somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একি আজব দোয়া?

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিন্তাশীলদের প্রতিঃ
আল্লাহর রসুল নবী বংশকে মুসলমানের কাছে আমানত রেখেছেন, শুধু আমানত নয় তাঁদের ভালবাসতেও স্বনির্ভর অনুরোধ ও হুকুম জারী করেছেন।(৪২-২৩)নবীর আহলে বায়াত ও আল কোরান কখনও একে অপরকে ছাড়বেনা, (তিরমিজি)। ইনারা ব্যতীত আর কেউ অনুসরনীয় নয়। এদের মুখাপেক্ষি থাকতে হবে।
কোরানের ব্যাখ্যায় এবং যে সকল হাদিসে রসুলুল্লাহ (সঃ) কে আমাদের মত মানুষ রুপে অংকিত করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাকটি মিথ্যা হাদীস এবং করানের সেইসব অংশের ব্যাখ্যাগুলো মিথ্যা রচনা।এই সকল মিথ্যা রাজ শক্তি কর্তৃক রচিত মিথ্যা। কোন জাতির মধ্যেই মোমিনগণ তাঁদের নবীকে তাদের মত সাথারন মানুষ মনে করেননা। কেবল মাত্র কাফের যারা তারাই নবীকে তাদের মত সাধারন মানুষ মনে করে। একটা ছোট উদাহরন দিচ্ছিঃ প্রতিদিন রেডিও টেলিভিশনে পাচবার আজানের পর যে মোনাজাতটি পড়া হয় সেখানে বলা হয়ঃ “এই পবিত্র আহ্বান এবং এই নামাযের তুমিই প্রভু। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) লে দান কর সর্বোচ্চ সন্মানিত স্থান, সুমহান মর্যাদা এওবং বেহেস্তের শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদা) তাকে অধিষ্টিত কর যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাকে দিয়েছ অতএব তুমি ভঙ্গ করনা ওয়াদা”।
এখানে নবী পাকের শান মর্যাদাকে কি ছোট করে দেখা হয়নাই? আমাদের মত নাখাস্তা পাপী মানুষেরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত আযানের সময় আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছি-হে আল্লাহ রসুলের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দাও। রসুলের মর্যাদা কি কোনদিক দিয়ে কমে যাবে? আল্লাহ যাঁকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করে সৃষ্টিতে পাঠিয়েছেন তাঁর আবার নতুন করে মর্যাদা বৃদ্ধির কি হল? তাও আবার পাপী বান্দাদের দ্বারা, এগুলো কোন ধরনের ভীমরতি? তোমাদের ওয়াদা মত মোকামে মাহামুদায় পৌছাও। আমরা প্রতিদিন দোয়া করছি আল্লাহর কাছে রসুল (দঃ) কে মোকামে মাহামুদায় অধিষ্টিত করার জন্য। মোনাজাতের অর্থ অনুযায়ী দেখা যায়, যিনি এখনো মোকামে মাহামুদাতে অধিষ্টিত হতে পারেননি, তিনি কি ভাবে তার উম্মতকে শাফায়াত করবেন?(নাউজুবিল্লা)এজিদের পা চাটা দোসর কর্তৃক এই মোনাজাত রচিত হয়েছে। এরকম বহু ইচ্ছাকৃত ভুল নবী ও নবী বংশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা কএ রেখেছে।
যেখানে আল্লাহ [পাক বলেছেন, লা-ওলাকা লাম্মা, খালাকতুল আফলাখ ওলাম্মা আজহারতুর রবুবিয়াতা”। তোমাকে নবি (সঃ) প্রকাশ না করলে রবুবিয়াত প্রভুত্ব প্রকাশ করতাম না। মোহাম্মাদ (সঃ) সৃষ্টি না করলে আমি আসমান সমুহ সৃষ্টি করতাম না। যিনি রহমাতুল্লিল আলামিন, সমগ্র আলমের জন্য রহমত স্বরুপ। যার শাফায়াত ব্যতিত কারও মুক্তি নাই। যার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে মকামে মাহমুদা অর্থাৎ প্রশংসিত মোকাম। যিনি খুদ্ মালিক ঐ প্রশংসিত মোকামের। যিনি আল্লাহর সঙ্গে একই গুনে গুনান্বিত, যেখানে আল্লাহর সকল জ্ঞানের উৎস আর রসুল হলেন সকল জ্ঞানের অধিকারী, যেখানে আল্লাহ রসুলের দুরত্ব দুই ধনুকের ব্যবাধান (অর্থাৎ বৃত্ত) নিকটে অথবা আরও নিকতে বলা হয়েছে, আল্লাহ এবং রসুলের কথা যে আলাদা মনে করে সে কাফের(সুরা নিসাঃ১৫০-১৫২)।
১। وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
আমিত তোমাক সমগ্র মানব জাতির প্রতি সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরুপে প্রেরণ করিয়াছি অধিকাংশ মানুষ জানেনা (সুরা সাবাঃ২৮)
২।وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
রসুলাল্লাহর ভিতর রয়েছে উত্তম আদর্শ (সুরা আল-আহযাবঃ২১)
৩।আমত তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি রহমত স্বরুপ প্রেরন করেছি (সুরা আম্বিয়াঃ১০৭)
আবার আমরা আরও পাই “মাইউতির রসুলা ফাকাদ আতা আল্লাহ”- যে রসুলের অনুগত্য করল সে আল্লাহর অনুগত্য করল। সকল নবীদের যিনি সীল মোহর দাতা, সকল জাতীয় গ্রন্থে যে মোহাম্মদের আগমনের কথা উল্লেখ রয়েছে, যার নুর থেকে আমরা সহ আঠারো হাজার জগত সমুহ সৃষ্টি হয়েছে, যিনি বলেছেন, “মান রায়ানি ফাকাদ রায়াল হক্” যে আমাকে দেখেছে সে আল্লাহকে দর্শন করেছে। যেখানে মৌলিকভাবে মোহাম্মদ (সঃ) এবং আলে মোহাম্মদের উপর আত্নসমর্পন থাকতে হবে(৪২-২৩)সেই মোহাম্মদকে সাধারন মানুষ হিসাবে চিন্তা করা কাফের ব্যতিত কিছুই নয়। যদিও এখনও সৌদি আরবের অধিকাংস বাদশা, আলেমরা এসকল কথা কানেই নিতে পারেনা, কেননা তাদেরই উত্তরসুরীরা (ইয়াজিদ/মোয়াবীয়া)এ সকল কথা কর্নপাত করতে পারতনা আর তাদের দ্বারাই ইসলাম প্রচারিত। এরা ওহাবী । এরা নবী মানে না বলতে গেলে, নবী ছিলেন চলে গেছেন কাজ শেষ হয়ে যাবার পর…(নাউজুবিল্লাহ)। ভুল্ভ্রান্তি করা হয়েছে। নবীকে যদি সাধারন মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করা যায় তাহলে নবী বংশের গুরুত্ব কমে যায়। কি আজব মুসলমান জাতি, যাদের রক্ত দ্বারা সৃষ্টি এই মোহাম্মদি ইসলাম, যাদের অবদানে এই ইসলাম সেই তাদের একটু সন্মান করতে দেখলেই অধিকাংশ মুসলিম গালাগালি দিয়ে বসে। শিয়া বলে দূরে সরে দেয়। নবী বংশকে ভালবাসাই আল্লাহকে ভালবাসা, প্রমান কোরান।যদিও এর ব্যাখ্যা ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। মুজিব দেশ স্বাধীন করেছিল আজ তার ছেলে মেয়ে নাতি নাতনী সবাই সেইরুপ সন্মান পাচ্ছে, কত কি আঈন, কত কি …।আর এদিকে যেই নবী না আসলে সৃষ্টি হতনা কিছুই সেখানে…ভাই বলার কিছুই নাই। যদিও ওহাবী মতবাদ বলে থাকেন এই হাদীস মিথ্যা। তারা গাছের গোড়া কেটে আগায় জল ঢেলে যাচ্ছে। যে জাতী তার নবীকে উচ্চাসনে বসাতে জানেনা, নবীর মর্যাদা দিতে জানেনা, নবীর মাহাত্ন্য ভেদ উপলব্ধি করতে জানেনা, নবীকে সাধারন মানুষ হিসাবে মনে করে, সে জাতীর কপালে ইহুদী নাছারাদের লাথি, ঝাটা, ছাড়া আর কি প্রাপ্য হতে পারে, তার প্রমানত পেট্রো ডলারের দেশেই পাচ্ছেন। ছোট একটা ইহুদী রাষ্ট্র সমগ্র আরব মুসলিম বিশ্বকে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে।

