somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

*কালজয়ী*
গবেষক, পাঠক ও লেখক -- Reader, Thinker And Writer। কালজয়ী- কালের অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা Time। কালজয়ী অর্থ কোন নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর বিজয়। বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী চিন্তার বিজয়।

হাজার বছরের বিস্ময় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম ও কবি, চিন্তক, বিপ্লবীদের প্রেরণাঃ ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ)

২১ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবী মুহাম্মদের নিকট জিবরাইলের মাধ্যমে নাযিলকৃত আল-কোরআনে ওহী এসেছে, “হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে।" [O Prophet, indeed We have sent you as a witness and a bringer of good tidings and a warner. And one who invites to Allah, by His permission, and an illuminating lamp.][সূরা আহযাব আয়াত ৪৫-৪৬]। ওহীর বানী, “আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। [And We have not sent you, [O Muhammad], except as a mercy to the worlds.] [সূরা আম্বিয়া : ১০৭]।



অভিধানে ঈদ বলতে বুঝায়, ‘কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়ার দিন বা স্মৃতিচারণের দিবসই ঈদ। ঈদকে এজন্যই নব আনন্দ উদ্দীপনার সাথে সংযুক্ত করা হয়।’ আর ফারসিতে মিলাদ অর্থ জন্ম সময়

পিতৃবিয়োগ হওয়া নাতিকে প্রথমবারের মতো কোলে নিয়ে মক্কার স্বনামধন্য গোত্রপতি আবদুল মুত্তালিব পুত্রবধূ আমেনাকে জিজ্ঞেস করলেন : ‘এ চাঁদের নাম কী রাখা যায়?’ জবাবে মা আমেনা বললেন : “স্বপ্নে আমাকে কে যেন বলেছে, শিশুর নাম হবে ‘মুহাম্মদ’। দাদা এ নাম শুনে খুশি হয়ে এ নামেই ডাকতে লাগলেন। যার অর্থ চরম প্রশংসিত। অভিধানের দৃষ্টিতে মুহাম্মাদ অর্থ যার প্রশংসা অতীতে চলেছে, বর্তমানে চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। তিনিই হলেন মুহাম্মাদ যার মাঝে প্রশংসনীয় চরিত্রের সমাহার ঘটেছে।’

কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও চিন্তকদের কাছে মুহাম্মদের পরিচয়ঃ

খোলাফায়ে রাশেদিনের চতুর্থ খলিফা (নবী মুহাম্মদের জামাতা ও আহলে বাইত) হযরত আলী (রা.) বিশেষভাবে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন :
“নবুওয়াত বৃক্ষের মাঝে তিনি বাছাইকৃত আলোকের আধার, সম্মানের সর্বোচ্চ চূড়ায় অধিষ্ঠিত, বাতহা তথা মক্কা মুয়াজ্জমার মূলকেন্দ্র, অন্ধকারের বাতি, হেকমত ও প্রজ্ঞার উৎস-প্রস্রবণ।’

নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে ফারসি ভাষার বিখ্যাত কবি শেখ সাদী (রহ.) লিখেছেন :

‘মানবতার শীর্ষে তুমি হলে উপনীত,
রূপের ছটায় দূর করলে আঁধার ছিল যত-
সকল গুণের সমাবেশে চরিত্রে মহান,
তুমি ও তোমার বংশ পরে হাজারো সালাম।’


৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল সুখময় বসন্তকালে যিনি আগমন করেছিলেন তিনিই হলেন মুহাম্মদ (সঃ) যাকে রাহমাতুল্লিল আলামীন ডাকা হয়। ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সঃ) তার শৈশবে আরবের ‘হারবুল ফিজার’ বা অন্যায় যুদ্ধবিগ্রহের বিরুদ্ধে 'হিলফুল ফুজুল' নামে শান্তি সংঘ গঠন করেন ও রক্তপাত বন্ধের উদ্যোগ নেন; কন্যা শিশু জীবিত দাফন করার কু-প্রথা বন্ধ করেন। বিশ্ববিখ্যাত হাদীস বিশারদ মোল্লা আলী কারীর ভাষায় :

