধ, হাহাকার, আশা-নিরাশা, ৰয়, দুঃখ-কষ্ট, উত্থান-পতন, নিপীড়ন, নির্যাতন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, শোষণ, যাতনা, আনন্দ-বেদনা সবই ধরা দিয়েছে মূর্ত হয়ে, যা তাঁকে সমকালীন বাংলা সাহিত্যে বাংলা ভাষায় সর্বাধিক কবিতা রচয়িতার খেতাবও এনে দেয়।

তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান দ্বিতীয় মৃতু্যর আগে' প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে। কবি শামসুর রাহমান বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছেন এক ভিন্নতর মাত্রা।দেশে বিদেশে অসংখ্য পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কার, একুশে পদক, আবুল মনসুর স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

দেশের স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য কবিতা দিয়েই লড়াই করেছেন এ কবি।কবিতা দিয়ে নিজের দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৩৫ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৬ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, তাঁর মায়ের কবরে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

আমাদের স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তার অসামান্য রচনা ও কর্মের মধ্যে তিনি আজো বেঁচে আছেন প্রেরণাদাতা হয়ে,তাঁর ৮২তম জন্ম বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ...
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×