somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের বলিসমূহঃ সেই একই অপরাধ করে ফেললাম আমিও

০৮ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরুষতান্ত্রিকতার আমার দেখা প্রথম বলি আমার মা। বাবা যেহেতু ডিফেন্সের ছিলেন। বাসায় আসতেন কম। যখন বাসায় আসতেন আমাদের বাসায় তখন ঈদের ধুম পড়ে যেতো। মায়ের তখন কত কাজ। স্বামীর জন্য এটা করেন ওটা করেন। চুলোর ধুয়ো মায়ের আঁচলে মাখা-মাখি করতো। কিন্তু শেষ রক্ষা হতো না। আমার মনে নেই কেন, এটুকু মনে আছে আমি প্রায়ই মাকে দেখতাম বিছানায় উপুর হয়ে পড়ে ডুকরে-ডুকরে কাঁদছেন।
এরপর বাবার সাথে বাহিরে বাহিরে ঘোরা। ঠাঁকুরগাও সদরে যখন থাকতাম তখন আমার বিয়স বোঁধহয় সাত। যেহেতু কিন্ডার গার্টেনে পরতাম। পড়ার সাথি জুঁই এর আম্মু ছিলেন আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভালো আম্মু। বাচ্চাদের কোনদিন পড়তে বসতে পর্যন্ত বলতেন না। বকতেন না, মারতেন না। সে আন্টি আন্টি একদিন গাঁয়ে আগুন দিলেন। কারন জানতে আমার অনেকদিন লেগেছিলো। বিশেষ বড় কারন না, আবার কোন কারনও না। তখন ঠাঁকুরগাও স্টেডিয়ামের কাছে যে হল ছিলো। যতদুর সম্ভব মনে পড়ে হলটির নাম বলাকা হল। সেখানে তখন চলছিলো পিতা-মাতার সন্তান নামের একটা বাংলা সিনেমা। তিনি চাচাকে ধরে ছিলেন সে সিনেমা দেখতে যাবেন। চাচা ধার্মিক মানুষ ছিলেন বোধহয়। বৌয়ের আবদার রাখতে পারেন নাই। তারপও আন্টি চুপ করে আমাদের পরিবারের সাথে অর্থাৎ বাবা-মা, আমি, আমার ছোটভাই, ছোট মামা, জুঁই এবং জুইয়ের আম্মু ও আরো জনা তিনেক পুরুষ মহিলা দল বেঁধে সিনেমা দেখতে গেলাম। সিনেমা দেখে মহিলারা চোখ মুছলো হলে বসেই। হল থেকে বেড়িয়ে এসে আমরা বড় বড় রুটির সমান পাপরও খেলাম। সে রাতেই আন্টি শরীরে আগুন দিলেন। আমি কাঁদিনি কারন তখন আমার এই সব দেখে কাঁদার বয়স হয়নি।
পীরগঞ্জ ঠাঁকুরগাও জেলারই একটা থানা। সেখানে যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম বাড়িওয়ালার দুই বৌ। বড় বৌয়ের মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বৌয়ের ছেলে-মেয়েরা আমার মতই আট বছরের বালক কিংবা বালিকা। হটাৎ একরাতে ছোট বৌ ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চলে গেলেন বাপের বাড়ি। আমরা তাকে আর ওখানে কোনদিন দেখিনি। কিন্তু দেখেছি বাড়িওয়ালার তৃতীয় বৌকে। আমি দেখেছিলাম অপূর্ব সুন্দর এক কিশোরীকে।
সাল ২০০০। আমি তখন পুরো দস্তুর কিশোর। ক্লাস নাইনে পড়ি। নীলফামারীর জেলা সদরে যে বাসায় থাকতাম আমরা ছাড়া আর একটা পরিবার থাকতো। শুধু আফসানা আন্টি। তার দুই সন্তানের একজন তার সাথে থাকেন থাকে তার বাবার কাছে। বয়স হবে চার থেকে পাঁচ। দ্বিতীয়টি তখন তার গর্ভে। আল্ট্রাস্নোগ্রাম করে এসে তিনি সবাইকে জানালেন তার আবার মেয়ে হবে। এবার তার নাম তিনি দেবেন গ্রন্থনা। আমার কাছেও নামটি খুব সুন্দর লাগলো। গ্রন্থণা! বাহ্‌ কি সুন্দর বাংলা নাম। আফসানা আন্টির স্বামীর সাথে না থাকা স্বামী এসে তাকে ডি.এন্ড.সি করাতে বললেন। কারণ তার কন্যা সন্তানের প্রয়োজন নেই। এই ভাবেই চলছিলো। যেদিন আজ আটই জুন গ্রন্থনার জন্মদিন। সন্ধ্যায় সাধারণ ধাত্রীর হাতে জন্ম হলো তার। সন্তানটিকে গোসল করে সবাই একবার করে কোলে নিচ্ছিলো। আমার কোলে যখন আমি গ্রন্থনাকে নিলাম তখন ভেতর থেকে অদ্ভুদ এক মোহ অনুভব করছিলাম। হয়তো আমার কোন কোন বোন ছিলো না এ মোহ সে বোনের মোহের ভেতরেই পড়ে। আন্টি বললেন ‘গ্রন্থনা তোর বোন রাসেল! তুই ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে বড় করবি।’ আমার কোল থেকে কে নিলো গ্রন্থনাকে তা বলতে পারবো না। আফসানা আন্টির স্বামী যখন এলেন তখন গ্রন্থনাকে তার কোলে তুলে দেওয়া হলো। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি দুই ঘন্টার শিশুটিকে আছেড়ে ফেললেন মেঝেতে। এর পর গোটা বাড়িতে। লোকটাকে পেটানো হলো। পুলিশে দেওয়া হলো। আর গ্রন্থনা পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আজো বেঁচে আছে। সময়ের সাথে সাথে আফসানা আন্টির সাথে আমাদের আর কোন যোগাযোগ নেই।
