somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীন কবিদের কাব্যপ্রতিভার সার্টিফিকেট : নিরুৎসাহী, বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ

১৫ ই জুন, ২০০৮ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীতে সমুদ্রের জল নিঃশেষ হয়ে গেলেও কবিদের কলমের কালি কখনো ফুরোবে না - এটা আমি বিশ্বাস করি। পুরো পৃথিবীটাই একটা কবিতা। আমরা বাস করছি সুন্দর এক ষড়ঋতুর দেশে। যেখানে ছয় রকমের আঙ্গিকে আমরা সাজিয়ে নিই জীবনকাব্য, প্রকৃতি নিজেকে গড়ে তোলে নিপুণভাবে। প্রকৃতির অপরূপ ছোঁয়ায় আমরা কবি হয়ে উঠি। ঠিক তেমনি, দুঃখ-কষ্ট, বিরহ-ব্যর্থতাও খাঁটি কবির জন্ম দেয়। কবিরা সাধারণ মানুষ না। সাধারণ মানুষেরা সবসময় সবকিছু দেখতে পারে না, এক ধরণের অন্ধতা গ্রাস করে রাখে তাদের। কিন্তু একজন কবির চোখ অনেক নিখুঁত, স্বচ্ছ হয়। সে কারণেই কবিরা আলাদা। কবিদের চিন্তা-ভাবনার সম্মিলিত প্রকাশ হলো - কবিতা। কবিতা একটি প্রাচীন শিল্প। কবিতা আদিম, শাশ্বত। কালের বিবর্তনে কবিতার বাঁকবদল হয়েছে। শূন্য থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, আধুনিক কবিতা পরিবর্তিত হয়েছে শূন্য দশকে এসে। বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার পৃথিবী এক প্রান্তে ঝুঁকিপূর্ণ, বিলাসী, সুখ সাচ্ছন্দে পরিপূর্ণ। অপরপ্রান্তে আমেরিকার আগ্রাসন, যুদ্ধ, রক্তপাত, ধর্ষণ প্রভৃতি জটিল মনস্তাত্ত্বিক কার্যকলাপে পূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অনেক বাঙালি কবির কবিতায় যুদ্ধের বিভীষিকার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো। আসলে কবিরা কালকে ধরে রাখতে পারেন। ঠিক যেমন একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী তাঁর ছবিতে পারিপার্শ্বিক দৃশ্যপটের স্থিরচিত্র ধরে রাখেন। একজন কবিও কাগজ-কলমে অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে কবিতা আঁকেন। যেহেতু আমি নিজে শূন্য দশকের, তাই এই দশকের সাহিত্য যোদ্ধাদের একটি বিশেষ ঘটনার আলোকে কিছু বলতে চেষ্টা করছি।

আমাদের দেশের সাহিত্য- প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি "সাহিত্য" বৃদ্ধদের শিল্প। আইবুড়ো সাহিত্যিকরাই কবিতা, উপন্যাস, নাটক - এসবের যোগ্য। কবিতা প্রসঙ্গেই বলা যাক। অনেক বিখ্যাত, বুজুর্গ কবি, কবিতাবোদ্ধা, কাব্য-সমালোচক আছেন এ দেশে। তাঁদের মধ্যে আছেন সনাতন মন-মানসিকতার কিছু কবিতাবোদ্ধা, কবি এবং সমালোচক। যাঁদের একমাত্র পবিত্র দায়িত্ব নবীন / তরুণ কবিদের দেখলেই এক গাদা উপদেশ দেয়া, যদিও বাঙালি মাত্রই উপদেশ দিতে ভালোবাসে ! আমরা নবীন / তরুণ কবি, বড়রা উপদেশ দিয়ে আমাদের সংশোধন করে দেবেন - ঠিক আছে। এক বয়সে বড়রাই তো শাসন করবেন শিশুদের ! কিন্তু আমি মনে করি, মাত্রাতিরিক্ত উপদেশ, অর্থহীন মনগড়া বাক্য - দুটোই ক্ষতিকর। