somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেলাশেষের গান

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাস্টার্স এ অধ্যয়নরত অবস্থায় ইশকুলে ঢোকা; প্রতিষ্ঠানটার নাম "রোজবাড প্রি-ক্যাডেট স্কুল"। এরপর নানান ঘটনা পরিক্রমায় কেটে যায় ছয় মাস। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আসতো প্রতিনিয়ত। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিলোঃ তার পাঠদান পদ্ধতি ভিন্ন; বাচ্চারা এমন কি খোদ অভিভাবকগণও পড়ানোর ধরণ বুঝতে পারেন না, অত্যাধিক শাসনে রাখে বাচ্চাদের, পাঠ্যক্রম বহির্ভূত পড়ালেখা করায়, ক্লাসে গল্প-গোজব, গান-বাজনা করায় ইত্যাদি। মুখস্ত বিদ্যার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মগজ পূর্ণ করা হচ্ছে; এর বিপরীতে সৃজনশীল পড়ানো কি দোষের? জীবনে কি শৃঙ্খলার কিংবা বাহ্যিক জ্ঞানের প্রয়োজন নেই? সবসময়ই কি বাচ্চাদের পড়ালেখা ভালো লাগবে? মাঝেমাঝে তো চিত্তবিনোদনের প্রয়োজন! কে কাকে বোঝাবে এসব? এখনকার অভিযোগ আরও ভয়াবহ! শাসন তো বটেই, তার কারণে ছেলেমেয়েরা বখে যাচ্ছে; সে একটা নাস্তিক, বেয়াদব ইত্যাদি।
ইশকুলে বিচার বসেছে। পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য, শিক্ষকবৃন্দ সকলে উপস্থিত। বিচারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকে ইশকুল থেকে বের করে দেওয়া হবে। কেউ তার পক্ষে কথা বললো না; এহেন সিদ্ধান্তের কেউ প্রতিবাদ করলো না! সবাই মূর্তির মত বসে রইলো!
এর মধ্যে একটা করুণ ঘটনাও ঘটেছে। জনৈক অভিভাবক তার সাথে অসদাচরণ করে। তার দোষ ছিলো এই, ছেলেমেয়েরা ক্লাসে অত্যাদিক গন্ডগোল করছিলো; ক্লাস নিয়ন্ত্রণে আনতে সে তাদের কয়েকজনকে প্রহার করে। উত্তম-মধ্যম এর মাত্রাটা বোধহয় একটু বেশি হয়ে গিয়েছিলো। তাতে কী? শিক্ষক কি শিক্ষার্থীকে শাসন করতে পারেন না? অভিমান করে সে ইশকুল ছেড়ে দেয়, কিন্তু অধ্যক্ষের অনুরোধে পুনরায় ফিরতে হয়েছিলো। ফিরে এসে আরও প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি! যারা তাকে চায় নি, তারা বেজার! তাকে তাড়াতে তারা উঠেপড়ে লাগে! অবাক করা ব্যাপার হলো, যাদের সে নিকটজন ভাবতো, তারাও তার বিরুদ্ধে।
তার আগে জন্মদিন নিয়ে একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে যায়। জুনের চার তারিখে ছিলো তার জন্মদিন। সে উদযাপন করতে চায় নি; তাতে আগ্রহও ছিলো না! কিন্তু ছেলেমেয়েদের জোরাজুরিতে করতে বাধ্য হয়েছিলো। "মান্থস অব দ্যা ইয়ার" কবিতা পড়ানোর সময় ঘটনাক্রমে জন্ম তারিখের বিষয়টা প্রকাশ্যে আসে। পালন না করলে ছেলেমেয়েরা তার সম্পর্কে বিরুপ ধারণা পোষণ করতো। একটা কেক কিনতে আর কয় টাকা লাগে? ছেলেমেয়েদের চাওয়া-পাওয়ার তো একটা দাম আছে, না? এটা পালন করতে গিয়ে যে এমন অঘটন ঘটবে কে জানতো?
