somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোকা মেয়ের ডায়রী.. .. ..৬.০৩.২০০৯

০৭ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিবছর বইমেলার সময়েই কয়েকজন মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে দেখা করতে চান আমার সাথে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমি বেচারী গাই-গুই করে ব্যাপারটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। অন্য কোনো সময়ে আগডুম-বাগডুম বলে এড়িয়ে যেতে পারলেও বইমেলার সময়ে ধরা আমাকে পড়তেই হয়। অনুরোধে শুধু ঢেঁকি না,জাহাজ শুদ্ধু গিলে বেচারী আমি হাঁসফাস করি প্রত্যেক বছর।
এই সকল কারণে অহংকারী হিসাবে দুর্ণামও কুড়িয়েছি যথেষ্ট। তিন বছর যাবত রহস্য পত্রিকায় লিখছি,এখন পর্যন্ত কখনও সেবা প্রকাশনীর অফিসে যাইনি কোনোদিন-এ কথা শুনে আমার এক বন্ধু আমাকে যাচ্ছেতাই বলে প্রায়ই। লেখক হিসাবে একদিন রহস্য পত্রিকার অফিসে যাবে-এটা নাকি তার জীবনের সবচাইতে বড় ফ্যান্টাসি গুলোর একটা। (এখানে একটা কথা না বললেই নয়-লেখালেখির ব্যপারে রহস্য পত্রিকার কতৃপক্ষের কাছে এবং জাগৃতি প্রকাশনীর দীপন ভাইয়ের কাছে আমি অসীম রকম কৃতজ্ঞ। কেননা ওনারা আমাকে আমি হিসাবেই বিবেচনা করেছেন সবসময়।)
বন্ধুর মুখে "অহংকারী", "দেমাগী" হিসাবে গালাগাল শুনতে শুনতে আমি ভাবি- আসল ঘটনা কে জানে??
আমি। এবং আমি।
আর আমার সাথে যাদের একবার মোলাকাতের দুর্ভাগ্য হয়েছে-সেই সব বেচারারা।
গত বছর বইমেলার ঘটনাই বলা যাক.. .. ..
নিজের বই যেসব স্টলে থাকে,পারত পক্ষে তাদের ত্রি সীমানা দিয়েও ঘেঁষি না আমি।(কেননা নিজেকে লেখক মনে হয় না আমার কোনো কালেই,পাঠক পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্য।) তানজিম নামে আমার এক মহা ব্যস্ত বন্ধু আছে-সে বইমেলায় যায় বছরে মাত্র একবার,আর সারা বছরের বই এক দিনে কেনে। গতবার আমি ছিলাম তার সেক্রেটারী এবং তল্পিবাহক।
সেক্রেটারী এই কারণে বই পছন্দ করছি আমি,সে কেবল টাকাটা দিচ্ছে। আবার এত বই কেনা হয়েছে যে সে একা কুলিয়ে উঠতে পারছে না,অগ্যতা আমাকেও নামতে হয়েছে তল্পিবাহকের ভূমিকায়।
কিনছি,ঘুরছি.. .. ..এবং ঘুরতে ঘুরতে জাগৃতির স্টলের সামনে। যাকে বলে একদম “পড়বি তো পড় বাঘের মুখে” অবস্থা। কেননা স্টলে তখন আমার এক পাঠক দাঁড়িয়ে এবং সেই মেয়েটি নাকি অনেকক্ষণ যাবতই আমার কথা জিজ্ঞেস করছেন।
আহারে!!! আমাকে দেখার পর সেই মেয়েটির চেহারার ভাব আমি কোনোদিন ভুলবো না।
বড়বড় চোখ দুটি ছিল বিস্ময়ে ঠাসা,চেহারায় বড়সড় “শক” এর আভাস। আমার বয়স তার চাইতে অনেক কম,নাকি আমার চেহারাটা “লেখকজেনিক” নয়-দুটির মাঝে কোনটা যে তাকে এত ব্যথিত করেছিল তা আজতক আমি বুঝতে পারিনি। তারওপর আমার ভয়াবহ হাতের লেখার অটোগ্রাফে বেচারীর সদ্য কেনা বইটার যে হাল হলো,এরপরে যে সে আমার লেখা আর কোনো দিন ছুঁয়েও দেখেনি-এটা শত ভাগ নিশ্চিত।
নায়ক হতে গেলে যেমন ফটোজেনিক হতে হয়,লেখক হতে গেলেও বোধহয় হতে হয় লেখকজেনিক। "সব বিক্রির এই যুগে গান গাইতে বা রাজনীতি করতে গেলেও চেহারা আর্কষণীয় না হলে ভাত নাই,আর লেখক তো লেখক!!!"-আমার এক নামীদামী লেখক বন্ধু বলেন এই কথা। ( অবশ্য সেই ভদ্রলোকের চেহারা মাশাল্লাহ লেখকজেনিক!!!)
.. .. ..এ বছরের মেলাতেও আমার সেই একই দশা। যে মানুষ গুলির সাথে আগ্রহ নিয়ে পরিচিত হয়েছি,পরিচিত হওয়া মাত্র আমার ব্যপারে তাদের সকল আগ্রহ ফুরিয়ে গেছে। আজকাল মনে হচ্ছে আমার চেহারার মাঝে কোথাও নিশ্চয়ই সমস্যা আছে কোনোরকম। লেখক দূরে থাক,আমাকে দেখে পাঠকও মনে হয় না কারও।
