গণটিকা নিয়ে বিশৃঙ্খলা, মারামারি
গণটিকায় ব্যাপক সাড়া মিললেও অনেকেই টিকা পাননি৷ কেউ কেউ দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি৷ লম্বা লাইন থাকতেই টিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ মারামারির খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ আর টিকা কেন্দ্রগুলোতো মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি৷
ঢাকায় টিকাকেন্দ্র সাতটি। প্রবাসী কর্মীদের টিকাদানের জন্য ঢাকায় সাতটি কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল৷
ছবিঃ গণটিকা কার্যক্রম শুরুর দিন ঢাকার কেরাণীগঞ্জে একটি কেন্দ্রের বাইরে টিকার জন্য অপেক্ষায় মানুষ। কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
টিকা কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, প্রতিদিনের জন্য তাদের ৩০০ টিকা বরাদ্দ৷ এর বাইরে তারা দিতে পারেন না৷ কিন্তু বরাদ্দের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন৷
ভোলাসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় ভ্যাকসিন নিয়ে হাতাহাতি ও উত্তেজনার পরিস্থিতি পাওয়া গেছে৷ ভোলায় স্বেচ্ছাসেবীরা হামলার শিকার হয়েছেন৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল ৭ আগস্ট দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায়, ৮ ও ৯ আগস্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে এবং ৭ থেকে ৯ আগস্ট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি চলবে৷ দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮ ও ৯ আগস্ট এবং ১০ থেকে ১২ আগস্ট রেহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৫ বছর বয়সিদের টিকা দেয়া হবে৷ কিন্তু বাস্তবে এই শিডিউল রক্ষা করা যায়নি৷
গনটিকার এই ক্যাম্পেইনে মোট ৩৮ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার কথা ছিল৷ সর্বনিম্ন ২৫ বছর বয়সিরা টিকা পাবেন৷ কিন্তু ২৫+ বছর বয়সীরা অগ্রাধিকার পাচ্ছে না, পাচ্ছে ৫০+ বয়সীরা।
গণটিকার কাজে চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত আছেন৷ তারা প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩০০ জনকে টিকা দিবেন-এটাই লক্ষ্য ছিল৷ ফলে যারা টিকা দিতে আসছেন তাদের সবাইকে কোনোভাবেই টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি৷
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সত্য স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সবাইকে দেয়ার মতো টিকা সরকারের হাতে তো নাই৷ আর পাইপলাইনে যা আছে তা দিয়েও হবে না৷ সবাইকে টিকা দিতে হলে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদন করতে হবে৷ কিন্তু ব্যবস্থাপনার সংকট দেখা যাচেছ৷’’
বাংলাদেশে চলমান লকডাউন শেষ হয়েছে ১০ আগস্ট৷ এরপর পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে সব কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিবহণ শ্রমিকসহ আরো বিভিন্ন সেক্টরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আরো যাদের জনসম্পৃক্ত কাজে বাইরে আসতে হয় তাদের আগে টিকা দেয়া হচ্ছে৷ আর সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে৷’’
এদিকে করোনায় সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে কিন্তু সন্তোষজনক নয়৷ এই হার এখন ২৪.৫২ ভাগ।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগঃ
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিতে এসেছেন এমন একাধিক প্রবাসী অভিযোগ করেন, দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জনপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকা ঘুসের বিনিময়ে সিরিয়ালের বাইরের লোকজনকে টিকাকেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছেন৷ অপরদিকে হাসপাতালটির সুপারভাইজার আব্দুল মান্নান বিশ্বাস বলেন, প্রবাসীরা নিয়ম মানছেন না, বিশৃঙ্খলা করছেন৷ সবাই আগে যেতে চাইছেন বিধায়ই এত বড় সিরিয়াল তৈরি হয়েছে৷
কোন কেন্দ্রে কোন টিকা?
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে প্রবাসীদের বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে দেওয়া হচ্ছে বায়োনটেক-ফাইজার, অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা এবং সিনোফার্মের টিকা৷ টিকাদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিভিন্ন টিকা দেওয়া হচ্ছে৷
নারী, বয়স্কদের সিরিয়ালের প্রয়োজন নেই
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে পুরুষদের একাধিক লম্বা লাইন থাকলেও নারীদের কোন লাইন ছিল না৷ যেহেতু নারী এবং বয়স্ক প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম, তাই তাদের জন্য আলাদা লাইন করা হয়নি৷ তারা সরাসরি টিকা দিয়ে চলে যেতে পারছেন৷
তিনি সুচ ফুটালেন, টিকা দিলেন না
টাঙ্গাইলে এক সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য সিরিঞ্জের সুচ ফুটিয়েও টিকার ওষুধ শরীরে না ঢোকানোর যে অভিযোগ উঠেছিল তার সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ৷
আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনাঃ
আগামী মাস থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের টিকাদান শুরু হতে পারে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় এই কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ বাংলাদেশে বসবাসরত দশ লাখের উপরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টিকা দেওয়া নিয়ে এতদিন ধরে অনিশ্চয়তা ছিল৷ গত জুনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব কিছু জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হয়৷ জাতিসংঘ ভ্যাকসিন দিলে রোহিঙ্গাদের ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের৷’’
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৯:৫৯