ব্রাক ব্যাংকের সেবা নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। প্রায়ই এই ব্যাংকটি কারনে-অকারনে টাকা কেটে নিয়ে গ্রাহকদের ঝামেলায় ফেলে। প্রতিকার চাইতে গেলে হাজারও হয়রানি করে। ব্রান্চে যান, কল সেন্টারে ফোন করেন, ইত্যাদি বলে এমন নাজেহাল করে যে, আর কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। এমন অভিজ্ঞতা এই ব্যাংকের প্রায় সব গ্রাহকেরই আছে।
গত বছরের ২ নভেম্বর ইন্টারনেটে একাউন্ট চেক করতে গিয়ে দেখি ২০১০ সালের এসএমএস ব্যাংকিং সেবার জন্য আমার একাউন্ট থেকে ভ্যাট শ ২৩০ টাকা কেটে নিয়েছে। অথচ ২০১০ সালে আমার কোন এসএমএস ব্যাংকিং ছিল না। এমনকি আমি কখনই এই সেবাটি এক্টিভেটও করি নি। তারপরও কেন টাকা কেটে নেয়া হল তা জানতে বা্যাংকের কল সেন্টার ১৬২২১ এ ফোন দিলাম। জনৈক নারী সুললিত কন্ঠে জানালেন, স্যার, এটা সবার একাউন্ট থেকেই কেটে নেয়া হয়েছে। আমি বললাম, আমার তো এসএমএস ব্যাংকিং এক্টিভেট নাই। আর ২০১০ সালের টাকা ২০১১ সালের শেষে এসে কেন কাটা হল? আর এ ধরনের সেবার চার্জ সাধারনত অগ্রীম কেটে নেয়া হয়। তখন ওপাশ বলল, স্যার এটা ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কাটা হয়েছে। আপনার কোন অভিযোগ থাকলে ব্রান্চে যোগাযোগ করেন আর ব্রান্চে লিখিত আবেদন করেন।
বুঝলাম, কাজ হবে না। তারপরও পরেরদিন মিরপুর-১১ ব্রান্চে গিয়ে সব কথা আবার প্রথম থেকে বললাম। সব শুনে আমাকে বলে, স্যার টাকাটা যখন কেটেই নিয়েছে তখন সেবাটি এক বছর ব্যবহার করেন। মাত্র ২৩০টাকাই তো! শুনে আমি থ! বলে কি! এইজন্যই এগুলোকে ব্যাংকে বসিয়েছে। গ্রাহককে বাধ্য করানোর জন্য। আমি যখন বললাম কোন ভাবেই আমি এই টাকা ছাড় দিব না। আমি আমার টাকা ফেরত চাই। তখন কাস্টমার কেয়ারের ঐ লোক বলে যে, স্যার আমাদের এখানে কিছু করার নাই। এটা হেড অফিসের ব্যাপার। আপনি হেড অফিসে যান। আমি বললাম, কল সেন্টার থেকে ব্রান্চে আসতে বলেছে। তখন বলে যে, স্যার, আমি আপনাকে এসএমএস ব্যাংকিং ক্যান্সেল করার একটা ফরম দিচ্ছি, আপনি সেটা পূরণ করে সই দিয়ে যান। দেখি কি হয়। আমি বললাম, আমি তো এসএমএস ব্যাংকিং এক্টিভেটই করি নি, ক্যান্সেল করব কি? তখন বলে যে, স্যার আমাদের করার কিছু নেই।
মেজাজ খারাপ হল প্রচন্ড। অফিসে এসে এরপর নতুন ভাবে এগোলাম। ইন্টারনেট থেকে স্টেটমেন্টের স্ক্রিন শট নিয়ে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের কাছে ইমেল ([email protected]) করলাম, আর সিসি দিলাম ব্রাক ব্যাংকের ইনকোয়ারিতে। মেইলের বডিতে বিস্তারিত লিখলাম। কিছুক্ষণ পরেই আতিউর রহমান, আমার মেইলের রিপ্লাই দিল। তিনি আমাকে ১৬২৩৬ নাম্বারটিতে ফোন দিয়ে অভিযোগ দিতে বললেন। আমিও সাথে সাথে ফোন দিলাম। তারা অভিযোগ রেখে আমার সাথে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য নিল। তারপর বলল, বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করে কি ফল পাই, তা আপনাকে আপডেট করা হবে।
এরপর এসব ঘটনা এবং গভর্ণরের ইমেলের কপি সহ আরেকটা ইমেল করলাম ব্রাক ব্যাংকের ইনকোয়ারিতে ([email protected])। এবার দেখি একটু পর তারাও রিপ্লাই দিল। বিষয়টি ভুল হয়েছে স্বীকার করে, তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোজ নেবে বলে জানাল। উত্তরে আমি বললাম, আমার টাকা ফেরত না পেলে আইনী ঝামেলায় ফেলব। তারপর দিন দেখি ঠিকই একাউন্টে টাকা ফেরত দিয়েছে।
আসলে, ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না।