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ( বিখ্যাত লিটলম্যাগের সম্পাদক) বললেন - তোমাকে তো চর্যাপদ থেকে শুরু করে সবই পড়তে হবে। তারপর লিখতে চেষ্টা করতে হবে। শব্দের পর শব্দ সাজালেই তো কবিতা হয় না ! উল্লেখ্য, যাঁর উদ্দেশ্যে কথাটি বলা হয়েছে সে নবীন কিন্তু তার কবিতাটি ছিলো চতুর্দশপদী এবং সেটা শব্দের পর শব্দ বসিয়েও তৈরী করা হয় নি। পরবর্তীতে একজন প্রকৃত কবি'র কাছে সেই লেখাটি প্রশংসিত হলো। আমার প্রশ্ন হলো - অনেক কবিই এদেশে জন্মেছেন যাঁরা প্রথমে কবিতা নিয়ে পড়াশোনা না করেই লিখেছেন। লিখতে লিখতে ছন্দ শিখেছেন, মাত্রা, অনুপ্রাস সবকিছু দিয়ে কবিতা লিখেছেন। গদ্যকবিতা আজকাল প্রায় সব কবিই লিখছেন। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মতো গদ্যকবিতারও ছন্দ আছে। সেটা সম্পর্কে আমার এবং আমি বিশ্বাস করি শূন্য দশকের অন্যান্য কবিদেরও সে জ্ঞান আছে। অক্ষরবৃত্তের এক বিশেষ রূপ অমিত্রাক্ষর অর্থাৎ "মিত্রভাবহীন অক্ষর" সহজ ভাষায় "অমিল"। আমরা শূন্যের কবিরা বাক্যের পর বাক্য বসিয়ে জটিল কিছু তৈরী করে কবিতা বলে দাবী করছি না। কবিতা লিখছি। কবিতা যে সবসময় নারীর উপমা, প্রেম, ফুল, ফল, নদী - এসব নিয়ে রচিত হবে সেটা ভাবাও তো ঠিক না। আগে টাইপ রাইটার ছিলো, তারপর এসেছে কম্পিউটার এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি ল্যাপটপ কম্পিউটার। লেখা-লেখির কাজে যেগুলো আমরা ব্যবহার করছি। কবিতার পরিবর্তনটাও তেমনি। এই পৃথিবী এখন অনেক বদলে গ্যাছে। এখন কার্বন মনোক্সাইড এর ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়, মানুষের অবক্ষয়ে বেঁচে থাকাটাও মিথ্যা হয়ে গিয়েছে ! এসব-ই তো উঠে আসবে কবিতায়। এখনকার কবিতা অনেক রূপকধর্মী। যতটা না স্পর্শ করা যায় তারচেয়ে বেশি অনুভব করা যায়। মানুষ নিজেই এখন চিনতে ভুল করে ছায়া। এ যুগের মানুষ ছদ্মবেশি। ধর্মের ছদ্মবেশ ধারণ করে এখানে খুন হচ্ছে মানুষ। এ যুগের মানুষ অন্ধকার মুখোশে ঢেকে রাখে সত্তা। তাই, কবিতাতেও প্রতিফলিত হয়েছে সেটা। রূপকধর্মী, বাস্তবধর্মী কবিতা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় কিছু বিখ্যাত ( ! ) সাহিত্যবোদ্ধারা নবীনদের উৎসাহিত করবার বদলে নিরুৎসাহিত করে চলেছেন। অথচ তাঁদের একটি উৎসাহ জীবন বদলে দিতে পারে একজন তরুণের। নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে কে-ই বা খারাপ শুনতে চায় ? একজন কবি কবিতা লিখেন না, জন্ম দেন। বিখ্যাত কবিদের কথাই ধরা যাক। তাঁদের কাছে কবিতা ছিলো অনেকটা প্রসববেদনার মতো। আমি মনে করি, নবীন / তরুণদের উৎসাহিত করা উচিত। তাঁদের কাঁধে চর্যাপদ থেকে শুরু করে আধুনিক কবিতার 'সিলেবাস' চাপিয়ে না দিয়ে তাঁদের মতো করেই লিখতে উৎসাহিত করা উচিত। ভুল করতে করতে মানুষ শিখে। নবীন কবিরাও শিখবেন। আমাদের বাংলাদেশ হলো সার্টিফিকেট এর দেশ। এই দেশে সার্টিফিকেট এর দাম বেশি। এখন কবিতার ক্ষেত্রেও যদি কিছু অবুঝ প্রবীণ 'সার্টিফিকেট' খুঁজে বেড়ান তাহলে তো সমস্যা !
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×