somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার মহামারিতে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সবাইকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর নামাজে জানাজায় লাখ মানুষের সমাগম ঘটল! ফল স্বরূপ ওসি সাহেব পরে এ এস পি সাহেবকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। প্রশাসন মৃত্যুর পরেই ১৪৪ ধারা জারি করতে পারত, আরও কঠোর হতে পারত। প্রশাসনের দোষ অনেক আছে, সেসব অন্য দিন বলা যাবে।


আমরা সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করব, রাস্তায় আড্ডাবাজী করব—চোর-পুলিশ খেলব—তার জন্য পুলিশকে করোনার ঝুঁকি নিয়ে, পরিবার দূরে ঢেলে দিয়ে আমাদের পেছনে ছুটতে হবে! আমাদের নিজের জীবনের মায়া নেই, জীবনের দাম নেই, পরিবার রক্ষার ভয় নেই তাই কোনও দায়িত্বও নেই। আমাকে ভাল থাকার জন্য কেন পুলিশ লাগবে; আমরা কি সব অপরাধপ্রবণ নাগরিক?
সারা বিশ্বে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে, তারপরও কেন আমাদের হুস হচ্ছে না! অনেকেই বলা শুরু করবেন—আরও আগেই সরকারের কঠোর হওয়া উচিত ছিল। ভাল—এখনই-বা তার ফল কী? আমরা সবাই বোতল খাওয়া শিশু!




আমাদের দেশে ধর্ম যেখানে জীবনের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে, সেখানে অনেক কিছুই ভেবে-চিন্তে করতে হয়। মসজিদের জামাত বা অন্য ধর্মালয়ের প্রার্থনা-সভার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে সরকার সময় নিয়েছে, অন্য দেশের নির্দেশনা আমলে নিয়েছে।
সরকার যখন ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মত-বিনিময় করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল তখন সেটা হয়ে গেল সরকারি সিদ্ধান্ত। আমাদের মসজিদগুলো থেকে মাইকে সরকারি নির্দেশনা জানিয়ে দিয়েই তারা খালাস। পুরো ব্যাপারটাকে সরকারের ঘারে চাপিয়ে দেয়া হল। সৌদি আরব বা মিশরের মুফতিগণ কী ফতোয়া দিয়েছেন, তা কি মসজিদের মাইকে প্রচার করা যেত না? দেশের নানা জায়গাতে সরকারি নির্দেশনা মতো না চলায় মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে মারামারি হয়েছে। এমন কি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মসজিদে নামাজ পড়া নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছে। ছোঁয়াচে রোগ বিষয়ে ধর্মীয় বিধান কী বলে, ‘যদি তোমরা শুনতে পাও যে, কোনও জনপদে প্লেগ বা অনুরূপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা তথায় গমন করবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছ তথায় তার প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না। (বুখারী, আস-সহীহ ৫/২১৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৩৮, ১৭৩৯)



হাদিসটির বাণী আমেরিকার রাস্তায় শোভা পাচ্ছে। বিলবোর্ডগুলো স্থাপন করা হয়েছে শিকাগোর ওহারে বিমানবন্দরের সন্নিকটে।
মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবেরা কি এই কথাগুলো আজানের আগে পরে মাইকে প্রচার করেন? এদের কোনও দায়িত্ব নেই, সব সরকার, পুলিশ, ডাক্তার, সাংবাদিকের?


দেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরাও রয়েছেন করোনা ঝুঁকির মধ্যে। মসজিদে জনসমাগম বেশি হলে ঝুঁকিও বেড়ে যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের নিজেদের স্বার্থেই তো সবাইকে সতর্ক করা উচিত। কিন্তু তারা কি তা করছেন? বাস্তবতা হল আমাদের দেশে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের কথা সাধারণভাবে সবাই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু হাবভাব দেখে মনে হয় দেশকে করোনা মুক্ত করার দায়িত্ব সব সরকারের। আর পৃথিবীর সব ধর্মগুরুরা হয় সরকারর বিপক্ষে নয়ত নিঃশ্চুপ হয়ে আছেন (ব্যতিক্রম অল্প কিছু অবশ্যই আছেন।) এবং এ-ব্যাপারে উন্নত আর উন্নয়নশীল দেশের কোনও পার্থক্য নেই। ভারতে লকডাউনে গরুর শেষকৃত্যে শত শত মানুষের ঢল নামে।



যুক্তরাষ্ট্রে চার্চের বিশপ জেরাল্ড গ্লেন বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি করোনাভাইরাসের চেয়ে ঈশ্বর বেশি শক্তিশালী। আপনারা এটি লিখে রাখতে পারেন। করোনায় আক্রান্ত হবে না আমি। নিজেকে অপরিহার্য ঘোষণা করে গির্জাকে উন্মুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গ্লেন। তখন তিনি বলেছিলেন, আমি একজন ধর্মপ্রচারক। আমি ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলি।

গত ১১ এপ্রিল ভার্জিনিয়া চার্চের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, এক সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গ্লেন মারা গেছেন।



আর আমাদের দেশের ওয়াজি সাহেবদের একজন তো বাচ্চাদের কার্টুনের মতো স্বপ্নে দেখা করোনার ইন্টারভিউ প্রচার করেন, করোনা তাদের সাথে কথা বলে উহা নাকি মুসলমানদের ক্ষতি করবে না!



আমি নিজে ধর্ম বিষয়ে ব্লগ লেখি না—জানি কম—আমি গল্পের মানুষ। এই সামুতে অনেকেই আছেন যারা ধর্ম বিষয়ে অনেক জ্ঞান রাখেন। তারা বিশ্বের এই মহামারিতে মানুষকে নিরাপদে রাখতে ধর্মীয় বিধানগুলো আলোচনা করে মানুষকে সতর্ক করতে পারেন। কেননা কিছু মানুষ আছে যাদের আইন, বিজ্ঞান, যুক্তি, ভয় দেখিয়ে খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না। এখন ধর্মীয় ক্যাচাল বা গল্প-কবিতা লেখায় চেয়ে পাশের জনকে সৎপরামর্শ দেয়া নিশ্চয় বেশি দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×