এই একটা ছোট বিষয় বুঝতে যদি এমন সময় লাগে…। যাইহোক জিকির আর কোরান এক নয়। জিকির করা হল স্মরণ ও সংযোগ। স্মরনে যার শুরু, সংযোগে তার পরিনতি। আর কোরান হলো ওহী কালাম। জিকির যুগে যুগে আসবে, থাকবে, মানুষের অন্তরে, মস্তিষ্কে খোদার গুনগান, শক্তি আসবে যাবে। আর যেই কোরান নাজেল হয়েছে তা’তো নাজেল হয়েই গেছে। দুঃখ যে কোন শিক্ষিত মানুষ যদি এই জিনিস না বুঝে। কপাল চাপড়াই এই কারনেই। মানলাম মাদ্রাসায় পড়ার ঢং হয়ত ভাল না, সেখানে সব টিয়া পাখির মত (নজ্রুলের কবিতার মতঃ খাচায় বসে টিয়া চানা খায় আর গায় শিখানো বল…”)। তাই বলে সভ্য শিক্ষিত সমাজও এই ক্ষুদ্র জিনিস বুঝতে পারেনা।
যারা এই জিনিস নিয়ে তর্ক করে তাদেরকে বুঝানো হল বোকামি বলে আমি মনে করি।একটা গল্প বলিঃ
সার্কাসে যেই হাতি পোষা হয় সেই হাতিগুলোকে ছোট কাল থেকেই লালন পালন করা হয়। বাচ্চা হাতি খুব চঞ্চল হয়, তাই তারে খুব মোটা এক ৬ফুট শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয় যেন ছুটে না যায়। এই বাচ্চা হাতি খুব টানাটানি করে ছুটতে চাইলেও পারেনা। যখন সে বড় হয় তখন ঐ হাতিকে খুব পাতলা এক দড়ি দিয়ে বেধে রাখলেও ঐ হাতি আর ছুটে যায় না। অথচ ঐ দড়ি ছিড়তে তার কোন কষ্টই করতে হয়না। কিন্তু তার মাথায় রয়ে গেছে ঐ বাচ্চা কালের কথা। তারপর যদি ঐখানে আগুনো ধরে তবুও হাতি ঐ ৬ফুটের বাইরে যাবেনা, বরং বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে চলে আসবে। আমাদের মুসলমান সমাজের অবস্থা ঐরকম। যুক্তি, বাস্তব কথা বললেও ওই গোদবাধা কথা মালা থেকে সরে এসে মুক্ত চিন্তা করার ক্ষমতা নাই। আর ক্ষমতা নাই বলেই অন্য ধর্মের উপর হিংসা টেনে আনে, ঐ ধর্ম খারাপ, সেই ধর্ম খারাপ…।যাইহোক সবাইকে আহবান আসুন সত্য মুক্ত চিন্তা করি, কাউকে ঘৃনা, বা খোটা না মেরে আলোচনা করি মুক্ত মন নিয়ে।
জিকির আর কোরান এক নয় ইহা শিক্ষিত সমাজ বুঝলেও তারা মানতে চায়না, কেন জানিনা, হয়ত ওই ৬ফুটের শিকল…।প্রথম আমরা কোরান থেকে এমন কয়েকটি বাক্যের উদ্ধৃতি দিব যেগুলো মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ (সঃ) কে একজন মহাপুরুষ, অবতার মহামানব রুপে পরিচিত করেছেন।
“আমিতো তোমাকে সমগ্র মানব জাতীর প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরুপে প্রেরণ করেছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেনা”।(৩৪-২৮)
“রসুলাল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ(৩৩-২১)
“আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমত স্বরুপ প্রেরন করেছি”(২১-১০৭)
“তুমি অবশ্যই মহৎ চরিত্রের উচ্চতম স্তরে অধিষ্টিত”(৬৮-৪)
“দেখছেন, তারা আপনাকে দেখছে অথচ দেখছে না( অর্থাৎ চিনতে পারছেনা)(৭-১৯৮)
উপরুক্ত বাক্য সমুহ থেকে আমরা এমন ধারনা নিতে পারি যে, মহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (আ) আমাদের মতো সাধারন মানুষ ছিলেননা, তিনি ছিলেন একজন অবতার মহা পুরুষ।আবার কোরানে এমন কতগুলো বাক্য রয়েছে যা মহানবীর প্রতি অপমানজনক কথা বলে ধারনা করা হয়। নিন্মে তারই কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
