somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থাকে শুধু অন্ধকার

১৩ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চাকরি হারিয়ে পর্যুদস্ত অবস্থায় মোহন। এখানে-সেখানে সিভি দিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ কোনো কাজ হচ্ছে না। চলছে আপাতত টিউশনি আর কোচিং করে। কিন্তু এভাবে আর কত! এবার স্থায়ী কিছু করা দরকার। বয়সও তো কম হলো না। ত্রিশের কোটায়।

টিউশনি থেকে যা আসে, তাতে চলা কঠিন। কোচিংয়েও একেবারে কম দেয়। বলার মতো না। ঢাকা শহরে চলার মতো না। মূলত নিরুপায় হয়েই করা। অন্য কাজ যে করবে, তারও দক্ষতা নেই।

মাস্টার্সে উঠার পর থেকে এসব বেসরকারি স্কুলে ঢুকে ক্যারিয়ার বরবাদ করে ফেলেছে। অবশ্য কিছু করারও ছিল না। আগে তো বাঁচতে হবে। তার বাঁচার অবলম্বনও ছিল না। যদিও যারা পারে, সর্বাবস্থায়ই পারে। সে পারেনি; এটা তার ব্যর্থতা। তার অনেক বন্ধু তো ঠিকই পেরেছে।

ঢাকায় অনেকে টিউশনি-কোচিং করেও ভালো কিছু করে ফেলেছে। মোহন তেমন কিছু করতে পারেনি। মুগদায় একটা টিউশনি করায়, দেয় মাত্র দুই হাজার টাকা। মালিবাগে একট টিউশনি করায়, সেখান থেকে পায় চার হাজার। দু’ঘণ্টা পড়াতে হয়। সব বিষয়।

কোচিং থেকে ছয় ঘণ্টায় পায় মাত্র ছয় হাজার। টেনেটুনে এভাবেই চলছে জীবন। চলা বলে না এটাকে। কোনোমতে টিকে থাকা বলা ছাড়া আর কিছু বলা যায়?


কিছুদিন আগে ফারহা মৌরিন মৌ নামের একজনের সাথে কথা হয়েছিল। ভয়েস আর্টিস্ট। পেশাদার না অবশ্য। শখের বশে নিজের চ্যানেলে ছাড়েন। ফেসবুকেও আপলোড দেন।

মোহনের সাথে সুখ-দুঃখের আলাপ হয়। একবার মোহনকে বলেছিল সিভি পাঠাতে। কিছু করা যায় কি না দেখবে। মোহন সাথে সাথে সিভি পাঠিয়ে দিল। তার মনে ক্ষীণ আশা কিছু না কিছু হবেই।

একদিন দুপুরে মৌ ফেসবুকে নক করল মোহনকে। বলল, কামাল খোকন নামের একজনের সাথে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করতে। ফেসবুকে তার ঠিকানা দিল।

“মৌ আপনার ঠিকানাটা দিয়েছে।” কামাল খোকনকে মেসেজ দিল মোহন। কামাল খোকন বললেন, “আপনি কি জানেন না কারও সাথে কথা বলার আগে আদাব/সালাম দিতে হয়?”

ঠিকই তো। দৌড়ের ওপর থেকে মেসেজ দিয়েছিল সে। এতকিছু খেয়াল করেনি। তাছাড়া ওর ধারণা ছিল উত্তর পাবে না। এর আগে কতজনকে চাকরির ব্যাপারে কথা বলতে মেসেজ দিল, সিভি দিল; কেউ সাড়া দেয়নি। মোহন ভেবেছিল এবারও হয়তো এমন হবে।

যাহোক, ভদ্রলোকের সাথে কলে কথা হলো মোহনের। ওনি মোহনকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলেন। তেমন সদুত্তর দিতে পারল না সে। এইচআর এর ওপর অনার্স-মাস্টার্স করলেও বহুদিন পড়ালেখার বাইরে সে। কিছুই মনে নেই। ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন সব। তারপর ফারহা মৌরিন মৌ সম্পর্কে কিছু কথাবার্তা বললেন। জানালেন, মৌ খুব কোয়ালিফাইড মেয়ে। জাবি থেকে মাস্টার্স। এতকিছু জানত না মোহন। বেশ সম্ভ্রম জাগল তার প্রতি।


“কামাল সাহেবের সাথে আাপনার কথা হয়েছে?” মৌ মোহনকে জিগ্যেস করল।
“হ্যাঁ।” মোহন বলল।
“এখন আপনাকে একটা নাম্বার দিচ্ছি। আপনি তার সাথে কথা বলুন।”

মোবাইলের মেসেজে নাম্বারটা এলো। যার সাথে কথা বলতে হবে, তার নাম তালাত ইকবাল। মৌ বললেন তাড়াতাড়ি মেসেজ দিতে। মোহন তখন মুগদার টিউশনিতে। ভাবল, পড়ানো শেষেই কল দেবে। ছাত্রীর সামনে চাকরির বিষয়ে কথা বলা ভালো দেখায় না। তাছাড়া মাসের শেষ। অভিভাবক যদি দেখেন শিক্ষক পড়াতে এসে ফোনে কথা বলছেন, টিউশনি চলে যেতে পারে। ঢাকা শহরে টিউশনি পাওয়া যেমন কঠিন, তার চেয়ে কঠিন ধরে রাখা। সামনে ইদ। এমতাবস্থায় খালি হাতে বাড়ি যাওয়া যাবে না।

