somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কারও মরামুখ দেখতে পারি না

০১ লা মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কয়েকদিন আগে মা ফোন করে জানালেন এলাকার এক লোক মারা গেছেন। আমাদের বাড়ি থেকে বেশিদূর না ওনার বাড়ি। মাত্র কয়েক মিনিটের রাস্তা। যে কেউ মারা যেতে পারেন। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। চিরদিন তো কেউ বেঁচে থাকে না।

সমস্যাটা হলো, লোকটার জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছিল। রক্তের সম্পর্ক না, তাও এত খারাপ লাগল কেন কে জানে। অবশ্য রক্তসম্বন্ধীয় কারও জন্যই যে খারাপ লাগবে, এমন কোনো কথা কোথাও লেখা নেই। বন্ধু-বান্ধবদের জন্য কি আমাদের খারাপ লাগে না? যাদের সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি, অথচ পছন্দ করি; তাদের জন্যও তো খারাপ লাগে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ যখন মারা যান, আমার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল (আমার একটা কবিতার বই ওনাকে উৎসর্গ করা। বইটায় নুহাশপল্লি নামে একটা কবিতাও আছে। আফসোস ওনি জানতেও পারলেন না)। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে তো প্রায়প্রায়ই স্বপ্নে দেখতাম।

এবার যখন বাড়ি গেলাম, লোকটাকে খুব মিস করলাম। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে প্রায়ই যেতেন। ওনার ছেলেমেয়েরা আমার বাবা-মাকে মামা-মামী ডাকেন। আত্মীয় না হয়েও আমরা যেন আত্মীয়।

লোকটা নেই, কিন্তু ওনার ছেলেমেয়েরা আছে, স্ত্রী আছে। আমাদের বাড়িতে ওদের যাতায়াত আছে।

আমি কখনো ঘরমুখো হব, এই চিন্তা করিনি। হঠাৎ রামের সুমতি হলো। মা-বাবা ছোটোখাটো ঘর তুলছেন। যদিও আমি বলেছিলাম, এসবের কী দরকার? মাটির ঘরই ভালো।
মা আপত্তি জানালেন। ওনার দালানঘরে থাকার শখ। মামারা সহযোগিতা করছেন। আমি কিছু বললাম না। বৃদ্ধ বয়সের শখ। পূরণ হোক।

যাকে নিয়ে কথা বলছি, তার এক ছেলে আমার ছোটবেলার বন্ধু। প্রাইমেরিতে একসঙ্গে পড়েছিলাম। পরে যোগাযোগ তেমন ছিল না। তবে এলাকায় গেলে প্রায়ই দেখা হতো। একটা ব্যাপার হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, সে আমাদের বাড়ির কাজকর্মে সহযোগিতা করছে।

ইট-বালু রাখার জায়গা নেই। এক কাকার জমিতে ফেলার প্রস্তাব দেওয়া হলো। বলা হলো, ওনাকে টাকা-পয়সাও দেওয়া হবে। ওনি সম্মত হলেন না। ওনি আমার আপন কাকা।

অবাক করা ব্যাপার হলো, অন্য একজন ঠিকই জায়গা দিলেন রাস্তার পাশে ওনার বাঁশঝাড়ে। বললেন, দরকার পড়লে কয়েকটা বাঁশও যেন কেটে ফেলি।

আমার মনে পড়ে অনেক বছর আগে বাবা যখন বিদেশ গেলেন, আমাদের খুব খারাপ অবস্থা তখন। মাত্র মাটির ঘর তোলা হয়েছে। টাকার অভাবে দরজা-জানালা লাগানো হয়নি। এক ঝড়ে টিনের চালা উড়ে গেল, পুকুরের মাছ সব ভেসে গেল। কেউ আমাদের সহযোগিতা করেনি, আপন কাকারা দূরে দূরে থেকেছেন। তখন এই কাকা অনেক করেছেন আমাদের জন্য।

হাসান সাহেব ওনার নাম, যাকে নিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম। ওনার সঙ্গে ৩-৪ বার কথা হয়েছে জীবনে। একটা মানুষ প্রতিদিনই আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যায়, তার সঙ্গে সারাজীবনে মাত্র ৩-৪ বার কথা হয়েছে; এটা ভাবলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। আমি নিজেও জানতাম না ওনাকে এত মিস করব।

এলাকায় আরও কয়েকজন মারা গেছেন বিভিন্ন সময়। বাড়িতে থাকলে অনেকেরই শেষকৃত্যে গিয়েছি। তবে কারও মরামুখ দেখিনি। একজন মানুষ আমার সামনে কথা বলছিল, অথচ এখন সাদাকাপড়ে তার সারাশরীর ঢাকা; এটা আমি মানতে পারি না। এই বয়সে এসেও আমার প্রচণ্ড মন খারাপ হয়। আমি জানি তিনি নেই, তবুও কল্পনা করি তিনি আছেন। হয়তো আমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। হয়তো ব্যস্ত আছেন। সবারই তো ব্যস্ততা থাকে, তাই না?

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:০৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×