“তিনি ছিলেন বসন্তকাল, যার আগমনে যেমন আগমন করেছে প্রাকৃতিক বসন্ত, তেমনি নৈতিকতা ও আদর্শের ভুবনেও আগমন করেছে নববসন্তের জোয়ার। তিনি ছিলেন জাগতিক বসন্তের চেয়ে লাখ-কোটি গুণ অধিক আলোদানকারী নূর”।

বাংলাদেশের মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদ লিখেছেন :

“হারা সম্বিত ফিরে দিতে বুকে তুমি
আনো প্রিয় আবহায়াত
জানি সিরাজাম মুনীরা তোমার রশ্মিতে
জাগে কোটি প্রভাত।”


বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি আল মাহমুদ লিখেছেন :

“এই নামে ফোটে হৃদয়ে গোলাপ কলি
যেন অদৃশ্য গন্ধে মাতাল মন,
যেন ঘনঘোর আঁধারে আলোর কলি
অকুল পাথারে আল্লার আয়োজন।”


উপমহাদেশের (বাংলাদেশ-ভারত) বিদ্রোহী কবি (বাংলাদেশের জাতীয় কবি) কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:

“দেখ আমেনা মায়ের কোলে
দোলে শিশু ইসলাম দোলে
কচি মুখে শাহাদাতের
বাণী সে শুনায়।”


ব্রিটিশ ভারতীয় ইসলামী কবি (পাকিস্তানের জাতীয় কবি) ও দার্শনিক আল্লামা গাজী মুহাম্মাদ ইকবাল লিখেছেন,

“মুহাম্মদ (সঃ) হচ্ছেন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সত্তা। তিনি অতুলনীয় চরিত্রের অধিকারী; স্থান এবং কালের দ্বারা সীমাবদ্ধ না। যার কাছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাযিল হয়েছে যা সমগ্র সৃষ্টিকে অন্তর্ভুক্ত করে। তিনি সীমাহীন অন্ধতা, স্বেচ্ছাচার আর খেয়ালের বশবর্তী নন বরং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আধার।”

সাইয়েদ আহমেদ বেরেলভির জীবন ও কর্মঃ ভারতীয় উপমহাদেশের এক বিপ্লবীর কাছে মুহাম্মদের পরিচয়

১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের অযোধ্যায় জন্ম নেওয়া সাইয়েদ আহমাদ শহীদ (বেরেলভি) ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী (আঃ)-এর বংশধারা থেকে এসেছেন বলে গন্য করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পরিচালিত স্বাধীনতা সঙগ্রামের প্রথম সংঘবদ্ধ প্রয়াস ছিল সাইয়েদ আহমাদের জিহাদ আন্দোলন’। তিনি ছিলেন একজন দৃঢ়চিত্ত বিপ্লবী পুরুষ এবং তার নেতৃত্বাধীন ছিল একদল কর্মী বাহিনী। তাকে ভারতিয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে গন্য করা হয়।

সাইয়েদ আহমাদ শহীদের "নবী মুহাম্মদের পথ" (‘তরীকায়ে মুহাম্মাদিয়া’) আন্দোলনের হাত ধরে উপমহাদেশের শিরক-বিদ‘আতী জঞ্জালের অন্ধকার দূর করে বিপ্লবের জন্য প্রচেষ্টা গ্রহন করতে দেখা যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজ বণিকরা এ অঞ্চলে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ শাসনের সুচনা করে। স্থানীয় অধিবাসীরা ব্রিটিশদের জোরজবরদস্তি মূলক আধিপত্যবাদী শাসন মেনে নিতে বাধ্য হয়। একদিকে এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্যদিকে স্বয়ং মুসলিম সমাজের ইসলামী জীবনাচরণে দীর্ঘকাল যাবৎ বিপুল অনৈসলামিক আক্বীদা-বিশ্বাসের শক্ত অবস্থান ছিল। ফলে এ অঞ্চলে এক সর্বব্যাপী সংস্কারমূলক বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখেন সাইয়েদ আহমেদ শাহ। সেই সম্ভাবনাময় বিপ্লবের আশাই যেন উনিশ শতকের ঊষালগ্নে সাইয়েদ আহমাদ শহীদের "নবী মুহাম্মদের পথ" (‘তরীকায়ে মুহাম্মাদিয়া’) আন্দোলন যার মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আহলে বাইতের অনুসরণ ও শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে একনিষ্ঠ উদ্যোগ।

