somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হওয়ার আগে কোন প্রকার গ্রন্থ প্রকাশকে নিরুৎসাহিত করি।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ম্যাচিউরিটি
অল্পবয়সে রবীন্দ্রনাথ যে লেখাগুলো লিখেছিলেন, পরিণত বয়সে ঐ লেখাগুলো নিজেই বাতিল করে দিয়েছিলেন। নিজের লেখা বলে পরিচয় দিতেই লজ্জাবোধ করতেন।
জীবনানন্দ দাশ জীবদ্দশায় অনেক লেখাই প্রকাশ করেন নি। দেশ ও প্রকৃতি বিষয়ক লেখা নিয়ে উনি প্রায়ই হীনম্মন্যতায় ভুগতেন। জসীম উদদীনকে অনুকরণ করছেন এমন অপবাদের আশঙ্কা করতেন। ঝামেলা হতে পারে অথবা মানসম্মত হয় নি এই অজুহাতে আত্মজৈবনিক লেখা প্রকাশ করেন নি। যদিও পরবর্তীতে দেখা গেছে লেখাগুলো কালোত্তীর্ণ হয়েছে।
মীর শওকত আলী তাঁর 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' লিখতে দীর্ঘসময় নিয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর চিলেকোঠার সেপাই' ও 'খোয়াবনামা' লিখতে রীতিমতো সাধনা করেছেন। শওকত ওসমান সহ প্রথিতযশা আরও অনেক সাহিত্যিকই যা লিখেছেন সময় নিয়ে লিখেছেন। হুটহাট কিছু লিখেন নি। পরিমাণের চেয়ে মানটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এখানে রফিক আজাদের কথা বলা যায়। ভদ্রলোক সারাজীবনে দু'শোর বেশি কবিতা লিখেন নি। তারপরও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি তিনি। অথচ অনেকেই আছেন হাজার হাজার কবিতা লিখে ফেলেন। কালস্রোতে সব অবশ্য ভেসেও যায়।

অল্পবয়সে যে লেখাগুলো লেখা হয়, তাতে চিন্তা-ভাবনার খোরাক কম থাকে। কৈশোরে আমরা যে অনুভূতি লালন করি, যৌবনে নিশ্চয়ই একই অনুভূতি থাকে না? চিন্তা-ভাবনায় পরিণতি আসে। আপনি যখন কোন গ্রন্থ রচনা করবেন, নিশ্চয়ই সর্বজনীন করেই লিখবেন। সেটা নিশ্চয়ই বাগাড়ম্বর পূর্ণ হবে না? ওখানে নিশ্চয়ই একটা বার্তা থাকবে, যেটা সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য হবে। একসময় যদি নিজের কাছেই বিরক্তিকর ঠেকে পাঠক কীভাবে নেবে? এ জন্য চিন্তা-ভাবনার পরিণতি জরুরি। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান এবং সে বিষয়ে কথা বলতে পাঠকের মুখোমুখি হওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।

গ্রহণযোগ্যতা
হুট করে একটা বই লিখে ফেললে হবে না, দেখতে হবে আপনার পাঠকশ্রেণি কেমন। আপনার গ্রহণযোগ্যতা কেমন।
ফেসবুকে সামান্য ক'টা লাইক অথবা অতি উৎসাহী কিছু মানুষের কথায় বই করে ফেললে বিপদে পড়তে হবে। কারণ, এই অতি উৎসাহী শ্রেণি আপনার বই কিনবে না। শুধু শুভ কামনা জানিয়েই দায় সারবে। অথবা সৌজন্য কপির জন্য মুখিয়ে থাকবে। অদৃষ্ট বেশি মন্দ হলে আবার এমনও হতে পারে, আপনি কাউকে বই উপহার দিলে সে এমন ভাব দেখাবে যেন তাকে বই দিতে পেরে আপনিই ধন্য হয়েছেন।
এ জগৎটা বড় কঠিন, ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। নতুনেরা দুঃখে সারাজীবনের মতো সাহিত্যসাধনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য জাতীয় দৈনিক, পাক্ষিক বা মাসিক সাময়িকী, বিশেষ সংখ্যাগুলোতে লেখা দিতে পারেন। একটা পাঠকশ্রেণি তৈরি করুন। অথবা ব্লগ বা ফেসবুকে দল গঠন করে সাহিত্যচর্চা করতে পারেন। এতে আখেরে লাভ হবে। আপনার পরিচিতি বাড়বে, লেখার মান বাড়বে (ভুল হলে নিজেকে শুধরে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।)।

ত্যাগী মনোভাব
লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার চিন্তা করবেন না। আগে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করুন। মনে রাখবেন, কালজয়ী কোন সাহিত্যিকই লেখালেখি করে জীবন চালাতে পারেন নি। জমিদারপুত্র হওয়ায় রবীন্দ্রনাথের রক্ষে। নজরুল, জীবনানন্দ, মধুসূদনও অর্থের অভাবে ধুঁকে ধঁকে মরেছেন। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের দুরবস্থার কথা তো বলাই বাহুল্য।
লেখালেখি করবেন অবশ্যই ত্যাগী মনোভাব নিয়ে, কিছু পাওয়ার আশা না করে। বৈষয়িক কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে সাধনা হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৯
১৯টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×