
মানুষ তার প্রয়োজনে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে । সেই সুবাদে দ্রুত গতির বাহনের চাহিদা বেড়েছে। উন্নত বিশ্ব পেরিয়ে দ্রুত গতির বাহন হেলিকপ্টার আমাদের দেশেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যাত্রী এবং পণ্যসম্ভার পরিবহন , সামরিক কাজে, নির্মাণ কাজে, দমকল, অনুসন্ধান ও উদ্ধার, পর্যটন, চিকিৎসা পরিবহন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, কৃষি, সংবাদ ও মিডিয়া এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষণের কাজে হেলিকপ্টার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া রিফ্লেকশন সিস্মোলজি ও বিনোদনের জন্যও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তাই সময়ের প্রয়োজনেই হোক বা শখের বশেই হোক অনেকেই ইতিমধ্যে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করেছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন। হেলিকপ্টারে ভ্রমণের সময় পাইলটের অসতর্কতা ও যাত্রীদের অজ্ঞতার কারণে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা । তাই আসুন নিরাপদে হেলিকপ্টার ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জেনে নেই।
পাইলট ইন কমান্ডের দ্বায়িত্ব:

যে কোনও ফ্লাইটের আগে হেলিকপ্টারটি উড্ডয়ণ উপযুক্ত কিনা তা রোটরক্রাফট ফ্লাইট ম্যানুয়াল (RFM) অনুসারে পরিদর্শন করা,
পাইলটের অপারেটিং হ্যান্ডবুক (POH), বা অপারেটর বা হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারী সংস্থার সরবরাহকৃত প্রয়োজনীয় ডাটা শীট দেখে নিশ্চিত হওয়া পাইলট ইন কমান্ডের(পিআইসি) দায়িত্ব।
রোটর ঘূর্ণায়মান অবস্থায় হেলিকপ্টারের সকল যাত্রীকে নিরাপদে উঠা-নামার উপায় সম্পর্কে অবহিত হতে হবে এবং পাইলট ইন কমান্ড (PIC) ইঞ্জিন চালু করার পূর্বে এসব তথ্য যাত্রীদের নিশ্চিতভাবে বুঝিয়ে দিবেন।

দূর্ঘটনা এড়াতে হেলিকপ্টারে উঠা ও নামার সময় নিচের বিষয় গুলি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মেনে চলতে হবে:

১। সবসময় পাইলটের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থেকে হেলিকপ্টারের দিকে এগিয়ে যাবেন বা প্রস্থান করবেন। হেলিকপ্টারের পাশ থেকে উঠা-নামা করতে হবে। কেননা হেলিকপ্টারের সামনের দিকে রোটর ব্লেড গুলি অনেক নিচু দিয়ে ঘুরতে থাকে এবং পিছন দিকে টেইল রোটর সহজেই যে কাউকে আহত করতে পারে।

২। পাইলট আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত হবার পর তার নির্দেশ মত হেলিকপ্টারের দিকে এগোবেন।
৩। হেলিকপ্টারের রোটর ব্লেড গুলি ধীরে ঘুরলেও সামনের দিকে ঝুঁকে অগ্রসর হন বা হেলিকপ্টার থেকে নামুন, ভুলেও দৌড়াবেন না ।


৪। কখনো হেলিকপ্টারের পিছনে বা টেইল রোটোরের দিকে যাবেন না।

৫। হেলিকপ্টারের দিকে বা হেলিকপ্টার থেকে কোন কিছু ফেলবেন না।
৬। হেলিকপ্টারের দিকে যাওয়ার সময় হ্যাট বা টুপি পড়ে অগ্রসর হবেন না যা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। হ্যাট, ভ্যানিটি ব্যাগ ও আলগা জিনিসপত্র বা ঢিলা পোশাক শক্ত করে ধরে চলুন। নিচে কোন কাপড় ফেলে রাখবেন না।

৭। হাতের সাহায্যে চোখকে রক্ষা করুন অথবা তির্যক দৃষ্টিতে এগিয়ে যান। ধুলায় যদি হঠাৎ চোখ আচ্ছন্ন হয়ে যায় তবে আরো ঝুকে পড়ুন অথবা বসে পড়ুন এবং সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করুন।

৮। চোখ বন্ধ করে হাতড়ে বা আন্দাজ করে হেলিকপ্টারে উঠা বা নামার চেষ্টা করবেন না।
৯। পাইলটের অনুমতি ব্যতিত পার্ক করা হেলিকপ্টার থেকে ১০০ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
১০। হেলিকপ্টারের ভিতরে অথবা বাহিরে এবং তেলাধারের নিকট ধুমপান থেকে বিরত থাকুন।

১১। কোন যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম বহনের সময় ভূমির সমান্তরালে কোমরের নিচের উচ্চতায় রেখে হেলিকপ্টারের দিকে যাবেন। উপরের দিকে বা ঘাড়ে বহন করবেন না।

১২। ৩০০ফুট বা তার বেশি দূরত্বে থেকে হেলিকপ্টারের টেক-অফ/ল্যান্ডিং দেখুন। কারণ রোটোরের নিম্নমুখী ঘূর্ণন গতি পড়ে থাকা একটি ছোট নুড়ি পাথরকে জোরে ছুড়ে ফেলতে সক্ষম।
১৩। যদি হেলিকপ্টারের কাছে কিছু অস্বাভাবিক কিছু বা অননুমোদিত ব্যক্তি চোখে পড়ে তবে দ্রুত পাইলট বা ফ্লাইট ক্রুকে জানান।
১৪। উড়োজাহাজের ভিতরে অবস্থানকারী যাত্রীগণ পাইলটের মৌখিক সম্মতি না পেলে দরজা খুলবেন না বা উড়োজাহাজ থেকে নামবেন না। সাধারণত হেলিকপ্টার অবতরণের পরে ইঞ্জিন ঠান্ডা হতে তিন মিনিট সময় নেয়। তাই এই সময় পর্যন্ত ধৈর্য্য ধারন করুন. পাইলটের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থেকে হেলিকপ্টার থেকে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যান।
১৫। জোরালো শব্দ থেকে বাঁচার জন্য ইয়ার-মাফ বা ইয়ার-প্লাগ ব্যবহার করতে হবে।

১৬। সমস্ত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন মানচিত্র, নোটবুক, ল্যাপটপ কম্পিউটার, ব্রিফকেসস ইত্যাদি টেকঅফের আগে সুরক্ষিত আছে কিনা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে পাইলটের সহায়তা নিন।
১৭। সর্বোপরি তাড়াহুড়া করবেন না। প্রতিটি পদক্ষেপ খেয়াল করুন। নিজের ও হেলিকপ্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
আপনাদের হেলিকপ্টার ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক ।
ছবি: ইন্টারনেট।
তথ্য সূত্রঃ http://www.faa.gov, http://www.danubewings.com, etc.
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