সৈয়দ আহমদ শহীদের এই আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পর্যায়ের আন্দোলন। সৈয়দ আহমদ শহীদ ব্রেলভী (রহঃ) এর আন্দোলন সম্পর্কে ঐতিহাসিক শান্তিময় রায় লিখেছেন তাঁর Freedom Movement and Indian Muslim গ্রন্থে। তিনি এই আন্দোলনকে “Most remarkable anti-British of 19th century panic of British, chief headache of British antherities” প্রভৃতি নামে অভিহিত করেছেন।

ব্রিটিশ-স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম উইলসন হান্টার সৈয়দ আহমদ শহীদ ব্রেলভীকে ভারতের ওহাবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন তার “Indian Musalman” বইতে।

এই প্রসঙ্গে উইলিয়াম হান্টার লিখেছেন,

“তাঁর [সৈয়দ আহমদ শহীদ ব্রেলভী (রহঃ)] শিক্ষার সঙ্গে বেদুইন মাযহাবের (ওহাবীদের) শিক্ষার সমতা থাকার জন্য মক্কায় থাকাকালে সৈয়দ আহমদ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ওই বেদুইন মাযহাবের হাতেই এই পবিত্র শহরটি কিছুকাল আগে এতো দুর্গতি সহ্য করেছিল। এজন্য সেখানকার মুফতী সাহেব প্রকাশ্যে সৈয়দ আহমদকে অপমান করেন ও শহর থেকে বের করে দেন। এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এই হলো যে, অতঃপর তিনি ভারতে কেবল ধর্মিয়া স্বাপ্নিক ও পৌত্তলিক কুপ্রথাগুলির সংস্কারক হিসাবেই ফিরে এলেন না, তিনি ফিরে এলেন আব্দুল ওহাবের এক গোঁড়া শাগরিদ হিসাবে। তাঁর স্বভাবে যা কিছু স্বপ্নালুতা ছিল তা দূর হয়ে এবার রুপ নিল উগ্র উন্মত্ততার।”

ব্রিটিশ গোয়েন্দার বক্তব্যঃ “ওহাবী আন্দোলনের কুখ্যাত মৌলবী ইসমাইল দেহলবী, সে সিপাহী বিদ্রোহের সময় নিজের বাড়ি থেকে ফেরার হয়েছিল, আর সে মুজাহিদীন বসতি গড়ে তুলেছিল, অত্যন্ত এবং উগ্রপন্থি ছিল।”

ইসলামের ইতিহাস গবেষক ও লেখক মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম তার গবেষণায় দেখান যে এটা ব্রিটিশদের অপপ্রচার আর Divide and Rule policy নীতি থেকে উৎসারিত একটি চক্রান্ত। তিনি জাস্টিস আব্দুল মওদুদ, ঐতিহাসিক শান্তিময় রায়, ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার, এম. মুনিরুজ্জামান এর দেওয়া তথ্যও পর্যালোচনা করে দেখেন এটা ব্রিটিশদের অপপ্রচার।

ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন,

“ভারতবর্ষ যে অনুরুপ (ওহাবী আন্দোলন) হয়, তাহার সহিত ওহাবীদের কোন সম্বন্ধ ছিল, এমন কোন প্রমাণ নাই। স্মরণ রাখিতে হইবে যে, রায়বেরেলীর সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী যখন ভারতে এ আন্দোলন প্রবর্তন করেন, তখনও তিনি আরব দেশে যান নাই । ইহার সহিত ওহাবী মতের কোন সম্বন্ধ নাই। ধর্মমূলক হইলেও ইহার সহিত বিনষ্ট মুসলমান রাজশক্তি উদ্ধারের আশা – আকাঙ্খা ছিল না, তাহা বলা যায় না। সুতরাং এই আন্দোলনকে এক হিসাবে বৃটিশ রাজত্বে মুসলমানদের প্রথম মুক্তি – সংগ্রাম বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে।” (History of Freedom Movement. iii)

এম. মুনিরুজ্জামান লিখেছেন,

“আরবের আব্দুল ওহাব প্রবর্তিত সংস্কার আন্দোলনের সাদৃশ্য থাকায় বৃটিশরা এবং এ আন্দোলনের বিরোধীরা এই ‘ওহাবী’ লেবেল এঁটে এ আন্দোলনকে জনসমক্ষে হেয় করতে চেয়েছিলেন।” (উপমহাদেশের মুসলমান, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬২)

সাইয়েদ আহমেদ শাহ লক্ষ্য করেছেন, সুবিধাবাদী হিন্দুদের একটা অংশ মোঘল ও সুলতানি আমলে যেমন আরবী, ফারসী ভাষা রপ্ত করে পায়জামা, পাঞ্জাবী, সেরওয়ানী পরে মুসলমান শাসনকালে মুসলমানদের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখেছিলেন অনুরুপ ব্রিটিশ শাসনকালে তাঁরা ইংরেজী ভাষা আয়ত্ব করে কোট-টাই-পেন্টালুন ধরতে দ্বিধাবোধ করেন নি। তাঁরা ঠিক সময়ের সাথে নিজেদেরকে পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন। উচ্চবর্ণের অনেক হিন্দুই চেয়েছিলেন মুসলমানদের পরিবর্তে ব্রিটিশরাই রাজা হোক এবং তাঁরা ব্রিটিশের জয়গান গেয়েছিলেন।

যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন,

“ইংরাজী রাজ্যে প্রজা সুখী হইবে ও নিষ্কন্টক ধর্মাচরণ করিবে।”

তিনি আরও লিখেন,

“মুসলমানদের পর ইংরেজ রাজা হইল, হিন্দু প্রজা তাহাতে কথা কহিল না। বরং হিন্দুরাই ডাকিয়া রাজ্যে বসাইল । হিন্দু সিপাহী ইংরাজের হইয়া লড়িল । হিন্দুরা রাজ্য জয় করিয়া ইংরাজকে দিল। কেননা হিন্দুর ইংরাজের উপর ভিন্নজাতীয় বলিয়া কোন দ্বেষ নাই; আজিও ইংরাজের অধীন ভারতবর্ষে (হিন্দু) অত্যন্ত প্রভূভক্ত।”

সৈয়দ আহমদ চেয়েছিলেন তাঁর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পাঞ্জাবের শিখ শাসক রঞ্জিত সিংহ সহযোগিতা করুক। কিন্তু রঞ্জিত সিং তা না করে ইংরেজদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হন। শুধু তাই নয় রঞ্জিত সিং সরাসরি মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন এবং মুসলমানদের জান মালের শত্রু হয়ে যান । সৈয়দ আহমদ সাহেব একবার সীমান্তের পঞ্জতরে উলামা ও পাঠানদের সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন,

