somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে ভাইরাল হয়েছিল আমার মৃত্যু সংবাদ

০৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন সন্ধায় শাহবাগ থেকে বিঅরটিসি বাসে উঠেছি । মহাখালী নেমে ময়মনসিংহের বাসে উঠবো । আমার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায় । কিছু পথ যাওয়ার পর শরীরটা হঠাৎ খারাপ করলো । সারাদিনের হাঁটাহাঁটিতে অবসন্ন হয়ে পড়েছে । দম নেওয়াও খুব কষ্ট হচ্ছিলো । ভাবলাম মাওনায় যাবো । সেখানে তৌহিদ নামে জনৈক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা করাও প্রয়োজন । তার সাথে অনেকদিন দেখা-সাক্ষাৎ নেই । ফোন দিলাম তাকে । তার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম, আমার যাওয়ার খবরে সে বেশ খুশি । গাজীপুরের কিছু আগে বাসটা হঠাৎ থেমে গেলো । বিশাল এক যানজটে আটকে গেছে! এক ঘন্টার মতো বসে রইলাম । যানজট ছাড়ার কোন সম্ভাবনা দেখছিনা । বাস থেকে নেমে দেখলাম এক বাস আরেক বাসকে ধাক্কা মেরে প্রায় গুড়িয়ে দিয়েছে । দুটো বাস রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়ানো! রাস্তা ক্লিয়ার করে বাস ছাড়তে বোধহয় আরও অনেক সময় লাগবে । চালকের সহকারীকে জিজ্ঞেস করলাম, "বাস কোন পর্যন্ত যাবে?"
উনি বললেন, "সালনা পর্যন্ত ।"
পাশেই একটা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়েছিলো । মাইক্রোবাসের চালক জানতে চাইলেন, আমি কোথায় যাবো । যদিও মাওনা যাবো, তবুও আমি বললাম, "ভালুকায় ।" উনি বললেন, "কিছুদূর যাওয়ার পর গাজীপুর চৌরাস্তা । ওখান থেকে বাস পাওয়া যাবে ।"
গাজীপুর চৌরাস্তার দিকে হেঁটে চলেছি আমি । এক-দেড় কিলোমিটার হাঁটার পর ঠিক কী কারণে জানিনা, মাওনা যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম । তৌহিদকে ফোনে জানালাম, "আজকে আসতে পারছি না ।" তাহলে কি আমি ভালুকায় যাবো? রাত তখন প্রায় দশটার মতো বেজে গেছে । ভালুকা থেকে বাড়ি যাওয়ার আর কোন বাহন পাবো না । আমার বাড়ির দূরত্ব ভালুকা সদর থেকে ভরাডোবা, চার কিলোমিটার; ভরাডোবা থেকে বাকসাতরা, নিঝুরি, মেদুয়ারী, বগাজান, বনকোয়া পেরিয়ে আরও নয় কিলোমিটার । হঠাৎ এক বন্ধুর কথা মনে পড়লো । তার নাম মনির । কলেজে একসাথেই পড়তাম আমরা । খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলো । সে গাজীপুরেই থাকে । তার সাথে পাঁচ বছর কোন প্রকার যোগাযোগ নেই । তাকে ফোন দেবো কিনা ভাবছি । আবার চিন্তাও করছি, তার মোবাইল কি খোলা আছে? সে কি আগের নাম্বার ব্যবহার করে? তার মোবাইল খোলাই ছিলো ।


বন্ধু মনির এর রুমে শুয়ে ছিলাম । ও আমাদের কলেজ জীবনের জনৈকা বান্ধবী সুমাইয়ার সাথে ফেসবুকে চ্যাট করছিলো । চ্যাটের এক পর্যায়ে সুমাইয়াকে জানালো, সড়ক দুর্ঘটনায় আমার মৃত্যু হয়েছে । সুমাইয়া প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় নি, কারণ, ঘন্টাখানেক আগেই আমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছি বইমেলা বিষয়ে । বন্ধু মনির তাকে বললো, "কিছুক্ষণ আগেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে । বইমেলা থেকে আসার পথেই ।"
মনিরকে খুব বকাঝকা করলাম । ভুল বুঝতে পেরে ও সত্যি কথাটা বলে দিতে চাচ্ছিলো সুমাইয়াকে । রাগ করে আমি না করলাম, কারণ, কথাটা আমিই সুমাইয়াকে জানাতে চাচ্ছিলাম, যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না হয় । কিছুক্ষণ পর থেকে গণহারে ফোন আসা শুরু হলো আমার ফোনে । ঘটনা বুঝে ফেললাম, আমার মৃত্যু সংবাদ ততক্ষণে ভাইরাল হয়ে গেছে! মনিরকে বললাম, "তুমি যে ভুল সংবাদ দিয়েছো, সুমাইয়াকে এখন তুমিই জানাও ।" সে তাই করলো । সুমাইয়া তার সাথে খুব রাগারাগি করলো, বললো; "এমন মিথ্যে কেউ বলে! আমি তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিয়েছি ।"
ফেসবুকে ভার্সিটির গ্রুপে স্ট্যাটাস দেওয়া মানে বহুলোক জেনে যাওয়া । ইতোমধ্যে অনেকে জেনেও গেছে । সুমাইয়া সাথে সাথে স্টাটাসটা মুছে দিলো । তারপরও বন্ধুদের সংশয় যায় না । সবার সংশয় দূর করতে আমি নিজেই ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিলাম এই বলে যে আমার কিছুই হয় নি । সুমাইয়া আমাকে ফেসবুকে নক করলো, "এমন দুষ্টুমি কেউ করে?"
আমি বললাম, "আমি তো কিছুই জানতাম না । তুমি নিশ্চিত না হয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে দিলে কেন?"
সে বললো, "এমন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে যে মনির মজা করবে, আমি তা ভাবতেই পারি নি । প্রথমে আমি তো বিশ্বাসই করি নি । আপার সাথেও কথা বললাম তোমাকে নিয়ে । বড় ভালো ছেলে ছিলো । আজ মারা গেছে । সব শুনে আপাই বললো, ঘটনা বোধহয় সত্যি ।"
আমি বললাম, "তোমার আপুকে আমার সালাম দিও ।"
সে বললো, "ঠিক আছে । জানাবো ।"
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৩
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×