আইন বিষয়টি আমি মোটেও তেমন বুঝিনা। তবে আইন-বিচার-সুশাসন বিষয়ে কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায় বরাবরই।
আইন আসলে কার জন্য? কোন শ্রেনীর জন্য? আমার মনে হয় নিশ্চয়ই মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতেই আইন। যারা শৃঙ্খলা বিষয়টি বুঝে তাঁরা কখনোই অন্যায় করেনা স্বজ্ঞানে। আর যারা শৃঙ্খলা বিষয়টিই বুঝেনা তাদের কীসের আইন? তাদেরকে আইন নয় বরং শৃঙ্খলা শেখানোর জন্য শিক্ষা দেওয়া দরকার। তারপরে আইনের প্রয়োগ বা অপপ্রয়োগ যেকোন কিছুই করা যাবে। আমাদের নতুন আইন তৈরি/বাতিল ইত্যাদির বাতিক আছে। আমার মনে হয় এগুলো অর্থহীন কাজ কারবার। আগে মানুষকে আইন বুঝার মতো যোগ্য করে তুলতে হবে। তাছাড়া নতুন নতুন আইন বানিয়ে সেই আইনের মধ্যে ফেলে মানুষের নড়ন চড়ন আটকিয়ে রাখা গেলেও মুক্তি দেওয়া যাবেনা।
আচ্ছা ধরুন, একজন বিচারক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের চোখের সামনেই এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে খুন করে ফেললেন। বিচারক ঘটনাটা চাক্ষুস দেখলেন।
তারপরে সেই খুনের মামলা থানা-পুলিশ হয়ে কোর্টে গেলো। প্রত্যক্ষদর্শী সেই বিচারকের কোর্টেই মামলার ট্রায়াল শুরু হলো। বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের বিতর্ক শুরু হলো। আসামীকেও বাদী পক্ষের আইনজীবী জেরা করলেন। বিচারক মহাশয় নিজের বিচারিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আসামীকে চিনেও কিছু বলতে বা স্বাক্ষ্য দিতে পারছেন না। অপরদিকে আসামীর বিরুদ্ধে একজন স্বাক্ষীও স্বাক্ষ্য দিলোনা।
এখন কী হবে? বিচারকের কি করার ক্ষমতা আছে? কোন স্বাক্ষ্য প্রমান ছাড়া বিচারকের কী কোনরকম সুযোগ আছে তাঁর সামনে ঘটা খুনের চেনা আসামীকে শাস্তি দেওয়ার? না নাই। কারন আইন ফ্রেম বন্দী। সত্য যতই সত্য হোক নির্দিষ্ট ফ্রেমের বাইরে আইনের যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।
আমরা সমাজে দৃশ্যমান অনেক অনিয়ম/অন্যায় লক্ষ্য করে থাকি। আমার কথা আরেকটু ভিতরে। এগুলো সমাজে কেনো বিদ্যমান, সেটা নিয়ে। একশ্রেনীর মানুষ আইন বুঝে তাই তাঁরা আইনের ফাক দিয়ে অন্যায় করে যাচ্ছে। আরেক শ্রেনীর লোক আইন বুঝেই না কাজেই তাঁরা না জেনে অন্যায় করে যাচ্ছে। দুই শ্রেনীকেই আবার বিদ্যমান আইন অপরাধী বলছে। এটা অনুচিত। যে বুঝেনা তাকে দোষ দেওয়ার কিছু নাই। তাদেরকে বুঝানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সুশাসনের জন্য এগুলো জরুরী।
কাজেই নতুন নতুন আইন বানিয়ে বা কোনরকম আইনেই কোন ফলাফল আসবেনা। মানুষকে যতদিন পর্যন্ত আইন বিষয়টা বুঝার মতো যোগ্য করে না তুলতে পারবো ততদিন পর্যন্ত আইনের বলে শুধু শাসকের ক্ষমতা নিরংকুশ হলেও মানব মুক্তি অসম্ভব।