যে বইটি থেকে এত রাজাকার বা দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের তথ্যাদি উদ্ধৃত করা হলো, তার শিরোনাম :রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা। এটির সংকলন ও সম্পাদক এ এস এম সামসুল আরেফিন (আরেফিন)। আরেফিনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, ঢাকা এ বইটি ২০০১ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশ করেছে।
মি. আরেফিন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মনোযোগী গবেষক। তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আরো কয়েকটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। ‘রাজাকারদের তালিকা’ শিরোনামে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর রংপুর জেলার ওপর তার দু’টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। Collaborators of Pakistan Army শিরোনামে তার আরেকটি গ্রন্থ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রোপটে ব্যক্তির অবস্থান শীর্ষক তার একটি গ্রন্থ বেশ আলোচিত হয়েছে। আরেফিন চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন তথ্য সংগ্রহকারী। আরেফিনের গ্রন্থগুলোকে সাধারণভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন : ‘সকল যুদ্ধেই কমপে ২টি প থাকে। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং শহীদদেরও তালিকা প্রকাশ করে ইতিহাসের দাবি পূরণের চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের তালিকা প্রকাশ করিনি। মুক্তিযোদ্ধারা কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, কাদের হাতে বা কাদের উৎসাহে বাঙালি বীর সন্তানেরা শহীদ হলেন তাদের নাম জানার বা জানাবার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। তাই বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনার স্বার্থে স্বাধীনতার প্রতিপদের চিহ্নিত করা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক ইতিহাস রচনার জন্য এই তালিকা আগামী দিনের ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষকদের পথনির্দেশনা প্রদান করবে। এই তালিকা আমাদের ইতিহাসের একটি মৌলিক ও আকর দলিল। তাই রাজাকার ও দালালদের সম্পূর্ণ তালিকা সংগ্রহের ও প্রকাশের জন্য কালপেণ না করেই আমরা এই তালিকা গ্রন্থটি প্রকাশ করছি (আরেফিন, রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা, ভূমিকা)।’
পূর্ণাঙ্গ তালিকার জন্য ‘কালপেণ’ না করে আরেফিন যে গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন, আয়তনে তা ৫৬৬ পৃষ্ঠার একটি বই। এতে তিনি ৭৩০১ জন গ্রেফতারকৃত রাজাকার-দালালের তালিকা দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রায় ৪৩৮৭ জনের কেবল পিতা বা স্বামীর নাম ও ঠিকানা দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ২৯১৪ জনের পেশাগত বা রাজনৈতিক পরিচিতিও দেয়া হয়েছে। প্রদত্ত পেশাগত পরিচিতির উল্লেখযোগ্য হলো কৃষি, শ্রমিক, ব্যবসায়, চাকরি, পুলিশ, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক, চা দোকানদার, নাপিত, দর্জি ইত্যাদি। আর প্রদত্ত রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে আলেম, নারী, হিন্দু, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, উপজাতীয় প্রভৃতি। বর্তমান নিবন্ধের শুরুতে উল্লেখযোগ্য পরিচিতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের অব্যবহিত পরে রাজাকার বা দালাল হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
রাজাকার বা দালাল হওয়ার অভিযোগে যে ৭৩০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে আরেফিনের বই থেকে জানা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রে আটককৃতদের পরিসংখ্যানটি দাঁড়ায় এমন : আলেম ৬৪ জন, নারী ৬২ জন, হিন্দু ৪১ জন, জামায়াতে ইসলামী ৫২ জন, মুসলিম লীগ ৭২ জন, উপজাতীয় ৮৮ জন। আর গ্রেফতারকৃত পেশাগত পরিচিতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের পরিসংখ্যানটি এমন : কৃষিজীবী ১৫৭৩ জন, পুলিশ (রেল পুলিশসহ) ২২৪ জন, ব্যবসায়ী ১৫৪ জন, শ্রমিক ৭৮ জন, চাকরিজীবী ১২৮ জন, আইনজীবী ৩৮ জন, চিকিৎসক ৩৩ জন, শিক ৩৬ জন, চা দোকানদার ২৭ জন, নাপিত ২২ জন, দর্জি ১৬ জন প্রভৃতি।
বিস্তারিত--View this link