somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বংশী ভাই

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকটা বাড়ি দূরে হামিদ ক্বারী ভাইদের বাড়ি। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে তার নিত্য যাতায়াত ছিল। স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পড়াতেন। যাওয়ার সময় 'বংশী ভাই' বলে আমাকে ডাক দিতেন। আমি দৌড়ে বাড়ির বাইরে আসতাম আর উনি আমার গাল টিপে দিয়ে চলে যেতেন। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তখনও বুঝতাম না কেন তিনি আমাকে 'বংশী ভাই' বলে ডাকেন। বস্তুতঃ বংশী মানে যে বাঁশি; এটাই জানতাম না।

না জানি আর না বুঝি, নামটা আমার পছন্দ ছিল; সে কথা বলাই বাহুল্য। যখন বুঝলাম বংশী মানে বাঁশি, তখন তো আরও উৎসাহ অনুভব করলাম। এমনকি একসময় বাঁশি বাজানো শেখার তোড়জোরও শুরু করলাম, সর্বোচ্চ চেষ্টাও করলাম। মেলা থেকে নানান ধরনের বাঁশি সংগ্রহ করতাম। তবে বাঁশের বাঁশির প্রতি একটা মোহ তৈরি হয়ে গেল। ময়মনসিংহ সদর বা ভালুকায় থাকতে কয়েকজন বংশীবাদকের শিষ্যত্বও গ্রহণ করলাম, যদিও শেখা হয়নি। কাজটা অত সহজও না।

যাহোক, যার মাধ্যমে বাঁশির প্রতি টান, তাকে বরাবরই মিস করতাম। 'বংশী ভাই' ডাকটা মিস করতাম। ঢাকায় আসার পর আরও বেশি মিস করেছি। কারণ, এ সময়টায় আমার শৈশবের পছন্দের মানুষদের বেশি মনে পড়ত। এখানে তো চেনাজানা কেউ ছিল না। প্রিয় মুখগুলোর ছবি চোখে ভাসত। যখন কারও মৃত্যু সংবাদ শুনতাম, খুব খারাপ লাগত। আমার পছন্দের অনেক মানুষ ছিলেন, যাদের সাথে বছরের পর বছর যোগাযোগ ছিল না। তারা জানতেনও না যে তাদের কত মিস করি। জানাতে সঙ্কোচও লাগত অনেক।

আসলে প্রতিটা মানুষই সেসব মানুষকে মিস করেন, যারা তাদের ভালোবাসেন, দরদ করেন। আমি জীবনে খুব কম ভালোবাসাই পেয়েছি কারও কাছ থেকে। তাই হয়তো সর্বদা স্নেহের কাঙাল ছিলাম। নিজে যা পাইনি, তা শিক্ষার্থী বা ছোট ছেলেমেয়েদের দেওয়ার চেষ্টা করতাম।

আমাদের প্রতিবেশী মজি মুন্সী নামের এক লোক আমাকে 'বাবা' ছাড়া ডাকই দিতেন না। আমি তাকে মজি মুন্সী জ্যাঠা বলে ডাকতাম। উনি মারা যাওয়ার সময় আসার সুযোগ হয়নি। হামিদ ক্বারী ভাইয়ের বাবাও অনেক স্নেহ করতেন। উনি মারা যাওয়ার সময়ও খবর পাইনি। একে একে কত জন মারা গেলেন, আমি আসারই সুযোগ পাইনি অথবা জানতেও পারিনি।

এবার ভাবছিলাম হামিদ ক্বারী ভাইয়ের সাথে দেখা করবই। হঠাৎ সেদিন তার সাথে রাস্তায় দেখা। আমি এক কাজে যাচ্ছিলাম। বললাম, একসময় আমাদের বাড়িতে আসতে হবে। এলেন পরদিন। নজর করে চেয়ে দেখি, আহা ভাইটি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। এমনিতে আমার চেয়ে ২০-২৫ বছরের বড় কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে বয়স ৬৫+। একটা চোখও প্রায় অন্ধ।

কেমনে হলো জানতে চাইলে বললেন, বাঁশ কাটতে গিয়ে কঞ্চির আঘাত লেগেছিল চোখে। ডাক্তার দেখিয়েছেন। কাজ হচ্ছে না। এখন কালো চশমা পরে থাকেন। তার মেয়েদের খবর জানতে চাইলাম। জানালেন, তারা ভালোই আছে। বিয়ে হয়েছে। বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে। মাঝেমধ্যে মা-বাবাকে দেখতে আসে।

চলেন কেমনে জিগ্যেস করলে বলেন দুটো টিউশনি করি। 'দেখেন?' তিনি বলেন, এক চোখে দেখি।

চা-নাস্তা চলে আর আমাদের আলাপ এগোতে থাকে। আমরা শৈশব-কৈশোরে ফিরে যাই। হঠা আমার অনুযোগ, আপনি তো এখন আমাকে বংশী ভাই ডাকেন না। উনি জোরে হেসে উঠেন। এ বিষয়ে কিছুই বলেন না। দম নেন। তারপর বলেন, দোয়া করি তুই ভালো থাক। বিপদআপদ যেন না হয়। আমি তার হাস্যোজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। অনেক মায়া লাগে।

যাওয়ার সময় আমাকে আদর করে যান। আমি যে ছোটটি নেই; উনি ভুলে যান। আমিও ভুলে যাই আসলেই আমি ছোটটি নেই। মনে মনে খুশি হই, যাক অন্তত ভালোবাসার একজন মানুষের সাথে বহু বছর পর দেখা হলো। অনেক কথা হলো। কখন কে আছি, কে নেই তা তো বলা যায় না। যতক্ষণ বেঁচে আছি প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখি। তেমন কিছু করতে না পারলেও দুটো সুখ-দুঃখের কথা বলে জোরে শ্বাস নিই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×