রায়হান নামে এক পাঠক তো ফেসবুকে আজ বলেই ফেললো আমাকে-"আপনার গল্প গুলো এত সুন্দর!! ভেবেছিলাম আপনি দেখতে আরও সুন্দর হবেন।"(ভাবতেছি সৌদি বোরকা পরিয়া একখান ফটোক তুলিয়া ফেসবুকে দিমু!!)
আরেক বান্ধবী তাসনিমের স্বামী নাকি আমার ব্যাপারে বলেছেন-"উনি রূমানা বৈশাখী??আমার বিশ্বাস হয় না!!.. .. ..শিওর তাহলে অন্য কেউ লিখে দেয়!!! এক দেখে তো মনে হচ্ছে একটা বইও পড়েনি কোনোদিন।"(চিন্তা নিসি বার্থ সার্টিফিকেট টা আইজ হইতে গলায় ঝুলায়া ঘুরুম!!!)
বছর তিনেক আগের কথা।আমার প্রথম বই দুটো সেবছর বইমেলায় বের হয়েছে,অনার্সে ভর্তি হয়েছি মাত্র। এক প্রকাশক(সঙ্গত কারণেই নাম বলছি না) আমার পান্ডুলিপি পড়ে ফোন করলেন প্রবল আগ্রহ নিয়ে। আমি তখন জন্ডিসের সামনে ধরাসায়ী,অগ্যতা ফোনে ফোনেই কাজের কথা-বার্তা মোটামুটি শেষ। বইটা কিভাবে বের হবে,প্রচ্ছদ কেমন হবে-ইত্যাদি ইত্যাদি সব তৈরি।
অবশেষে যখন সুস্থ হয়ে প্রকাশকের সাথে দেখা করতে গেলাম আমি, তারপর থেকে ভদ্রলোক কেমন যেন বদলে গেলেন। দেখা হবার আগের দিনও বইয়ের সব কিছু নিশ্চিত ছিল,চমৎকার একটা শব্দ ব্যবহার করে পান্ডুলিপির প্রশংসা করলেন। অথচ দেখা হবার পরের দিন ফোন করে জানালেন-আসলে "মেয়ে লেখকদের" বই বাজারে চলে না। উনাকেও তো ব্যবসা করে খেতে হয়,এত বড় রিস্ক তাই নিতে চাচ্ছেন না এই মুহূর্তে। তাছাড়া পান্ডুলিপি খুব দুর্বল.. .. ..ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরে অবশ্য আমি জেনেছিলাম-যে বন্ধু ওই প্রকাশকের কাছে নিয়ে গেছিলো,তার কাছেই জেনেছিলাম-প্রকাশক সাহেব নাকি আমার চেহারা দেখে ভরসা পান নাই।(এরপর থেকে কোনো প্রকাশকের কাছে আর পান্ডুলিপি পাঠানোর সাহসই হয় না আমার!!)
এখন আপনারাই বলেন-এত কিছুর পর আমার মত বোকাসোকা বালিকা যদি লেখালেখির ব্যর্থ চেষ্টাটা ছেড়ে হিমালয় বাসী হওয়ার কথা চিন্তা করে,তাহলে কি তাকে খুব বেশী দোষ দেয়াটা উচিত? তবে আমার কপালের যা অবস্থা দেখতে পাচ্ছি,তাতে হিমালয় পবর্তেও জায়গা পাবো কিনা সন্দেহ!!!
তবে যে যাই বলুক না কেন,অনুরোধের জাহাজ আর গিলছি না আমি। অন্তত এই জীবনে তো বিলকুল নয়। কি দরকার মানুষ গুলোকে আশাহত করে??
মাঝে মাঝে মানুষের চাইতে তার নাম বড় হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে অনেকটা সেরকমই হয়েছে-আমার কাল্পনিক ইমেজটা বোধহয় আমার চাইতেও বড় হয়ে গেছে। আর হয়েই যখন গেছে,থাকুক না এই ভাবেই। আজকাল ভালোই লাগে এই বিভ্রান্তি।
সবশেষে শুধু একটা কথাই জানাতে চাই-
নিজেকে লেখক দাবী করার চেষ্টা আমি কোনোদিন করিনি,কেননা আমি কোনো লেখক নই। একটি-দুটি গল্প লিখে কেউ লেখক হতে পারে না,খুব ভালো মতন কথাটা বিশ্বাস করে আমার অন্তর। অত্যন্ত সাদামাটা বেকুব-সেকুব ধরনের এক বালিকা আমি,যে কেবলই একজন সর্বভূক পাঠক(যার চেহারাটাও কিন্তু আবার পাঠকজেনিক নয়!!)।.. .. ..


.. .. ..আহহা!! এত রাগ হচ্ছেন কেন??কি দোষ হয় দুটো সুখ-দুঃখের কথা বললে???বোকা বলে কি আমার সুখ-দুঃখ থাকতে নেই???
.. ..আচ্ছা ঠিক আছে,যাচ্ছি না হয়। আর করবো না বকবক। এমনিতেই আজকের দিনের জন্যে যথেষ্ট প্যাচাল পারা হয়ে গেছে। আপনারা লাঠি-সোটা নিয়ে তেড়ে আসার আগেই তাই বিদায় নিচ্ছি আমি (কারণ জান বাঁচানো ফরয! ;)).. ..
.. ..আহা ধাত্তেরি!! বিদায় কালে দুইটা মনের কথাও দেখি বলতে দিচ্ছেন না।.. ..আচ্ছা ঠিক আছে .. ..
শুভরাত্রি!!!
ভালো থাকুন সবাই। :)


২০টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×