“আমিত তোমাদের মতই একজন সাধারন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদিগের ইলাহ, একমাত্র ইলাহ”(১৮-১১০)
ব্যাখ্যাঃ ‘ইন্না’ অর্থ অবশ্যই। ‘মা’ অর্থ না, যাহা, কি। ‘মা’ শব্দটির অর্থ ‘না’ ধরলে “কুল ইন্নামা আনা বাসারুল মিছলেকুম” এর অর্থ হনে, “বল আমি তোমাদের মত মানুষ নই”। আমার ‘মা’ শব্দটির অর্থ ‘কি’ ধরলে অনুবাদ দাড়ায় “বল, আমি কি তোমাদের মত মানুষ”?আবার ‘যাহা’ ধরলে দাঁড়ায়ঃ “বল আমি যাহা-তাহা হল আমি তোমাদের মত মানুষ”।
একজন রসুল কখনোই আমাদের মত সাধারন মানুষ হতে পারেনা। সাধন ভজন করে নবী হওয়া যায় না। মসজিদ মাদ্রাসায় পড়িয়ে নবী রসুল বানানো যায়না। কোরানে আমরা দেখতে পাইঃ শিশু মুসা নবীকে (আ) ফেরাউনের হাত থেকে বাচানোর জন্য তাঁর মায়ের অন্তরে ইঙ্গিতে নির্দেশ দিলেন শিশুটিকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার জন্য। তিন দিনের ঈসা (আ) দোলনায় শুয়ে কথা বলেছিলেন “আমি একজন রসুল এবং আমি কেতাব প্রাপ্ত”। তাহলে নবী রসুল কখনোই সাধারন হতে পারেনা। মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (স) তাহলে কি সাধারন হয়? ইহাত সুধু কোরান থেকে উদাহরন দিচ্ছি। হাদীস উল্লেখ করলাম না।
“বল, আমি তো নতুন রসুল নহি। আমি জানি না, আমার ও তোমাদিগের ব্যাপার কি করা হবে। আমি আমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ হয় কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র” (৪৬-৯)
বাক্যটির অনুবাদ যেভাবে করা হয়েছে তাতে রসুল (স) আমাদের মত সাধারান মানুষ ছাড়া আর কিছুই ভাবা যায়না। কিন্তু হুবুহু বাংলা করে দেখি কি দাড়ায়ঃ রসুলগণের মধ্যে ( অর্থাৎ পদ্ধতির মধ্যে) আমি বেদাত (অর্থাৎ নতুন বা অখাটি) একজন নহি (বরং আমি সনাতন পদ্ধতি সম্পন্ন)এবং যা আমি দেখি আমার সঙ্গে যা ক্রিয়া করা হয় তাহাই, তোমাদের সঙ্গের ক্রিয়া নয়। আমার নিকট যা ওহী হতেই থাকে আমি কেবল তাই অনুসরন করি এবং আমি একজন স্পষ্ট সাবধানকারী ব্যতিত নই।
“হে নবী, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য প্রত্যাক্ষানকারী ও কপটাচারীগনের অনুসরন করিও না”(৩৩-১)
বাক্যটি সুরা আহযাবের প্রথম আয়াত।সুরা আহযাব মদীনায় অবতীর্ন। মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার পর সুরা বাকারা, সুরা আনফাল এবং সুরা আল ইমরানের মত বড় বড় সুরা অবতীর্ন হয়। ইত মধ্যে মক্কা জীবনের ৮৮টি এবং হিজরতের পর মদীনার জিবনে তিনটি সুরা নাজেল হয়। নাজেলের ধারা অনুসারে ইহা ৯২ নং সুরা। ইহা খন্দকের যুদ্ধের পর ৬২৭ খ্রিষ্টব্দে নাজেল হয়। সুরা আহযাব অবতীর্ন হবার কালটি তাঁর দ্বারা ইসলাম প্রচারের শেষ্কাল বলা যেতে পারে। ইতোমধ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য তায়েফে তাঁকে ইষ্টক বর্ষণে রক্তাক্ত হতে হয়েছে, উহুদের ময়দানে তাঁর পবিত্র দানদান শহীদ হয়েছে, শত্রুর তরবারীর আঘাতে মাথায় শিরস্ত্রান দেবে গেছে, আল্লাহর বানী জনগনের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য তাঁকে তাঁর জন্মভুমি ত্যাগ করে হিজরত করতে হয়েছে। তিনি ছিলেন ধৈর্য ও সহনশীলতার মূর্ত প্রতীক।
