গোরু রক্ষকদের বাড়াবাড়িতে ভারতে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। বহু নীরিহ মুসলমানকে প্রাণ হারাতে হয়। ঘটনা এতটা আতঙ্কিত করে তোলে সেখানকার মুসলমানদের যে পত্রিকায় আমাদের পড়তে হয় ভয়ে মুসলমান যুবকের বোরখা পরিধান। সেদেশের কৃষকরাও বিপদে পড়েছে, কেননা চাষ-বাষের অযোগ্য গোরুগুলো তারা বিক্রি করতে পারছে না। এদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর মত অবস্থা কৃষকদের নেই। দেশের ভেতরে একটা চাপ থাকলেও, হিন্দুত্ববাদী দল এসব পাত্তা দেয়নি। বাংলাদেশে সেই ফাঁকে গোরুর মাংসের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আবার আমাদের অনেকেই নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করে। লাঙলের বদলে ট্রাক্টর আসায় যারা গোরু পালন বাদ দিয়েছিল, তারা গোরু মোটা-তাজা করতে শুরু করে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় গোরুর বড় বড় খামার গড়ে উঠতে থাকে। এতে দেশে গোরুর ঘাটতি দিন দিন কমে আসছে। সরকার যদি গোরু উৎপাদনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার হার আরও বৃদ্ধি করে তবে অচিরেই আমাদের দেশে গোরুর ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু সরকারি, বেসরকারি সুবিধা পায় কেবল তারাই যাদের মাথায় তেল আছে। গরিব কৃষক ধার-দেনা করে গোরু কিনে অতি কষ্টে দুটো পয়সা লাভের আশায় লালন-পালন করে। এদেরকে সন্তানের মতই তারা লালন পালন করে। বাড়ির কর্তা যখন হাটে নিয়ে যায় কিষানির চোখ ছলছল করে ওঠে। এত যত্ন করে পোষা প্রাণিটি বিক্রি করে কখনও কিছু লাভ পায় কখনও লোকসান হয়ে পথে বসে।
এ-বছর আগাম বৃষ্টিতে ধানের চরম ক্ষতি হয়েছে। দেশে চালের ঘাটতির কারণে দাম চড়া, কৃষকের বাড়িতে খর নেই, গো-খাদ্যের ঊর্ধ্বগতি। এই বিপদের মধ্যে যারা একটু আশার আলো দেখতে চেয়েছিল, আর্থিক ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে চেয়েছিল কোরবানির ঈদে গবাদি পশুগুলো বেচে—বন্যা তাদের সব শেষ করে দিয়েছে। এখন তাদের নিজেদেরই থাকার জায়গা নেই, গোরু, ছাগল কোথায় রাখবে। তাদের খাবারই-বা কোথায় পাবে? বন্যা আক্রান্ত অঞ্চলের গোরু পালকরা লাভের আশা ছেড়ে, এখন চালান ওঠানোর চেষ্টায়। কিন্তু হতাশা-জনক সংবাদ হল, বন্যার ভেতরে কে গোরু কিনবে? অর্ধেক দামেও কেউ কিনতে চাচ্ছে না। যারা আমাদের মুখের খাবার যোগায়, তাদের আমরা কখনও প্রতিদান দেইনি, প্রকৃতিও যেন গরিব মানুষদের অপছন্দ করে!
সবার পক্ষে কথা বলার মানুষ আছে—কৃষকের অন্তরজ্বালা কেউ বোঝে না। শেয়ার বাজারে পুঁজি হারানোরা গাড়ি ভাঙতে পারে, মিছিল করতে পারে। পত্রিকাগুলো দিনের পর দিন সরব হয় কিন্তু কত শতবার শেয়ার বাজারের মত সর্বনাশ ঘটে কৃষকের, তাদের কথা কেউ মনে রাখে না, এদের নিঃশব্দ আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় না।
‘সমঝোতার ভিত্তিতে ভারত সীমান্তের ৩১ করিডর খুলে দেওয়া হয়েছে। এ পথগুলো দিয়ে বৈধ পথে আসছে গরু। এ ছাড়া সীমান্তের বিভিন্ন পথ দিয়ে অবৈধ পথেও ঢুকছে দেদার গরু। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতিদিন ভারত থেকে হাজার হাজার গরু ঢুকছে।’ আমাদের সময় ১৭/০৮/২০১৭। যারা সারা বছর গোরু গোরু করে পাগল হয়, এখন নিজেরা বিপদে পড়ে আমাদের দেশের গোরু চাষিদের সর্বনাশ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কয়েক বছর তো ভারতীয় গোরু আসেনি, আমাদের কি কোরবানির পশুর অভাব হয়েছে? যেটুকু ঘাটতি ছিল সেটা চোরেরা আপনা-আপনিই পাচার করে পুষিয়ে দিতে পারত। বন্যার ভেতরে সীমান্তের করিডোরগুলো খুলে দেয়ায় গোরুর দাম পড়ে যাবে, ভুড়িওয়ালারা আরও ভুড়ি বাড়াবে—নেতারা আট-দশটা গোরু মেরে হাততালি নেবে। কিন্তু আধমরা যারা তারা হা-হুতাশ করবে, নিরবে চোখের জল ফেলবে—তাদের মরার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
ছবি:গুগল থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৩২