“আমি খেয়াল করেছিলুম, হিন্দুস্তানে কোন নিরাপদ স্থানে জিহাদের প্রস্তুতি শুরু করব। কিন্তু বিরাট এই দেশে আমি কোন উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেলুম না। কত লোক প্রস্তাব দিয়েছে, এই দেশে জিহাদ করো। কিন্তু আমার মনঃপুত হয়নি। কেননা জিহাদ সুন্নত অনুসারে হওয়া চাই, অহেতুক হাঙ্গামা বাধানো উচিত নয়। তোমাদের দেশী ভাই উপস্থিত ছিল। ওরা প্রস্তাব দিল, ‘আমাদের দেশ এদিক দিয়ে খুবই উপযুক্ত। আপনি ঐখানে গিয়ে কোথাও কেন্দ্র গড়ে তুলুন; লক্ষাধিক মুসলমান জান – মাল দিয়ে আপনার সাহায্য করবে। বিশেষতঃ লাহোরের শাসনকর্তা রঞ্জিত সিংহ মুসলিমদেরকে অতিষ্ঠ করছে, কষ্ট দিচ্ছে, বেইজ্জত করছে। ওদের সেনাবাহিনী মসজিদে অগ্নিসংযোগ করছে, ফসল নষ্ট করছে। মাল – সামান ওরা লুটপাট করছে। নারী ও শিশুদের ধরে নিয়ে ওদের দেশ পাঞ্জাবে বেচে দিচ্ছে। মসজিদে আজানের অনুমতি নেই, মসজিদে ঘোড়া বাঁধছে। গরু জবেহ তো দুরের কথা, গরু জবেহর নাম শুনলে মুসলিমদের মেরে ফেলছে। আমি এসব কথা শুনে ভাবলুম, ওরা ঠিক বলছে। ভারত থেকে হিজরত করে ঐ দেশে অবস্থান করব, বেদ্বীনদের সঙ্গে জিহাদ করে যুলম – অত্যাচারের অবসান ঘটাব।”

বালাকোটের যুদ্ধে স্থানীয় মুসলিমদের একটা অংশ বিশ্বাসঘাতকতা করে। সৈয়দ আহমদ শহীদ ও শাহ ইসমাইল শহীদ যুদ্ধে বালাকোটের প্রান্তরে শহীদ হওয়ার পর তাঁর অনুসারীরা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার কার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ইনায়েত আলী ছিলেন বাংলাদেশে ও বিলায়েত আলী ছিলেন দাক্ষিণাত্য।

সব কথার সারকথা হচ্ছে, কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও বিপ্লবীদের কাছে মুহাম্মদ (সঃ) হচ্ছেন আদর্শ ও অনুকরণীয় পুরুষ। এমন মানুষের জন্মক্ষণ জগতের জন্য আনন্দনীয়। আহমেদ শাহ বেরেলভি নবী মুহাম্মদ (সঃ) ও তার আহলে বাইতের পথ অনুসরনের যেই সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা আমাদের দেশের ধর্মচর্চাকারিদের মধ্যে তেমন লক্ষ্য করা যায়না। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিপ্লবী মুসলমান। নবী মুহাম্মদের (সঃ) এর জন্মদিবসে এই বিপ্লবীকে স্মরণও করা হয় কিনা তাও আমি জানিনা।

This Writing adapted & researched from several sources:
Writing & Data Courtesy:

১। আল-কোরআন; সূরাঃ আল-আহযাব-আয়াতঃ ৪৫
২। আল-কোরআন; সূরাঃ আল-আহযাব-আয়াতঃ ৪৬
৩। গবেষক ডক্টর নিম হাকিম, “মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম ও সিরাতের মাহাত্ম্য”
৪। সিরাতে ইবনে হিশাম, নেহায়াতুল আরব
৫। নাহজুল বালাগা, খুতবা-১০৭
৬। মেরকাতুল মাফাতিহ
৭। সীরাতে সৈয়দ আহমদ শহীদ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪২৬/৪২৭)
৮। গবেষক ও লেখক মোঃ ফজলুর রহমান মিন্টু, “আল্লামা ইকবালের দর্শন ও সাহিত্য”
৯। গবেষক ও লেখক মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম, “ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলন”

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৪৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×