somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কব কথা কোকিলের সনে

০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাস্তার পাশ দিয়ে আনমনে হাঁটছিলাম। মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত। পৃথিবীর প্রতি কেমন বিরক্তি জন্মে গেছে। এলোমেলো চিন্তা মাথায় ভর করছিল। এমন সময় একজনকে সামনে দিয়ে যেতে দেখা গেল। খুব চেনা চেনা লাগল তাকে। কে সে?

হ্যাঁ, চিনতে পেরেছি। মনে মনে যাকে অনুমান করেছিলাম, সে-ই। কিন্তু অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মধ্যে। আগেও মোটা ছিল অবশ্য, এখন একটু বেশিই লাগছে। অথচ আমার তেমন পরিবর্তন হয়নি। পঁচিশ বছরের আমি যেমন ছিলাম, এখনও তেমনই আছি। তেরো বছরের সে এত বদলে গেল কী করে?

সাথে কে হেঁটে যায় মধ্যবয়সী লোকটা? তার বর হতে পারে। অনেক আগেই শুনেছিলাম তার বিয়ে হয়ে গেছে।

দু’জন একটা গলির ভেতরে ঢুকল। আমিও তাদের পিছু নিলাম। বাসাটা কোথায় দেখা দরকার।

তালা খুলে তিনতলার এক নম্বর ঘরে প্রবেশ করল তারা। আমি এসে দাঁড়ানোর আগেই দরজা বন্ধ করে দিল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। ভাবলাম, কলিং বেলে চাপ দিই। একটু সুখ-দুঃখের আলাপ করা যাক। চলে আসার পর তার সাথে আর কথা হয়নি। সে কি এখনও নাচে? পড়ালেখা কি চালিয়ে যাচ্ছে? তার ছোটো বোনটা, কী যেন নাম? হ্যাঁ, প্রীতি; তার কী খবর? তার মায়ের সাথে যোগাযোগ আছে?

কলিংবেলে চাপ দিলাম। বাজল কিছুক্ষণ। অথচ কেউ দরজা খুলল না। মনটা খুব খারাপ হলো। অপমানিতও বোধ করলাম। এক পাশে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

একটু পর বারো-তেরো বছরের এক কিশোরী এসে কলিংবেলে চাপ দিল। এবার দরজা খুলে গেল। কিশোরী মেয়েটা ভেতরে ঢুকে গেল। তার সাথে ভেতরে ঢুকতে যাব; এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন আমার কাঁধে হাত রাখল।

“কে?” আমি চিৎকার করে উঠলাম।

পেছনে তাকাতেই দেখি বিপুল। আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বন্ধু। বহুবছর পর তার সাথে দেখা হলো। তার চেহারাটা এখনও মনে আছে আমার, যদিও অনেকটা পরিবর্তন এসে গেছে।

তার সাথে সর্বশেষ যেদিন ফুটবল খেলেছিলাম, সে স্মৃতিও মনে আছে। খুব দৌড়াতে পারত সে। একটা বর্ণ ভুল শিখিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক। সে সেটা শুধরে দিয়েছিল। বর্ণটা ছিল ং। শিক্ষক উচ্চারণ করতেন উনিসকার। আসলে ওটা হবে অনুস্বার।

“এতদিন পর?” বিপুলকে জিগ্যেস করলাম।
সে হাসল। 
“তোমার সাথে অনেক কথা আছে। তার আগে চলো এই বাসা থেকে একটু বেড়িয়ে যাই। তুমি জানো না একটা মেয়েকে আমি খুব পছন্দ করতাম। তার হাসিটা ছিল অসম্ভব সুন্দর। টেনে টেনে কথা বলত যখন, কী যে ভালো লাগত!” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললাম।

বিপুলের মুখটা কালো হয়ে গেল। থমথমে গলায় বলল, “ওরা কেউ তোমার সাথে কথা বলবে না।”
“কেন?” অবাক হয়ে জানতে চাইলাম।
“কারণ, মৃতদের সাথে কেউ কথা বলে না।” বিপুল বলল।

বিপুলের কথা শুনে আমার বিস্ময় কাটে না। একটু দম নিয়ে বলতে লাগল, “মৃতদের বয়স কখনও বাড়ে না। স্থিরচিত্রের ন্যায় একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।”

এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, ওর বয়স এত বাড়ল কীভাবে, যেখানে আমি এখনও আগের মতোই আছি। “আমি কি তাহলে মৃত?” বিপুলকে জিগ্যেস করলাম। 
“হ্যাঁ, তুমি মৃত। জাগতিক সকল চাওয়া-পাওয়ার উর্ধ্বে উঠে গেছ?” বিপুল বলল।
“তুমি আমার কথা বুঝতে পারো কীভাবে? তুমিও কি মৃত?”
“হুঁ। আমিও মৃত। সড়ক দুর্ঘটনায় আমার মৃত্যু হয়েছিল।

দূরে কোথাও কোকিল ডাকছে। বড় সুমধুর সে ধ্বনি। মন-প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে। এত শান্তি কখনও পাইনি। বিপুলকে বললাম, “চলো কোকিলের সাথে কথা কই। লোকালয়ে আর আসব না। আমরা তো এখন অন্যভুবনের বাসিন্দা।”
বিপুল বলল, “চলো।”

আমরা দুই বন্ধু হাত ধরাধরি করে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছি। নাগরিক কোলাহল আর কানে আসছে না।

৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ

ছবি: কোকিল
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্পা এবং দেহ ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে রেগে যাবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৯



পুরো পৃথিবীতে স্পা এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮১ হাজার। এইসব স্পা-গুলোর বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে ইউরোপে। এশিয়া - প্যাসিফিকের দেশগুলোতেও স্পা-এর সংখ্যা কম নয়। ৫১ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে স্পা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×