somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুংখ তুমি লক্ষীছাড়া

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'' হাচ্যো " ঠান্ডা লেগেছে নাক দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়ছে,
পকেটের রুমাল বের করে নাক মুছল জুবায়ের " ইয়াক থু ", ৩ দিনের না ধোয়া রুমালের গন্ধে বমি আসার মত অবস্হা ।
শীতের ভোর বেলায় অন্ধকার থাকে চারদিক, রাস্তায় খুব একটা লোকজন দেখা যাচ্ছে না।শৈত্যপ্রবাহ চলছে ঢাকায়, ৫ টায় ঘুম ভেংঙ্গে জুবায়ের দেখে বাইরে এখনো অন্ধকার কাটেনি। নারায়নগঞ্জ যাবে মামা- মামির বাসায়, প্রথমে বাসে ওদের যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে ফতুল্লা স্টেডিয়াম, বাস থেকে নেমে রিক্সা করে নিনকুনি বাজার পার হয়ে জোড়া মসজিদ, এই পর্যন্ত রিক্সা যায় এর পর হাঁটাপথ । পায়ে হাঁটা গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে বাসা, এদিকটা এখনও " শহরের প্রানকেন্দ্রে নিজের আবাসন " নামক হায়নাগুলার নজরে পরে নি।

মামি অনেকবার ফোনে ওর যাবার কথা শুনে জিজ্ঞেস করেছেন "তুই আসতে পারবি তো একা একা চিনে ?" জুবায়ের হেসেছে, মা মড়া ছেলে বাবা আছেন তার ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে, কাজের লোকদের কাছে বড় হয়েছে সে, টাকা পয়সার অভাব ছিল না কোনদিন। বাবার রড- সিমেন্টের দোকান আছে দোলাইরপাড় ব্রীজের ঢালে, ঢাকায় আরো ২ টা দোকান আছে একটা বাড্ডায় আরেকটা তেঁজগাও লিন্ক রোডে।


" তুই এমন শুকায়া গেসস কেন ? " প্যান্ট তো দেখি পইরা যাইতাছে,
এতদিনে মনে হইল তোর গরিব মামা , মামি রে ?" বলতে বলতে গায়ে মাথায় হাত বুলালেন মামি, চোখ তার ছলছল।বড় আপার একমাত্র সন্তান, জন্মের পাঁচমাস থেকেই মামির হাতেই ৫ বছর পর্যন্ত এই ভাবুক ছেলেটার বেড়ে ওঠা । আপা মারা গেছেন প্রায় কুড়ি বছর হবে জুবায়ের তখন ৫ বছরের শিশু,কত বড় হয়ে গেছে ! আগে মামা সামনের স্পিনিং মিলে ফ্লোর সুপারভাইজার ছিলেন এখন মামাত ভাই সুমন একই পদে কাজ করে । মামা পঙ্গু হয়ে যাবার পর উনারা ভাড়া বাসা জুরাইন থেকে নিজেদের এই ফতুল্লার বাড়িতে উঠে এসেছেন তাও ২ বছর হবে।

জুবায়ের আত্বীয় স্বজন কারো বাড়িতেই যায় না একমাত্র মামার বাসায় ছাড়া, তাও নিজের মামার চাইতে মামির জন্য মন কাঁদে বেশী,মহিলা তাকে এত আদর, স্নেহ দিয়েছেন যা তিনি নিজের বাকি দুই সন্তানকেও দিয়েছেন কিনা সন্দেহ। অসুস্হ মা পারতেন না বলে এই মামি তাকে মায়ের মত আগলে রাখতেন । তাই বাবার ঘোর আপত্তি স্বত্তেও জুবায়ের মন খারাপ থাকলেই ছুটে আসে । আজকেও তেমনি অস্হির, মানসিক টানাপোড়নে ক্লান্ত , জীবনের প্রতি বৃতশ্রদ্ধ জুবায়ের মনটাকে একটু শান্ত করতে এখানে এসে মামির সাথে গল্প করছিল, আজমি বাসায় ঢুকায় টিনের দরজার আওয়াজ শুনা গেল ।কিভাবে সহজভাবে কথা বলবে আজমির সাথে? এত নিস্ঠুর ব্যবহার করেছে তার সাথে,আজমি কি তাকে ক্ষমা করে দিতে পেরেছে কে জানে ? রান্নাঘরে পিঁড়িতে বসা জুবায়েরকে দেখে আজমি থতমত খেয়ে গেল, কুশল বিনিময় কিংবা ভাল মন্দ কিছুই বলল না।এই লম্বা কাল অতিসাধারন ছেলেটার প্রতি অদ্ভূত একটা মায়া কাজ করে আজমির , কিনত্ত নিজের আবেগের কথা কোনদিন বলা হয়নি তাকে, যদিও কি এক অজানা কারনে ফুফাত ভাই জুবায়ের তার সাথে কঠিন সুরে কথা বলে, সুযোগ পেলেই অপমান করে !