মিটিং এ আরও অভিযোগ ছিলোঃ ছেলেমেয়েদের রোজা রাখতে দেওয়া হয় না, নামাজ পড়তে দেওয়া হয় না, যারা জন্মদিনে আসে নি, তাদেরকেই নাকি মারা হয়েছে। দশটা-বারোটার সময় ছেলেমেয়েরা হাঁপিয়ে ওঠে, নামাজ পড়তে গিয়ে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করে; ওদের যদি পড়ালেখায় মনোনিবেশ করানো হয়; এটা কি দোষের কিছু? খোদা কি এতো নিষ্ঠুর এসব দুধের বাচ্চার এবাদতের জন্য মুখিয়ে থাকবেন? অভিযোগ শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। ও বুঝতেই পারে নি ওর বিরুদ্ধে আরও গভীর ষড়যন্ত্র দাঁনা বেঁধে ওঠেছিলো। ও থাকলে অনেকেরই সমস্যা! টিউশন বাড়ছিলো ক্রমশ ওর। পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস দেওয়ার কথা ভাবছিলেন অধ্যক্ষ। এর আগে শুধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ক্লাস নিতো। ইংরেজি পড়াতো সে। মাঝেমাঝে ধর্ম। এক ধর্ম পড়াতে গিয়ে অন্য ধর্ম চলে এলে কেউ কেউ নাক সিটকাতো। বাচ্চাদের মধ্যেও উগ্রতার বীজ কে বপন করেছে? আরেক জনের অগ্রগতি কি বাঙালি সইতে পারে?
নাস্তিক হলে কার কী? পরমতসহিষ্ণুতা বোঝানো কি দোষের? পৃথিবীতে তো আরও ধর্মাবলম্বী আছে, তাদের অস্বীকার করা সম্ভব?
সে বুঝতে পারে নি বেয়াদবি কোথায় করলো? দেখা হলে আদাব-সালাম তো সবসময়ই দিয়েছে। নিজেদের ভাগে কম পড়বে, তাই কি তাকে সরানো? ছেলেমেয়েরা তাকে অপছন্দ করে; এমন প্রমাণও নেই। সে চলে আসায় অনেকেই চোখের জল ফেলেছে। একটা বিষয় অবাক করা; যাদের বেশি আদর করা হয়েছে, তারা কমই কেঁদেছে; কেঁদেছে তারা, যাদের বেশি মারধোর করা হতো। দুনিয়া বড় অদ্ভূত!
মাঝেমাঝে মনে মনে ভাবে সে উলোবনে মুক্তা ছড়িয়েছে। তার বাসায় অনেক ছেলেমেয়ে দেখা করতে এসেছে। এখনও রাস্তায় দেখা হলে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে; এসব দেখে কারও কি মনে হবে সে অপছন্দের কেউ? জন্মদিনে কাউকে আসতে বলা হয় নি; যার মন চেয়েছে, সে-ই এসেছে। কোন উপহারও গ্রহণ করা হয় নি। তাহলে কেন এতো হইচই? মফিজ স্যার কী করে ছেলেমেয়েদের হুমকি দিলেন এ বলে যে জন্মদিনে যারা আসবে, তাদের পিটুনি দেওয়া হবে?
জন্মদিন পালন করায় পাপের কী? ছেলেমেয়েদের শুধুমাত্র কেক খাওয়ানো হয়েছে। অভিভাবকগণ জন্মদিন নিয়ে কোন কথা বলার কথা নয়, কারণ, যারা আসবে, তারা কেউ রোজা রাখার অবস্থানে নেই।
মোস্তফা স্যার, হারিস স্যার শুরু থেকেই ওর বিরুদ্ধে লেগেছিলেন। এমন নোংরা হয় কেন মানুষ? ওর কি বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে স্নেহ-ভালোবাসা পাওয়ার কথা ছিলো না? মাঝেমাঝে শিক্ষকদের সমালোচনা করেছে; তারা কি সমালোচনার উর্ধ্বে? তারা তো এমন অনেক কাজ করেছেন, যা তাদের বয়সের সাথে যায় না।
ইশকুল ছেড়ে দিয়ে এক হিসেবে ভালোই হয়েছে তার। ইগোতে আঘাত লাগলে কেউ টিকতে পারে? মান-সম্মানের একটা ব্যাপার তো আছে নিশ্চয়ই।
তার হাতে এখন অফুরন্ত সময়! কোন প্রকার জঞ্জালতা নেই। কেউ কোন বিষয়ে চাপ দেয় না। এখন সে যেখানে পড়ায়, সেখানে বেতন দেয় ভালো; সম্মানও আছে, স্বাধীনতাও আছে। টাকা-পয়সা ঠিকমতো পেলে কিছু অভিযোগ হয়তো সহ্য করা যায়। টাকাও কম, আবার প্রতিনিয়ত অভিযোগও; সেটা কি সহনীয়? টিউশনি করেই যদি টাকা কামাতে হয়, তাহলে ইশকুল কেন?
বাসাটা সে পরিবর্তন করে ফেলবে ভাবছে। এ পরিবেশে থেকে দম বন্ধ হয়ে আসে। একটু নিস্তার প্রয়োজন। কিন্তু ছাড়তেও মন চায় না! মায়া জন্মে গেছে যে! যাদের সাথে এতদিন ছিলো, সে ছেলেমেয়েদের জন্য এখনও তার পরান পোড়ে; চোখে জল ঝরে!

২৭ শ্রাবণ ১৪২৪ বঙ্গাব্দ
ভালুকা, ময়মনসিংহ।



সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×