somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বন্ধু রতন

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের বাড়ি থেকে এক বাড়ি পরেই রতনদের বাড়ি। সে আমার ছোটোবেলার বন্ধু। একসাথে প্রাইমেরি স্কুলে পড়ালেখা করেছি। সে ছিল আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। বিকেলে খেলাধুলা করতাম যেমন, দু'জন ভিসিআর দেখার জন্য দূর-দূরান্তে চলে যেতাম। দু'জনই ছিলাম সিনেমার পাগল।

একবার কোনো এক শীতে দু'জন মেলা দেখতে গেলাম। আমাদের বাড়ি থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরত্ব তো হবেই। বেশিও হতে পারে। যে বাজারে মেলা হচ্ছিল, সে বাজারের নাম 'খোলা বাড়ি বাজার'। মেলা ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখলাম কার্ড দিয়ে লোকজন বাজি খেলছে। কেউ কেউ ম্যালা টাকা জিতে যাচ্ছে।

আমি আর রতন খেলার অবস্থা লক্ষ্য করছিলাম। হঠাৎ লোভ চাপল। ধরলাম বাজি। প্রতিবার ১০ টাকা। একবার হারার পর মনে হলো পরেরবার জিততে পারব। এবার ভাবলাম দ্বিতীয়বার নিশ্চয়ই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। কিন্তু হলো না। তিন দান দেওয়ার পর আমার সাথে থাকা ৩৬ টাকার ৩০ টাকা শেষ। আফসোসে পুড়তে লাগলাম। বুঝতে পারলাম লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।

সঙ্গে থাকা ৬ টাকা দিয়ে ২৫০ গ্রাম জিলাপি কিনে খেলাম দু'জন। এরপর বাড়ি ফেরার পালা। খেয়াল করলাম রাত অনেক হয়ে গেছে। এত রাতে বাড়ি আসা যাবে না। তার ওপর শীতে জমে যাচ্ছি। রতন জানাল কিছু দূরে তার নানার বাড়ি। সেখানেই থেকে যাওয়া যেতে পারে।

হাঁটতে হাঁটতে গেলাম তার নানার বাড়ি। বাড়ির সবাই তখন আধঘুমে। আমরা দরজায় কড়া নাড়ার পর একজন দরজা খুললে দেখি খাটে ৭-৮ জন শুয়ে আছেন। ফ্লোরেও ৯-১০ জনের কম হবে না। পাশে মেলা হওয়ায় সম্ভবত অনেক আত্মীয়স্বজন জড়ো হয়েছিল। ঘরে যেহেতু থাকার সুযোগ নেই, উঠানে একটা ভ্যানগাড়ি রাখা ছিল। গায়ে চটের বস্তা জড়িয়ে সেখানেই দু'জন শুয়ে পড়লাম। বাড়ি ফিরলাম পরদিন সকালে।

রতনরা ছিল দুইভাই, একবোন। তিন ভাইবোনের নামের মধ্যে বেশ মিল আছে। বোনের নাম ছিল রহিমা। আর ভাইয়ের নাম রবিন।

রতনের বাবা একটু পাগলাটে স্বভাবের ছিলেন। তেমন কিছু বুঝতেন না। ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতেন। আর রতনের মা গৃহস্থালির কাজকর্ম করতেন। অল্পবয়সেই রতনের বোন রহিমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।

রতন হাইস্কুলে উঠতে পারেনি। তার বাবার সাথে কাজে নেমে গিয়েছিল। তার সাথে আমার যোগাযোগ অবশ্য কমেনি। তার দাদি প্রায়ই আমাদের বাড়ি আসতেন। তাকে আমরা 'বুলুমা' ডাকতাম। তিনি এটাসেটা করে মাকে কাজকর্মে সহযোগিতা করতেন। মা মাঝেমধ্যে নানার বাড়ি চলে গেলে 'বুলুমা' আমাদের সাথে থাকতেন।

এসএসসি দিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়ি ছাড়তে হলো। রতনের সাথে যোগাযোগ বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গেল। একসময় মাস্টার্স শেষ হয়ে গেল। পেটের ধান্ধায় কত জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করলাম! কার কথা মনে থাকে!

ঢাকায় থিতু হওয়ার পর রতনের কথা এক-দু'বার মনে পড়েছিল। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ নেই। সে মোবাইল ব্যবহার করে না। শুনেছিলাম সে নাকি কোথায় আলাদা বাড়ি করেছে।

মাসখানেক আগে বাড়ি গিয়ে তার ব্যাপারে খোঁজ করলাম। মা জানালেন, সে বিয়ে করছে। তার সন্তানও হয়েছে। ভালোই আছে। তবে একটা ঘটনা জেনে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। তার মা আত্মহত্যা করেছেন।

জানা যায়, রতনের ভাই রবিন তার এক খালাতো বোনকে পছন্দ করত। বিয়েও করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার মা রাজি না। অন্য কারও সাথে রবিনের বিয়ে দেবেন। কেন এমন গোঁ ধরলেন কে জানে! ওদিকে রবিনও তো নাছোড়বান্দা। সে খালাতো বোনকেই বিয়ে করবে। পালিয়ে গিয়ে একদিন বিয়ে করেও ফেলে। এ কারণে রাগে-ক্ষোভে তার মা আত্মহত্যা করেন।

ছবিঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৫৬
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×