দুপুরে ভাত ঘুম দিতে টিনের চালার পাকা ঘরটিতে শুয়ে সিগারেটে সুখটান....।" ঐ মামু দুইটা ডিমের চপ, আর তিনটা বেনসন দ্যান " জুবায়েরের কথা শেষ না হতেই "মামু আমারেও এক প্যাকেট বেনসন দ্যাও ।" কি রে জুবি কেমন আছিস ? ক্লাস করিস না ?ক্লাস কোইরা করবি কি ? বাপ হালায় যা রাইখা যাইব তর আর কি চিন্তা ? ওই তোর গাড়িতে একটু lift দিবি, আইজকা আগে বাড়ী যামু, কাইলকা অনেক রাইত পর্যন্ত Show ছিল ।"

ইমি মডেল, জুবায়েরর সাথে একই ক্লাসে পরে, থাকে খিলগাঁও তালতলা, লম্বা ফর্সা চোখ ধাঁধান সুন্দরী মেয়েটার মুখে গালিগালাজ লেগেই থাকে, মদ -সিগারেটের অভ্যাস আছে, খুব কম ক্লাসে আসে, ওর অবস্হানের সাথে সঙ্গতি বিহীন পোশাক পরিচ্ছদ, চাল-চলন নিয়ে ব্যাপক জনশ্রতি আছে ইমি অবশ্য এইসব কানাঘুসা পাত্তা দেয় না । যে ক'জনের সাথে ইমি কথা বলে জুবি তার মধ্যে একজন । জুবির বাবার একটা ফ্লাট আছে নিকেতনে, যাত্রাবাড়ী থেকে University গাড়ীতে এলেও মাঝে মাঝে দেরি হয়ে যায় বলে বাবা কিনেছেন । Esat West University থেকে assignment করতে ঐ ফ্লাটে জুবায়ের বন্ধুদের নিয়ে যায় প্রায়ই, যদিও বন্ধুরা room Date করতে ভাড়া দিবে কিনা বলে জুবির সাথে হাসি-তামাসা করে। ইমিও study গ্রুপের সাথে এসেছিল কয়েকবার, কেননা ক্যাম্পাসে জুবির ভাল ছেলে হিসেবে বেশ সুনাম।

পরশু দিন হুট করেই দুপুর তিনটার দিকে নিকেতনের বাসায় যেতে হয়েছিল, চাবি ঘুরিয়ে নব খুলতেই দেখে জুবায়েরের বাবা ড্রইং রুমে লুঙ্গি পরে বসে আছেন, সামনের টেবিলে খোলা মদের বোতল, পাশে গ্লাস, বাবার কোলে বসা অর্ধনগ্ন ইমি বাবা তার মুখে মদের গ্লাস তুলে দিচ্ছেন । দুজনেই জুবি কে এই সময় ফ্লাটে দেখে থতমথ । জুবায়ের দৌড়ে বেড়িয়ে গেল সাথে সাথেই,সিড়ির প্রতিটা ধাপ পার হচ্ছে যেন পার হয়ে যাচ্ছে তার শৈশব ও কৈশোরের সব অব্যক্ত পঙ্কিল স্মৃতি, তার বাবার মেয়েঘটিত কেলেঙ্কারি।একে একে পায়ের নিছে দলিত হচ্ছে তার জন্মদাতার অপকর্ম ।
সিড়ির প্রতিটি ধাপে পরে থাকা টুকরো টুকরো কষ্টগুলোকে পা দিয়ে পিষে ফেলছে সে।

উহ, সিগেরেটের আগুন হাতের আঙ্গুল পুড়িয়ে দিল। জুবায়ের ঘরের টিনের চালে তাকি্য়ে এত্তক্ষন এইসবই ভাবছিল। বাবা-মা এর
স্নেহ বন্ছিত জুবি খুব ভালবাসে নিজর্নতাকে,মন খারাপ থাকলে একা একা
ঘুরে বেড়ায়।নাহ্‌ সন্ধ্যা হয়ে এল, ফিরতে হবে ইট পাথরের ঠিকানায় ।সস্তা ক্ষোভের নির্মম পরাজয় ।

" ব্যস্ত সকল সস্তা ক্ষোভে মানুশগুলো সুখের লোভে
অবোধ মনে ভাবনা গুনে অলস জিবন যাপন"------------তাহসান


http://www.youtube.com/watch?v=O8uVtIqBjkk
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৫০
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×