সুরা আহযাব অবতীর্ন হয় ৬২৭ খ্রিষ্টব্দে। ৪০ বছর বয়স থেকে তাঁর প্রতি অহি আসতে শুরু করে। উপরুক্ত আয়াত যদি আমরা রসুল (আ) এর নির্দেশ হিসাবে ধরে নেই, তবে এই ১৭টি বছর তিনি কোন্ ইসলাম প্রচার করলেন? নবিজি নিজেই যদি তখনো এরকম বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন, তবে জনগনকে তিনি কি হেদায়েত দান করলেন? সতেরো বছরে যার হলো না, তার তো সারা জিন্দেগীতে হবার কথা নয়।
তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান (রাঃ)-এর শাসনামলে তিন সদস্যের একটি কোরান বোর্ড গঠন করা হয়। এক সরকারী ঘোষনা মোতাবেক সারা রাজ্যময় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় কোরানের অংশবিশেষ যা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ছড়ায়ে-ছিটিয়ে রক্ষিত ছিলো তা সংগৃহিত হয়। কোরান বোর্ড কর্তৃক নাজেলের ধারা অনুসারে নয় বরং তাদের বিবেচনা গুরুত্ব অনুসারে সাজায়ে কোরান সংকলন করা হয়।
কোরান নাজেল হয়েছিল অহির মাধ্যমে, অহিসমুহ আল্লাহ প্রদত্ত বানী। কিন্তু কোরান সংকলনে তো আসমান হতে কোনো ফেরেশতা নেমে এসে করে দিয়ে যাননি যে, তা’তে বিন্দুমাত্রও ভুল-চুক হবার কোনো অবকাশ নেই। তবে যে বাক্যটির উপর নির্ভর করে এক শ্রেনীয় মুসলমানগণ ধারনা করে যে কোরানে ভুল-চুক হবার কোনো অবকাশ নেই, তা হলো; সুরা হিজরের নয় নম্বর বাক্যটি। এখানে বলা হয়েছেঃ
“আমিই কোরান নাজেল করেছি এবং আমিই ইহার সংরক্ষণকারী”(১৫-৯)
অভিদানগতভাবে আরবি “জিকির” শব্দটির অর্থ, স্মরণ ও সংযোগ। স্মরন হতে আরম্ভ করে সংযোগে এর পরিনতি। কিন্তু আরবীতে কোরান বলে কোন শব্দই নাই, অথচ আলেমরা একে বলে বসল কোরান আর জিকির এক জিনিস। অবাক লাগে যখন শিক্ষিত মানুষেরা এই সামান্য পার্থক্য বুঝতে পারেনা। কোরান কি আর জিকির কি? এইভাবে ভুল ব্যাখ্যায় ভরপুর।
“খলীফা ওসমান (রাঃ)-এর স্থায়ী কৃতিত্ব হলো পবিত্র কোরানের একত্রিকরণ। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কুফার বিদ্রোহ তাঁর এ অবদানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয় এবং পরিনামে তার মৃত্যু ডেকে আনে। কুফার পন্ডিতগণ কোরানের মূল পরিবর্তন করে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে প্রেরিত আয়াতগুলো বিনষ্ট করার দোষে খলিফা উসমানকে অভিযুক্ত করেন”।(ইয়াহিয়া আরমাজানি কর্তৃক প্রনীত এবং মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক কর্তৃক অনুদিত বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত, “মধ্যপ্রাচ্যঃ অতীত ও বর্তমান” পৃঃ নং-৯৮ হতে উদ্ধৃত)। ইতিহাসের একথাটিকে সমর্থন জাগায় একটি জনশ্রুতি, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে, তা কোরানের আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬টি। কিন্তু হযরত ওসমান (রাঃ) কর্তৃক সংকলিত কোরানের রয়েছে ৬২৩৬ টি। তা’হলে বাকি ৪৩০ টি আয়াত গেলো কোথায়?
