somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন করে আমাদের মেয়েদের আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেব নাতো?

১০ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সম্ভবত দেশের আইনে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। মহামারির মতো সবখানে ধর্ষকদের থাবা ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু, বৃদ্ধ, তরুণী, গৃহিণী, প্রতিবন্ধী,বালক,কন্যা কিছুই বাদ যাচ্ছে না। ঘরের ভেতরেও কেউ নিরাপদ নয়। এমন এক পরিস্থিতিতে সবখান থেকে দাবি উঠেছে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার। হয়ত সরকারও তেমনটাই চিন্তা করা শুরু করেছে।
একজন ব্যক্তি ক্রোধান্বিত হয়ে অনেক কিছুই বলতে বা করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রকে নানাদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই আমরাই বড় অপরাধীদের ক্রসফায়ারে দেয়ার জন্য কত যুক্তি খাড়া করি, আবার আমরাই মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের পর পুরো পাল্টে যাই! আইন করে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করলে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাতেই সবাই এই আইনের সমালোচনা শুরু করবে।
নতুন আইনে ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু হলে আজকে যে মেয়েটি ভাগ্যের জেরে তনুর মতো না হয়ে জীবন নিয়ে বেঁচে আছে তার জীবনটাও হয়ে উঠতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা আজকে যে বা যারা ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়েই কেটে পড়ছে—নতুন আইন হলে সে ভাববে—কিছুক্ষণ পরেই ভুক্তভোগী থানা-পুলিশ করবে এবং তাতে তাদের ফাঁসি হবে। অতএব সে যদি মেয়েটিকে খুন করে তাহলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। এতে করে নারীদের জীবন বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি বিপদসংকুল হয়ে উঠতে পারে।
মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিতে আরও একটি খারাপ দৃষ্টান্ত পাকাপোক্ত হবে। এমনিতেই হাজার বছর ধরে সমাজ আমাদের শিখিয়েছে নারীর সবচেয়ে মূল্যবান হল তার সম্ভ্রম! তার শিক্ষা, সততা, মেধা, পরিশ্রম, পদমর্যাদা এসবের কোনই মূল্য নেই, নারীকে কেউ যৌননিপীড়ন করল তো সব শেষ। পুরুষদের মাঝে মাঝে উলঙ্গ করে নির্যাতন করার ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে চোখে পড়ে। এই ঘটনায় কিন্তু সে নিজে ভাবে না বা কেউ বলে না ভুক্তভোগী লোকটির সব শেষ, তার আর বেঁচে থেকে কী হবে। অপদস্থ হলেও পুরুষের মানবিক গুণাবলী নষ্ট হয় না, কিন্তু নারীর বেলায় সব শেষ! এটাই সমাজের মূল্যবোধ! সমাজ নারীর কোনও গুণাবলীকে স্বীকৃতি দিতে চায় না।
এই অপরাধ বেড়ে যাবার কারণ কী, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এসব আগাছা ছেঁটে ফেললে হবে না, যেন জন্মাতেই না পারে সেই পথে হাঁটতে হবে। যৌন নিপীড়ন একজন নারীর জন্য চূড়ান্ত অবমাননাকর তাতে কারও সন্দেহ নেই। কিন্তু নারী যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে যে কাজে তার কোনও দায় নেই তার জন্য সে কেন অনুশোচনা করে মরবে? মেয়েরা যেন বলতে না পারে “আমার সব শেষ—আমার আর বেঁচে থেকে কী হবে”। যার ফলাফল গলায় দড়ি! নারীদের এই বদ্ধমূল ধারণাটির বিলুপ্তি ঘটাতে হবে। কিন্তু এই ব্যাপারটি জোরালোভাবে কখনও প্রচারিত হতে দেখলাম না।
অপরাধীর শাস্তি দ্রুত হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কিছুটা হলেও শান্তি পায়। এতে করে সে তাড়াতাড়ি সহজ হবার সুযোগ পায়। শাস্তি যত কঠোর হবে তার প্রয়োগ করাটাও তত কঠিন হয়ে যাবে। ধর্ষণকারীকে মৃত্যুদণ্ডিত করে হয়ত কয়েদখানা পূর্ণ হবে কিন্তু শাস্তি কার্যকর করতে চলে যাবে অনেক সময়। এতে করে আবার মানুষ মনে করবে ধর্ষণ করলে কিছুই হয় না। ধর্ষণের শাস্তি যা আছে সেটুকুর প্রয়োগ যদি যথাযথ ও তরিত হত তাহলে বদমাশগুলা এতটা বাড়তে পারত না। কঠোর আইন করতে গিয়ে যেন আবার মামলা জালে পেঁচিয়ে না পড়ি।
আমার নিজস্ব অভিমত হল যারা ধর্ষণকাণ্ড ঘটায় তারা পিতা হবার অযোগ্য। এদের নপুংসক করে ছেড়ে দিলে যতদিন এরা বেঁচে থাকবে তাদের কৃতকর্মের ফল মুহূর্তে মুহূর্তে অনুভূত হবে। আশেপাশে যারা থাকবে তাকে দেখলেই ধর্ষণের পরিণাম বুঝতে শিখবে। অপরাধের মাত্রা বুঝে প্রয়োজনে কপালে বিশেষ উল্কি মেরে দেয়া যেতে পারে—তাতে রাষ্ট্রকে আর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রয়োজন পড়বে না—ধর্ষক নিজেই পৃথিবী থেকে পালানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠবে।

ছবিঃ গুগল থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×