এখন অব্দি বুঝে উঠতে পারছি না সত্যিই কী ঘটেছিলো, ১৫ মিনিটে!!!
==========================================
বহুকাল ধরে এই একটি ছবি মনে মনে আঁকছি। আর সেই ছবিটির সাথে প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে মেলাতে চেষ্টা করেছি। কখনো সেই ছবিটির সাথে কারো কিছু মিলে যাওয়াতে আর কখনো কোন কিছুই কেনো মিলছে না সেই ভাবনাতেই অনেক সময় কেটে যেতো। কখনো কখনো একি নাটক বার বার দেখতাম। একি ছবির কিছু মুহুর্ত বার বার টেনে দেখতাম। একি বইয়ের কিছু লাইন মনে মনে সারা দিন রাত বির বির করে বলতাম। একটু অবসর সময় একাকীত্ব বা নিরবতায় আমি সেই ছবিটির মাঝে হারিয়ে যেতাম। কখনো কিডিদের চিমটি, কখনো বুয়ার বেসুরা গলায় ভাইজান, কখনো পাশের ছাদ থেকে দু'একটা ছোট পাথরের টুকরোর আঘাত আর কখনো কখনো মামা বাস এখানে থামবে নামেন... এই শুনে আবার নিজের মাঝে ফিরে আসতাম। এই অনিচ্ছাকৃত সময় অসময়ে হারিয়ে যাওয়াটা যারা জানতো তারা খুব কিছু একটা বলতো না। আর যারা এই বিষয়টি জানতো না, তারা বরাবরই একটু অন্য রকম আচরণ করতো। আর বর্তমান সময়ে করাটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছি। এই বর্তমান সময়টাকেই খুব অপছন্দ করি। মনে মনে প্রায়ই বিরক্ত হতাম। চোখ থাকতে কেনো কেউ নিজ চোখে দেখতে চায় না। কান থাকতেও কোন অন্যের কান শুনা কথা বলে। দুই হাত থাকতেও কেনো মিছেই অন্য একটি হাত যখন তখন দেখায়। এতো বিরক্তির মাঝে মনে মনে আঁকা ছবিটিই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো। আর মাঝে মাঝে মনে হতো বাস্তবের এতো জটিল সমীকরণে না জড়িয়ে সেই ছবির ভাবনায় ডুবে থাকাটাই ভালো। যখন তখন এই ছবির কত কিছু পাল্টাচ্ছি। যদি বাস্তবে কাউকে নিয়ে এমন করতে যাই.. উফ! ভাবতেই তো ভয় লাগে। কিন্তু যার ছবি আঁকছি সে তো খুব জেদী হবে। এটা যে আমার কেমন চয়েজ নিজেই বুঝি না। কিন্তু তাও ঘুরে ফিরে এই রকম ছবিটাই দেখি। ধুর মাথাটাই গুলিয়ে গেলো...
>ধ্যাত...
এই বলে শুধু মাথাটা ঝুকালাম।
ঠিক ওই মুহুর্তে, পাশের কারো কথার আওয়াজ কানে আসলো
>ধ্যাত মানে। এতোক্ষণ ধরে বলছি। রুমে ঢুকেই তো ছাতাটা জানালা দিয়ে দিয়ে দিবো...
মুহুর্তের মধ্যে নিজে আবিষ্কার করলাম। আমি আমার বাসার গেইটের সামনে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি...
দশটা বেজে দশ মিনিট
আমি টানা দশ মিনিট ধরে এক জায়গায় দাঁড়ানো।
বাইরে জমিদারি বৃষ্টি দেখতে দেখতে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।
>আবার ঘড়িতে কী দেখছেন! দেখি, ছাতা ছাড়েন। তখন থেকেই তো দেখছি মুর্তির মতো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। যত্ত সব। আমি জানালা দিয়ে ছাতা দিয়ে দিচ্ছি।
আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কী বলবো। মনে মনে ভাবলাম কিডিদের কাছে আমার মান ইজ্জ্বতটা বোধ হয় ডোবাবে। জানালা দিয়ে তো শুধু তানি ই ছাতা দেয় আর নেয়। অবশ্যই তানির কেউ হবে। কিন্তু এর আগে তো কখনো দেখছি বলে মনে হয় না।
আমি ঠিক একি জায়গায় দাঁড়িয়েই কথাগুলো ভাবছি। আমার সামন দিয়ে বা পেছন দিয়ে কে আসলো গেলো কিছুই মনে করতে পারছি না। হঠাৎ মনে হলো কিডি আমাকে ডাকছে। কিন্তু কোত্থেকে যে ডাকছে তা মনে করতে পারছি না।
হঠাৎ ব্যাথায় উফ করে উঠলাম...কারো চিমটি মনে হলো
এবার দেখতে পাচ্ছি, ছাতা হাতে ইরা আমাকে বলছেঃ
ওই পাজি আঙ্কলে, এতো বার ডাকছি শুনছো না, ধরো তোমার ছাতা।
কিন্তু ছাতাটা কিডিই আমার কাছ থেকে নিয়েছিলো না কি অন্য কেউ নিয়েছিলো। তাও বুঝে উঠতে পারছি না। কিডির কাছে জানতে চাওয়াটও সমস্যা। আমি ই শিওর না। আর ছাতা তো দিলো ইরা। কিছুই তো মিলছে না!!!
আবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মাত্র পাঁচ মিনিট হলো!
আমি ইরাকে বললামঃ ছাতাটা দিতে এতো সময় লাগে!
ইরাঃ আমি কী রোবট! এক মিনিট ও হয় নি, আর বলো এতো সময়, পাজি আঙ্কেল!
তারপর ছাতা নিয়ে গেইটের বাইরে বের হলাম। বাইরে যাবার উদ্দেশ্যে।
এখন অব্দি বুঝে উঠতে পারছি না সত্যিই কী ঘটেছিলো, ১৫ মিনিটে!!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৮