পৃথিবীতে সমুদ্রের জল নিঃশেষ হয়ে গেলেও কবিদের কলমের কালি কখনো ফুরোবে না - এটা আমি বিশ্বাস করি। পুরো পৃথিবীটাই একটা কবিতা। আমরা বাস করছি সুন্দর এক ষড়ঋতুর দেশে। যেখানে ছয় রকমের আঙ্গিকে আমরা সাজিয়ে নিই জীবনকাব্য, প্রকৃতি নিজেকে গড়ে তোলে নিপুণভাবে। প্রকৃতির অপরূপ ছোঁয়ায় আমরা কবি হয়ে উঠি। ঠিক তেমনি, দুঃখ-কষ্ট, বিরহ-ব্যর্থতাও খাঁটি কবির জন্ম দেয়। কবিরা সাধারণ মানুষ না। সাধারণ মানুষেরা সবসময় সবকিছু দেখতে পারে না, এক ধরণের অন্ধতা গ্রাস করে রাখে তাদের। কিন্তু একজন কবির চোখ অনেক নিখুঁত, স্বচ্ছ হয়। সে কারণেই কবিরা আলাদা। কবিদের চিন্তা-ভাবনার সম্মিলিত প্রকাশ হলো - কবিতা। কবিতা একটি প্রাচীন শিল্প। কবিতা আদিম, শাশ্বত। কালের বিবর্তনে কবিতার বাঁকবদল হয়েছে। শূন্য থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, আধুনিক কবিতা পরিবর্তিত হয়েছে শূন্য দশকে এসে। বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার পৃথিবী এক প্রান্তে ঝুঁকিপূর্ণ, বিলাসী, সুখ সাচ্ছন্দে পরিপূর্ণ। অপরপ্রান্তে আমেরিকার আগ্রাসন, যুদ্ধ, রক্তপাত, ধর্ষণ প্রভৃতি জটিল মনস্তাত্ত্বিক কার্যকলাপে পূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অনেক বাঙালি কবির কবিতায় যুদ্ধের বিভীষিকার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো। আসলে কবিরা কালকে ধরে রাখতে পারেন। ঠিক যেমন একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী তাঁর ছবিতে পারিপার্শ্বিক দৃশ্যপটের স্থিরচিত্র ধরে রাখেন। একজন কবিও কাগজ-কলমে অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে কবিতা আঁকেন। যেহেতু আমি নিজে শূন্য দশকের, তাই এই দশকের সাহিত্য যোদ্ধাদের একটি বিশেষ ঘটনার আলোকে কিছু বলতে চেষ্টা করছি।
আমাদের দেশের সাহিত্য- প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি "সাহিত্য" বৃদ্ধদের শিল্প। আইবুড়ো সাহিত্যিকরাই কবিতা, উপন্যাস, নাটক - এসবের যোগ্য। কবিতা প্রসঙ্গেই বলা যাক। অনেক বিখ্যাত, বুজুর্গ কবি, কবিতাবোদ্ধা, কাব্য-সমালোচক আছেন এ দেশে। তাঁদের মধ্যে আছেন সনাতন মন-মানসিকতার কিছু কবিতাবোদ্ধা, কবি এবং সমালোচক। যাঁদের একমাত্র পবিত্র দায়িত্ব নবীন / তরুণ কবিদের দেখলেই এক গাদা উপদেশ দেয়া, যদিও বাঙালি মাত্রই উপদেশ দিতে ভালোবাসে ! আমরা নবীন / তরুণ কবি, বড়রা উপদেশ দিয়ে আমাদের সংশোধন করে দেবেন - ঠিক আছে। এক বয়সে বড়রাই তো শাসন করবেন শিশুদের ! কিন্তু আমি মনে করি, মাত্রাতিরিক্ত উপদেশ, অর্থহীন মনগড়া বাক্য - দুটোই ক্ষতিকর। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ( বিখ্যাত লিটলম্যাগের সম্পাদক) বললেন - তোমাকে তো চর্যাপদ থেকে শুরু করে সবই পড়তে হবে। তারপর লিখতে চেষ্টা করতে হবে। শব্দের পর শব্দ সাজালেই তো কবিতা হয় না ! উল্লেখ্য, যাঁর উদ্দেশ্যে কথাটি বলা হয়েছে সে নবীন কিন্তু তার কবিতাটি ছিলো চতুর্দশপদী এবং সেটা শব্দের পর শব্দ বসিয়েও তৈরী করা হয় নি। পরবর্তীতে একজন প্রকৃত কবি'র কাছে সেই লেখাটি প্রশংসিত হলো। আমার প্রশ্ন হলো - অনেক কবিই এদেশে জন্মেছেন যাঁরা প্রথমে কবিতা নিয়ে পড়াশোনা না করেই লিখেছেন। লিখতে লিখতে ছন্দ শিখেছেন, মাত্রা, অনুপ্রাস সবকিছু দিয়ে কবিতা লিখেছেন। গদ্যকবিতা আজকাল প্রায় সব কবিই লিখছেন। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মতো গদ্যকবিতারও ছন্দ আছে। সেটা সম্পর্কে আমার এবং আমি বিশ্বাস করি শূন্য দশকের অন্যান্য কবিদেরও সে জ্ঞান আছে। অক্ষরবৃত্তের এক বিশেষ রূপ অমিত্রাক্ষর অর্থাৎ "মিত্রভাবহীন অক্ষর" সহজ ভাষায় "অমিল"। আমরা শূন্যের কবিরা বাক্যের পর বাক্য বসিয়ে জটিল কিছু তৈরী করে কবিতা বলে দাবী করছি না। কবিতা লিখছি। কবিতা যে সবসময় নারীর উপমা, প্রেম, ফুল, ফল, নদী - এসব নিয়ে রচিত হবে সেটা ভাবাও তো ঠিক না। আগে টাইপ রাইটার ছিলো, তারপর এসেছে কম্পিউটার এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি ল্যাপটপ কম্পিউটার। লেখা-লেখির কাজে যেগুলো আমরা ব্যবহার করছি। কবিতার পরিবর্তনটাও তেমনি। এই পৃথিবী এখন অনেক বদলে গ্যাছে। এখন কার্বন মনোক্সাইড এর ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়, মানুষের অবক্ষয়ে বেঁচে থাকাটাও মিথ্যা হয়ে গিয়েছে ! এসব-ই তো উঠে আসবে কবিতায়। এখনকার কবিতা অনেক রূপকধর্মী। যতটা না স্পর্শ করা যায় তারচেয়ে বেশি অনুভব করা যায়। মানুষ নিজেই এখন চিনতে ভুল করে ছায়া। এ যুগের মানুষ ছদ্মবেশি। ধর্মের ছদ্মবেশ ধারণ করে এখানে খুন হচ্ছে মানুষ। এ যুগের মানুষ অন্ধকার মুখোশে ঢেকে রাখে সত্তা। তাই, কবিতাতেও প্রতিফলিত হয়েছে সেটা। রূপকধর্মী, বাস্তবধর্মী কবিতা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় কিছু বিখ্যাত ( ! ) সাহিত্যবোদ্ধারা নবীনদের উৎসাহিত করবার বদলে নিরুৎসাহিত করে চলেছেন। অথচ তাঁদের একটি উৎসাহ জীবন বদলে দিতে পারে একজন তরুণের। নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে কে-ই বা খারাপ শুনতে চায় ? একজন কবি কবিতা লিখেন না, জন্ম দেন। বিখ্যাত কবিদের কথাই ধরা যাক। তাঁদের কাছে কবিতা ছিলো অনেকটা প্রসববেদনার মতো। আমি মনে করি, নবীন / তরুণদের উৎসাহিত করা উচিত। তাঁদের কাঁধে চর্যাপদ থেকে শুরু করে আধুনিক কবিতার 'সিলেবাস' চাপিয়ে না দিয়ে তাঁদের মতো করেই লিখতে উৎসাহিত করা উচিত। ভুল করতে করতে মানুষ শিখে। নবীন কবিরাও শিখবেন। আমাদের বাংলাদেশ হলো সার্টিফিকেট এর দেশ। এই দেশে সার্টিফিকেট এর দাম বেশি। এখন কবিতার ক্ষেত্রেও যদি কিছু অবুঝ প্রবীণ 'সার্টিফিকেট' খুঁজে বেড়ান তাহলে তো সমস্যা !
নবীন কবিদের কাব্যপ্রতিভার সার্টিফিকেট : নিরুৎসাহী, বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।