মৌ মেসেজ দিল। জানতে চাইল তালাত ইকবাল সাহেবের সাথে কথা হলো কি না। না বলতেই ক্ষেপে গেল সে। বলল, “আপনার জন্য কত বড়ো বড়ো লোকের সাথে কথা বলছি আর আপনি হেলা করছেন।”

মোহন বোঝাতে চেষ্টা করল সে টিউশনিতে। এখান থেকে কথা বলা সমীচীন হবে না। তবুও অনেক কথা শোনাল মৌ। বলল, “আপনার সময় জ্ঞান কম। পড়ানোর পর বাইরেও কথা বলা যায়।”

বাইরে যে কথা বলবে, মোহনের মোবাইলের স্পিকারে তো সমস্যা। নিরিবিলি ছাড়া কথা বলা যায় না।


কথা হলো তালাত ইকবাল সাহেবের সাথে। ওনার অফিস বেইলি রোডে। মোহন একদিন গেল সেই অফিসে। ওনি জানালেন, ব্যবস্থা একটা হবে। আপাতত মোহন যেন তার অফিসেই জয়েন করে।

কী কী কাজ করতে হবে, তা বুঝিয়ে দিলেন তিনি। অনেক কথাবার্তাও বললেন। বোঝা গেল, বেশ ওজনদার লোক। গতি একটা হবেই। একদিন একটা ট্রেনিংয়েও গেল মোহন। কাজকর্ম বুঝিয়ে দেওয়া হলো। যদিও তেমন বুঝেনি। তবে তাকে আশ্বস্ত করা হলো, কাজ শুরু হলে আরও ধারণা পাবে।

কাজ শুরু আর হয় না। প্রতিদিন অফিসে গিয়ে বসে থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে এখানে-সেখানে পাঠায়। কিন্তু ডিজিটাল যে প্লাটফর্মের জন্য তাকে নেওয়া, তা আর শুরু হয় না। মোহন ভাবে মৌয়ের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবে কি না। অপেক্ষা করে। তালাত ইকবাল সাহেব বলেন, “অচিরেই শুরু হবে কাজ। মৌয়ের সাথে কথা বলার দরকার নেই। সে আমার মেয়ের মতো। সে যখন তোমাকে পাঠিয়েছে, আমি তোমার ভার নিলাম। টাকা লাগলে বলবে।”

টাকা দরকার বটে। কিন্তু কাজ শুরুই না হলে টাকা চায় কীভাবে। তালাত সাহেব বললেন, “মাস হলে তুমি একটা অ্যামাউন্ট পাবে।”

মাস শেষ হয়। কিন্তু টাকা আর পায় না মোহন। প্রতিদিন অফিসে গিয়ে বসে থাকে। তাকে ঘোরানো হয়। কাজও শুরু হয় না, টাকাও আসে না। মোহন বুঝতে পারে, সে বাটপারের পাল্লায় পড়েছে।


মৌয়ের সাথে কথা বলা দরকার। সেই তো তালাত সাহেবের কাছে পাঠিয়েছিল। কিন্তু কীভাবে কথা শুরু করবে সে। তালাত ইকবাল যে একটা বাটপার; এভাবে বললে কি মৌ রাগ করবে?

কল দিয়েই ফেলল মোহন। নানান কথা বলতে বলতে মূল প্রসঙ্গ এলো। সব খুলে বলল মোহন। মৌ বলল, “তালাত ইকবালের সাথে অনেকদিন কথা হয় না।”

মোহন কী অভিযোগ জানাবে, মৌ এক গাদা অভিযোগ নিয়ে হাজির। জানাল, তালাত না কি তাকে অন্যভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। মোহন কী বলবে বুঝতে পারছিল না। সে ভেবেছিল, তালাত মৌয়ের আত্মীয়। এখন তো দেখা যাচ্ছে তেমন কিছু না। আত্মীয় যদি নাই হবে, মৌ কীভাবে এত আত্মবিশ্বাসের সাথে তালাতের কাছে পাঠাল? এ কি ওজনদারির নমুনা? উপকার করতে গিয়ে আরও ক্ষতি করে ফেলেছে। দুই মাস সময় নষ্ট করেছে। এরমধ্যে চাকরি করবে বলে কোচিং-টিউশনিও ছেড়ে দিয়েছিল মোহন।

কামাল সাহেবের কথাও উঠল। ওনি বিদেশে আছেন। কাজকর্ম নেই। ওনারও একটা চাকরি দরকার। মৌ তার জন্যও কিছু করতে চাচ্ছিলেন। যার নিজেরই চাকরি নেই, সে আবার অন্যের ইন্টারভিউ নেয়, শিষ্টাচারও শেখায়! রীতিমতো বিরক্ত হলো মোহন। মানুষের উপকার করতে পারবে না, তাহলে কেন আশা দেয় এরা? নিজেদের বড়ো মনে করে প্রচার করে কী আনন্দ পায় কে জানে!

মৌ উপদেশ বাণী শোনায়। মেজাজ খারাপ হয় মোহনের। পকেটে টাকা না থাকলে আর পেটে ভাত না থাকলে উপদেশে কাজ হয়? মৌয়ের মতো মানুষ এসব বুঝবে না। আসলে যার ব্যথা সেই বুঝতে পারে। বাকিদের কাছে সেসব নিছক গল্প।

ছবি: নেট
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ১১:৪৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×