বিভিন্ন কারনে এদেশের মানুষ রাজনীতিক ও সরকারী গোয়েন্দা বিশ্বাসই করতে চায়না। এর শুরু কবে থেকে সেটা বলা মুশকিল। তবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার সকল তথ্য ও বিশ্বাসকে ভুল ও মিথ্যা প্রমান করে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল। গোয়েন্দা একটা ভুয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসির উদ্রেক করে প্রতিষ্ঠা তখনই পেয়েছিল। তারপরে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পরে সেটি রীতিমত শত্রুতে পরিনত হয়। এর ধারাবাহিকতায় জিয়া হত্যাকান্ডে শত্রুতা স্থায়ীরুপ পেয়ে যায়। এরপরে প্রায় প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে তাদের জরিপ মিথ্যা বলে প্রমান হয়েছে। এমনকি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময়ে তাদের সহযোগীতার কথাও বিদিত রয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেও তাঁরা নিরাকারই ছিল।
সরকার বাহাদুরের উপর আস্থা হারানোর শুরু কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি ও সংসদে পাস করানোর মধ্য দিয়ে। জঘন্যরকমভাবে খোদ সরকারের মিথ্যাচার ধরা পরে বাংলা ভাই নামক জঙ্গি সন্ত্রাসীর অস্তিত্ব অস্বীকারের মাধ্যমে।
সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল সকলের অংশগ্রহণে 'জজ মিয়া' নামক নাটকের মধ্য দিয়ে চুড়ান্তভাবে আস্থাহীনতার নজির স্থাপিত হয়।
বিচ্ছিন্নভাবে হয়ত আরও অনেক ঘটনাই রয়েছে। যেগুলো মিথ্যাচার বা ষড়যন্ত্রের অংশ হলেও উপরোক্তগুলোর তুলনায় হয়ত নেহায়েতই উদাহরনের পাল্লা ভারী।
এসব কারনেই জনগন অনেক সত্য বিষয়েও তাঁরা কথা বললে বা তথ্য প্রকাশ করলে আগের মিথ্যাচারগুলোর রেফারেন্স দিয়ে অবিশ্বাস করে। একটি পক্ষ দাঁড়িয়েই থাকে সত্যকেও মিথ্যা প্রমান করতে আর সঙ্গে যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো থাকে তাহলে তাদের কথাকে অবিশ্বাস করবে কেন? অথচ ষড়যন্ত্র রোধ করার পরে সেই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তথ্য দিলেও অনেকেই অবিশ্বাস করে এই বলে যে, সরকার তাদের কোন গোপন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই ষড়যন্ত্রের নাটক করছে। ঠিক এই কারনেই কিছুদিন আগে সেনানিবাস উত্তপ্ত হলে সেটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করা হলেও সেটা নিয়ে অনেকের অবিশ্বাস যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি অতি সম্প্রতি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যকেও অনেকেই মিথ্যাচার বলছেন। মোদ্দাকথা, মানুষ তাদের নিজস্ব স্বার্থ(রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক) ব্যতিরেকে অন্য কোন কিছুই মানতে বা বিশ্বাস করতে চায়না। হাজারবার সত্য হলেও সেটা তাঁরা অবিশ্বাসই করে।
বাস্তবতা হলো, সেনানিবাস ও কথিত তৃতীয় শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা নিজের জীবনের উপর চরম হুমকী নিয়েও মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা, এরূপ ভয়ংকর শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সরকার না হয়ে অন্য নেত্রী বা দলের সরকার হলে এতদিনে পালিয়ে বাঁচতো। সেটার নজির ১৯৯৬ সালে জেনারেল এ এস এম নাসিম এবং ২০০৭ সালে জেনারেল মইনের ঘটনাই প্রমান করে। কিন্তু শেখ হাসিনা বলেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে আমার বিশ্বাস, এদেশে যেকোন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসতে চাইলে তাদেরকে রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভর করতেই হবে। সেটা যেকোন দলই হোক। তা নাহলে ক্ষমতায় আসা অসম্ভব। তাই রাজনৈতিক দলগুলো কোন ষড়যন্ত্রে অংশ না নিলে নির্বাচিত সরকারই আসা-যাওয়া করবে। এটা এজন্যই বলছি যে, আগের অবস্থা এখন আর নাই। রাজনৈতিক দলগুলো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে সেজন্যও না, কারনটা স্বাভাবিকভাবেই অর্থনৈতিক। দেশের অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করছে রাজনৈতিক দলের নেতা, শুভাকাঙ্ক্ষী প্রমুখেরা। কাজেই চাইলেই যে কেউ হুল ফোটাতে পারবে না।
বি.দ্র. এই লেখাটি লেখার সময়ে বহুল ব্যবহৃত দুটি প্রবাদকে মাথায় রেখেই লিখেছি। একটি হলো- যুদ্ধ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এতে শুধু জেনারেলদের উপরে নির্ভর করলে চলে না। আরেকটি হলো- কাউকে বিতর্কিত করতে চাইলে, আগে তার নামে কুৎসা রটাও, বদনাম করো।