somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোকা মেয়ের ডায়রী.. .. ..৮ই মার্চ,২০০৯

০৮ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ তার মৃত্যু দিবস।
যে মানুষটা আমাকে শেখানোর চেষ্টা করতো-".. ..শোন পান্ডু, মানুষে মানুষে কোনো দিন ভেদাভেদ করনি না। (করলে একটা চড় খাবি!).. .. ..কালো হোক-সাদা হোক, ছেলে হোক-মেয়ে হোক, ধনী হোক-গরীব হোক, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্ঠান এমনকি ঘোর নাস্তিক হোক.. .. তাও কোনোদিন ভাগ করবি না। দুনিয়ার মানুষ সবাই সমান,সবাইকে মানুষ মনে করবি। মানুষ হিসাবে সম্মান দিবি (না দিলে শিওর একটা চড় খাবি!),বদলে তুই-ও মানুষ হিসাবে সম্মান পাবি। মানুষের শরীরে জন্ম নিলেই কেউ মানুষ হয়ে যায় না। মানুষ হওয়ার জন্যে সাধনা করতে হয়,বুঝলি বেকুব?.. .. .."
আমাকে লেখা শেষ চিঠিটাতে এমনই লিখেছিল সে। ৮ই মার্চ,২০০৯.. ..যার ৭ম মৃত্যু দিবস।
নিয়ম করে আমাকে প্রত্যেক সপ্তাহে একটা চিঠি লিখতো সে। যদিও আমাদের দেখা হতো রোজই,তবুও । মা চলে গেছিলো অন্য পুরুষের হাত ধরে, বাবা ব্যস্ত তরুনী প্রেমিকাদের সাথে। আর লেখাপড়া ছেড়ে বাউন্ডুলে হয়েছিল সে। সারাদিন পথে পথে ঘুরতো তার সাতাশ বছরের তরুণ বিষন্ন মনটা,আর দিন শেষে গিয়ে ঘুমাতো "বাড়ি" তকমা আঁটা সেই চার দেয়ালের খাঁচায়।
রাজ হচ্ছে গুরূ(ওর পুরো নাম ছিল রাজীব হাসান ইমন),আর আমি শিষ্য। ছায়া হয়ে ঘুরতাম আমি ওর সাথে সাথে। যে মেয়েটির প্রতারণায় ভেঙেছিল ওর হৃদয়,দিনে একবার সেই মেয়েটির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমরা দুজন। এক ঠোঙা বাদাম খেয়ে শেষ করতে করতে যতটা সময় দাঁড়িয়ে থাকা যায়।
যেদিন মারা গিয়েছিল সে,সেই মেয়েটির বাড়ির সামনে থেকেই ফিরছিলাম আমরা। আমি,রাজ,মুরাদ ভাই আর শুভ। কোচিং শেষ করে বের হয়েছি, চোখমুখ হয়তো কান্তিতে শুকিয়ে গেছিলো। হাসতে হাসতে রাস্তা পার হচ্ছিল সে,মনটা কেন যেন সেদিন খুব ভালো ছিল তার-"এই পান্ডার বাচ্চাটাকে এখন আমি আইসক্রিম খাওয়াবো.. .."
এরপর যে কি হয়েছিল,সেটা মনে করতে অস্বীকৃতি জানায় এখন আমার মন। শুধু মনে পড়ে স্কুটারের মাঝে আমি আর মুরাদ ভাই দুপাশ থেকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম ওকে,ওর রক্তে ভিজে ভিজে যাচ্ছিল আমাদের শরীর। মুরাদ ভাই বারবার বলছিলেন-"চোখ বন্ধ করিস না.. ..চোখ বন্ধ করিস না..."
কিন্তু চোখ বন্ধই করেছিল সে। চিরকালের জন্য।
ঠোঁটের কোণে আশ্চর্য একটা হাসি নিয়ে!

ওকে “ভাই” বলে ডাকতাম আমি-কেবলই ভাই,আগে পিছে অণ্য কিছু নেই। আর সে আমাকে অদ্ভভুত একটা নাম দিয়েছিল-“পান্ডু”। পান্ডু মানে নাকি পান্ডার বাচ্চা।
এস.এস.সি পরীক্ষার সময়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো সে আমার হলের বাইরে। কলেজে ভর্তি হবার পর রোজ সকালে কলেজে পৌছে দিয়ে আসতো,আবার ছুটির সময়ে নিয়ে আসতেও ভুলতো না কোনোদিন। কাসের পড়া পড়াতো আমাকে,চুলে বেণী করে দিতো। বেকুব-সেকুব আমাকে দিনরাত শেখানোর চেষ্ট করতো-
বিনয়ী হবি,পান্ডু। বিনয়ের কোনো বিকল্প নাই।
মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবি,জাস্ট একটা মেয়ে-মানুষ হবি না।
অহংকার করবি না কখনও। কাউকে ছোট ভাববি না। কারও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আঘাত করবি না,কটু কথা বলবি না কাউকে। মন দিয়ে লেখাপড়া করবি .. .. ..ইত্যাদি কত কিছু যে আমাকে শেখানোর চেষ্টা করতো!

এই আহাম্মক আমি তোর কাছ থেকে কিছুই শিখতে পারিনি রে, ভাই। মন দিয়ে লেখাপড়া করিনি,তুই চলে যাওয়ার পর একটা বর্ষ বিরতী দিয়ে ফেলেছি একাডেমিক জীবনে। তোর একটা গুনেও গুনান্বিত হতে পারিনি-বিনয়ী হতে পারিনি,নিরহংকারী হতে পারিনি। তুই যেভাবে মানুষকে ভালোবাসতি,সেই ভাবে ভালোবাসার গুনটাও আয়ত্ত করে উঠতে পারিনি।
তুই বেঁচে থাকলে নিশ্চই খুব নিরাশ হতি আমাকে দেখে! কেননা বিগত সাতটা বছরে একটা দিনও বাড়েনি আমার বয়স। আটকে আছে সেই ৮ই মার্চের বিকালে।
আমি এখনও সেই বোকাসোকা বালিকাই রয়ে গেছি-যে আইসক্রীম দেখলে খুশিতে সবগুলো দাঁত বের করে ফেলে,ধমক খেয়েও ফিকফিক করে হাসে,রাস্তা পার হতে হাঁটু কাঁপে যার।
তোর গল্প আমি খুব কাছের কিছু মানুষকে বলি প্রায়ই। শুধু গল্পের শেষ অংশটুকু ছেড়ে দিয়ে। খুব প্রিয় একটু মানুষ আছে আমার,যাকে সম্বোধন করি “ভাই” বলে। তাকেও কখনও বলা হয়ে ওঠেনি তোর “নেই” হয়ে যাওয়ার গল্প।
তোকে নিয়ে কখনও একটা গল্প লিখতে পারিনি,বারবার চেষ্টা করেও একটা বই উৎসর্গ করতে পারিনি তোকে। কেন জানি মনে হয় এসব করা মানে স্বীকার করে নেয়া তোর মৃত্যুটাকে। তোর জন্যে কাঁদা মানে অশ্রু বিন্দুর সাথে সাথে বইয়ে দেয়া বুকের মাঝে জমাট বাঁধা শোককে-তাই কাঁদিও নি আমি কখনও।
আজও কাঁদছি না আমি ভাই।
বিশ্বাস কর,আমি কাঁদছি না। পান্ডার বাচ্চা কি কাঁদতে পারে বল??
১৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×