অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষে ভালয় ভালয় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নে ফিরে এসেছেন। সোহেল তাজের মত মানুষের ভাগ্নে বলে হয়ত অপহরণকারীরা ভয় পেয়ে কোনও ক্ষতি ছাড়াই সৌরভকে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের বেলায় অপহরণকারীরা কী করত কে জানে! সৌরভ হয়ত ফিরে এসেছে, কিন্তু ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মত অসংখ্য মানুষ হারিয়ে যাওয়াই বলি, আর গুমের কথাই বলি শেষ পর্যন্ত তারা ফিরে আসেনি। কোনদিন ফিরে আসবে বলে সেরকম কোন লক্ষণও নেই। ওইসব পরিবারের কান্না হয়ত কোনদিনই আর থামবে না।
দেশের মধ্যে অপহরণকারীদের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। লোভের জন্য মানুষ আত্মীয়-স্বজন, আপন ভাইদেরকেও রেহাই দিচ্ছে না। কিছুদিন আগেই বড় ভাই বন্ধুদের মিলে ছোট ভাইকে অপহরণ করেছে টাকার জন্য— এমন খবর আমরা পত্রিকায় দেখেছি।
শিশুদের অপহরণের সঙ্গে মূলত চেনাজানারাই, কাছের মানুষেরাই জড়িত থাকে। তাই শিশুদের সচেতন করা উচিত, অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।
অপহরণের বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও তৎপর হওয়া উচিত। অনেক অপরাধী ধরা পড়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কী হয় কোনও খরব থাকে না। অপহরণের শাস্তিটাই-বা কী? আমরা কয়জন জানি? শাস্তির বিধান না জানলে মানুষ কি ভয় পাবে? কিন্তু সেটি গেল ভিন্ন একটি দিক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তারা তাদের কর্মতৎপরতা সব সময় চালিয়ে যাবে, কিন্তু আমাকে যে জিনিসটি খুবই উৎকণ্ঠিত করেছে; সেটি হল বাংলাদেশে শিশু অপহরণ, নারী অপহরণ থেকে শুরু করে পূর্ণ বয়স্ক মানুষদের অপহরণ করার হার আশংকাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। আর কোনও একটি কারণে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা হয়েছে হয়ে উঠেছে অপহরণকারীদের স্বর্গরাজ্য। এ বিষয়ে সমাজ সচেতন মানুষদের অবশ্যই ভাবতে হবে, কেন এই বিশেষ অঞ্চলটিতে ও এর আশেপাশের জেলাগুলিতে এই অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে।
ময়মনসিংহ জেলাকে কেন্দ্র করে অপহরণের কয়েকটি লিংক দেয়া হল। যা দেখে কপালে অবশ্যই চিন্তার ভাঁজ পড়বে।
ভালুকায় পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে গেছে এক কলেজ ছাত্রকে
ভালুকায় কলেজ ছাত্রকে অপহরণের চেষ্টা
ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্র খুন,আটক-১ : পিস্তলসহ ১ যুবক আটক
শিক্ষার্থীরাই মুক্তিপণ আদায়ে শিক্ষার্থীকে অপহরণ করছে
ফুলবাড়ীয়ায় কলেজ ছাত্র অপহরণ ২ অপহরণকারীকে গণধোলাই
সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্র অপহরণের দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার
ময়মনসিংহে কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ ॥ পাচারের আশঙ্কা পরিবারের
ময়মনসিংহ থেকে অপহৃত কলেজছাত্রী ৮ দিন পর উদ্ধার
দুই অপহরণকারীকে ধরিয়ে দিল কলেজ ছাত্র, শিশু উদ্ধার
দেখা যাচ্ছে ছাত্ররাও ইদানীং অপহরণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। কিছু টাকার জন্য, দামি মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের জন্য তারা সহপাঠী বা জুনিয়র ছাত্রদের অপহরণ করতে দ্বিধা করছে না। একে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। এখানে পরিবারের, অভিভাবকদের, সমাজ সচেতন মানুষদের কোথাও না কোথাও অবহেলা রয়েছে। শুধু অপহরণই নয়— ময়মনসিংহ অঞ্চলটা চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জুয়াখেলা, যৌন-ব্যবসা সবকিছুতেই একটা পচন ধরছে।
সন্ধ্যার পরে পথচারী নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারবে কি না, তার কোন ভরসা নেই। যারা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা তারা অতটা ভুক্তভোগী নয়। কিন্তু যাদের মুখ একটু অপরিচিত তারাই সাধারণত ছিনতাইকারীদের শিকারে পরিণত হয়। মোটকথা ময়মনসিংহ অঞ্চলটি এক জঘন্য অরাজক জেলায় পরিণত হয়েছে। অথচ এই ময়মনসিংহবাসী এক সময় যথেষ্ট প্রগতিশীল, সংস্কৃতিমান, সমাজ সচেতন হিসেবে পরিচিত ছিল। এখনও আছে তবে কিছু কুলাঙ্গারের কারণে সব নষ্ট হতে বসেছে। আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই—জাল টাকার ছড়াছড়ি মার্কেটে, প্রধানত কিশোরগঞ্জে। আমার লোকজন যখন ওখানটায় মাল ডেলিভারিতে যেত আতঙ্কে থাকতাম—না-জানি আজ কয়টা জাল নোট নিয়ে আসে! কেন শিল্প-সংস্কৃতিতে অগ্রসর শিক্ষানগরী বলে খ্যাত এই শহরটি এবং আশেপাশের এলাকা দিন দিন ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে— এ বিষয়ে সবাইকে গুরুত্ব-সহকারে চিন্তা করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১১:১৬