২০০২-এ এলাম জন্মস্থান রাজশাহীতে। তারপর থেকে এখানেই আছি। প্রতিদিনই কোন না কোন ভাবে নারীদের নির্যাতিত হতে দেখছি। এত্ত দেখছি যে যা লিখে শেষ করা যাবে না। বাড়ির পাশে আসমা খালা। আট বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাবা মায়ের খেয়ে যাচ্ছেন। দিনের পর দিন মাতাল স্বামীর কোন খোঁজ নেই। শোনা যায় ঢাকায় কোন এক গার্মেন্টস ব্যাবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করে বেশ সুখেই আছেন।
হামিদ আঙ্কেল রিটায়ার্ড পুলিশ কনস্টেবল। হাঁপানির রোগী। তার সাথে যখন দেখা করতে যাই নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না। এক অতালাকপ্রাপ্তা মেয়ে আর তার সন্তান, দুই নেশা গ্রস্থ ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। পেনশনের আড়াই হাজার টাকায় পরিবারটা কিভাবে চলে এর বাজেট বিশ্লষণ আমাদের অর্থমন্ত্রী কি দিতে পারবেন? আমরা কেউ চাইও না। তার কন্যার তালাকই এখন তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। কিন্তু তা তিনি পাচ্ছেন না। কারন ইসলাম ধর্ম মেয়েদের তালাকের অধিকার দিলেও পেঁচিয়ে রেখে দিয়েছে। অর্থের অভাবে ভালো একটা উকিল ধরে এটা করতেও পারছেন না।
গতকাল রাতের কথা বলছি। বাড়ির পেছনে হাসিব সাহেবদের বাসা। কেউ কিছু না বললেও সবাই জানে ভারতীয় পন্য পদ্মা নদীর নৌকার পাতাটনের নিচে করে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে আনাই তার কাজ। এমন লোক রাজশাহীতে হাজার হাজার আছে। অনেককেই অনেকে চেনে। গত রোজার ঈদে এদের কাছ থেকেই চাঁদা চাইতে গিয়ে পুলিশের আট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাসপেন্ড হলো।
গতকাল তার বাড়িতে তার পরিবারের কোন লোক ছিলো না। তার মেয়ের বয়সী এক মেয়ে তিনি তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের দিয়ে কোথা থেকে ধরে আনালেন। গভীর রাতে মেয়েটির চেঁচামেচিতে আশে-পাশের লোকজনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। লোক জনকে তিনি সামলালেন এই বলে যে ‘তারই এক কর্মচারীর প্রেমীকা। তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে বিয়ে করার জন্য তিনি তাদের বিয়ে দিতে চাইছেন।’
প্রশ্ন হলো মেয়ে চেঁচাচ্ছে কেন?
‘কারন মেয়ে বিয়ে করবে না’ তার উত্তর।
অথচ মেয়েটিকে যে দুই লম্পট মিলে রেপ করতে যাচ্ছিলো এই ব্যাপারটি মহল্লা বাসীও খুব সুন্দর করে এড়িয়ে গেলো গতকাল রাতেই পাশের মহল্লায় থাকা মেয়ের বা-মাকে ডেকে নিয়ে এসে তাদের মেয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হলো।
এই নিয়ে আমি সঠিক লোকটির উপরে আক্রমনাত্মক হলে এলাকাবাসী ও লোকটি আমাকে বেশ হুমকি ধামকি দেয়। কিন্তু আমার কি ক্ষেদ আর সহজে মেটে। মা আমাকে রেগে গিয়ে বা থামানোর জন্যেই হোক একটা থাপ্পর কষে দিলেন। ২৫ বছরে মায়ের হাতের মার নিশ্চয় মিষ্টি লাগার কথা না। আমিও রেগে গিয়ে মাকে দু-চারটা কথা শুনিয়ে দিয়েছি। তার পর ভাবলাম আমি তো আমার মায়ের সাথে ঠিক সে আচড়নটাই করেছি যেটা ছোটবেলায় থাকতে আমার বাবা তার সাথে করতো। তিনি তো আমার ভালোর জন্যই আমাকে আটকেছেন। কিন্তু আমি তখন তা বুঝি নি। এরপর আমার মা বড্ড কেঁদেছে। বড্ড অভিমান করেছে। আমি আমার মায়ের পা ধরে কিছুক্ষণ কাঁদতে চাই কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না।


কোন ব্লগার পুরুষতান্ত্রীক সমাজে নারীদের বলি হতে কিভাবে দেখেছেন খুব জানতে ইচ্ছে করছে।



বি. দ্র. পোস্ট ব্যবহৃত ছবিটি প্রতীকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
২০টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×