আমাদের আলোচ্য আয়াতটি সম্পর্কেও মন সন্দেহের দোলায় দুলতে থাকে। কোনো কোনো তফসিরকার, যদিও তাদের সংখ্যা খুবই কম, তারা বলে থাকেন, “ইয়া আইয়্যুহান নাবি” ও “এত্তাকিল্লাহা” এর মাঝখানে কুল শব্দটি ছিল।কোন অজ্ঞাত কারনে কুল শব্দটি তার স্থান করে নিতে পারেনি। ফলে যা হবার হয়েছে। যে হেদায়েত হতো সাধারন জনগনের উপর, তা বর্তায়েছে খোদ আল্লাহর রসুলুল্লাহর(আ) উপর। অনুবাদটির হুবুহু হবেঃ “হে নবী বলে দিন, তোমরা আল্লাহকে বয় কর এবং কাফের মুনাফেকের অনুসরণ কর না”। এখানে ‘কুল’ শব্দটি যদি না থাকে তাহলে নবিজীকে অবশ্যই গুনাহর খাতায় অধিন ভাবতে হবে।যিনি হাসরের ময়দানে সকল উম্মতকে শাফায়াত করবেন, শুধু উম্মত নয় বরং যত নবী রসুল, ওলী আউলিয়া আছেন সকলের শাফায়াত কারী, তিনি সাধারন মানুষ হয় কিভাবে? হাদীসের কোন উদাহরনই দিলাম না।
যিনি রহমত স্বরুপ এই দুনিয়ার উপর, তিনি সাধারন মানুষ হয় কিভাবে? যেই মোহাম্মদ আসার আগমন সৃষ্টির পুর্বেই ঘোষনা হয়ে গেল, যুগে যুগে সকল নবী রসুল যাঁর গুনগানে সর্বদা বিধিব্যাস্ত, যার আগমন বার্তা সকলে জানত, যার আশায় সকল কিছু স্বার্থক, তিনি সাধারন মানুষ কিভাবে হয়? সম্ভবত রহমত স্বরুপ শব্দটিও অনেকে বুঝতে অক্ষম। কেউ কেউ হিসাব মিলাতে না পেরে বলেন, তিনি মানুষই ছিলেন তবে মর্যাদা অনেক উপরে। কিন্তু সেই মানুষ কোন মানুষ সেই মানুষ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান হয় নাই। ইসা (আ) মৃতকে জীবিত করে দেন, সেখানে আমাদের নবী …।
পরবর্তিতে জানাব কোরান কি ইনশাল্লাহ। যদিও এসব পড়া সবার জন্য নয়। অনেকে হয়ত আমার এই লেখা পড়েই নাউজুবিল্লাহ পড়তে পড়তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ অনেক কিছু ভেবে বসছে। তারা আসলে মন দিয়ে মাথা খাটায় পড়ছে না। মন দিয়ে মাথা খাটায় দুই তিনবার পড়ে নিজের ভিতর চিন্তা করুক আশা রাখি তাও ভালো কাজের প্রশ্ন মাথায় আসবে, নয়ত উদ্ভট প্রশ্ন শুরু করবে।
নবী (আ) সম্পর্কে লেখার বা তাঁর গুনকীর্তন করার ভাষা, জ্ঞান, সাহস, ক্ষমতা আমার মত ক্ষুদ্র পিপিলিকার নাই।
সুরা নিসায় বলা হচ্ছেঃ “যারা আল্লাহ ও রাসুলদের সহিত বিভেদ (পার্থক্য) করে, তারা কাফের”
সালাম বিষয়টা একটু জানা দরকার। সালাম দেয়া অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষন হোক, মানে কাউকে আমরা শান্তি কামনা করছি, আল্লাহর রহমত কামনা করছি, আল্লাহ যেন শান্তি দেন এই জাতীয়। খুব সহজ ভাষায় বলছি তাই আবার ভাষাগত ভুল ক্ষমা চোখে দেখবেন,
এখন জানা দরকার নবী (সঃ) কি অশান্তিতে আছেন? উনার কি শান্তির প্রয়োজন ? উনি কি কখনো বলেছেন? যে নিজেই রহমতের উৎস, যিনি এই বিশ্বে শান্তি নিয়ে আসলেন তার উপর আপনে কি শান্তির দোয়া করবেন? বলেন? ইহা কি শোভা পায়? বরং তার সালাম পাবার আশায় আমরা মগ্ন থাকতে পারি বলে আমি মনে করি। তাইলেই জীবন স্বার্থক। এখানে আমার ইহাই মনে হয়েছে, তবে আপনারা কেউ দিতে চাইলে দিতে পারেন, তবে চিন্তা করার দায়িত্ব আপনাদের। ভেবে চিন্তা করে কাজ করাই মানুষের কাজ। নবী (স) কে সালাম দেয়া ব্যপারটা বুঝা দরকার। চিন্তার খোরাক দেয়া যেতে পারে, চিন্তা করায় দেয়া যায়না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×