somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলমানদের এক রক্তিম অধ্যায়, যার অর্ধেকটা আমরা জানি (শেষ পর্ব)

২৫ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
এ ঘটনা আমি যখন পড়ি তখন ঘৃণার তীব্র একটা তীর আমার বুকে এসে বিদ্ধ হয়, এই কারণে যে, মহান ধর্মের শুরুর দিকের কয়েকজন ইসলামী নেতৃত্ব শুধু মাত্র সিংহাসনের লোভে এত নিষ্ঠুর একটা রক্তাক্ত অধ্যায় রচনা করতে পারলো যা কারবালার ঘটনাকেও হার মানায়। যাদের বীরত্ব ও বুদ্ধিমত্তার উপরে আজকের মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠিত তারা এতটা পাশবিক হতে পারে? এর কারনেই কি নাস্তিকেরা আরবদের বর্বর বলে থাকে? যারা নিজ স্বার্থে পবিত্র কাবা শরীফে রক্তপাত করতে দ্বিধা করে নাই?

ইয়াযিদের মৃত্যুর পর হার একুশ বছর বয়সী পূত্র দ্বিতীয় মু’আবিয়া সিংহাসনে আরোহণ করেন। ইয়াযিদের মৃত্যু ও সিরিয়ান সেনাদলের হিজায ভূমি পরিত্যাগের পর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর হিজায, দক্ষিণ আরব, ইরাক, খুরাসান, মিসর ও সিরিয়ার কয়েক অংশের খলীফা বলে স্বীকৃত হন। খলীফা ইবনে যুবাইর স্বয়ং সিরিয়া অভিযান না করে জুহাক ইবনে কায়স্‌কে সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

দামেস্কে সম্রাট দ্বিতীয় মু’আবিয়ার মৃত্যু হয়। প্রধান অমাত্য বৃদ্ধ মারওয়ান ইবনে হাকাম ইয়াযিদের দ্বিতীয় শিশু পূত্র খালেদের আভিভাবকরূপে রাজ্যভার গ্রহন করেন। মারওয়ান নিজের প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে ইয়াযিদের শিশুপুত্র খালেদের পরিবর্তে নিজ পুত্র আবদুল মালেককে সম্রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী বলে ঘোষনা করেন। এর জন্য খালেদের মা’র প্রদত্ত বিষপান করে বৃদ্ধ মারওয়ানের ভব লীলা সাঙ্গ হয়। এখানে উল্লেখ করতে হয়যে ইয়াযিদের মৃত্যুর পর মারওয়ান ইয়াযিদের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করে তার শিশুপুত্র খালেদের আভিভাভবকরূপে রাজ্যভার লাভ করেছিলেন; কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করে খালেদকে বঞ্চিত করলে, খালেদের মা বিষ প্রয়োগে তার দ্বিতীয় স্বামীর জীবন নাশ করেন।
ওদিকে খলিফা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর মক্কার কাবাগৃহ পরিবর্ধিত আকারে পুনঃনির্মান করেন।
৬৮৫ খীষ্টাব্দে ইমাম হুসাইন এবং তার অনুচরদের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহন করতে তায়ফে বসবাসকারী মুখতার ইবনে আবু উবায়দার নেতৃত্বে একদল শিয়া আস্ত্রধারন করে এবং এরাকের রাজধানী কূফা নগর দখল করে ইমাম হুসাইনের হত্যাকারী শিমার, উমর ইবনে সা’দ, আ’দী ইবনে হাতিম যিনি ইমাম হুসাইনের মৃতদেহ পদদলিত করেন। তাদের হত্যা করে কূফা নগেরর বাহিরে তাদের মৃতদেহ দর্শনার্থীদের উদ্দ্যেশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
কূফার বিদ্রোহ সংবাদ আবগত হয়ে দামেস্ক সম্রাট আব্দুল মালেকের আদেশে আব্দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ একদল সৈন্যসহ কূফা আক্রমন করেন; কিন্তু মুখতারের সহকারী ইবনে ইব্রাহীম কতৃক পরাজিত হন। এখানে বলতে হয় যে মুখতারের সহকারী ইব্রাহীমের সৈন্যদলের সামনের দিকে ঘোড়ার পিঠে শহীদ ইমাম হুসাইনের এক কৃত্রিম বস্ত্রাবৃত করব (তাবুৎ) বহন করা হতো। এর অনুকরণে আজ পর্যন্ত শিয়া মুসলিমরা ইমাম হুসাইনের কৃত্রিম কবর (তাজিয়া) বহন করে প্রকারান্তরে কবর পূজায় লিপ্ত হচ্ছে।
ইব্রাহীমের আদেশে ইবনে জিয়াদের শবদেহ আগ্নিকুন্ডে পুড়িয়ে ইমাম হুসাইন হত্যার প্রতিশোধ গ্রহন করা হয়।
কিন্তু এই ইতিহাসের এখোন দুটো অধ্যায় বাকি আছে।
এদিকে খলিফা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের ভাই মুসাইব ইবনে যুবাইর বসরা থেকে এসে কূফা আক্রমন করেন। ইমাম হোসাইনের মৃত্যুর পর ইরাক ও হেজায সমর্থিত ও ইমাম হুসাইন সমর্থিত খলীফা আব্দুল্লা ইবনে যুবাইরএর ভাই অপর এক দল ইমাম হুসাইন সমর্থিত শিয়া সম্প্রদায়ের সাত হাজার সৈন্যসহ মুখতারসহ সৈন্য বাহিনীকে সমূলে হত্যা করেন।
এর কারণ আজও মুসলিম বিশ্বে রহস্য হয়েই রয়েছে। সে রহস্যের জট খোলার চেষ্টা করবো আরেক দিন। আজ এই ইতিহাস তো আগে শেষ করি।
দামেস্ক-সম্রাট আবদুল মালেক তার প্রতিদ্বন্দ্বী খলীফা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরন করে। উমাইয়া- সেনাপতি কুখ্যাত হাজ্জায ইবনে ইউসুফ ছয় মাস পনের দিন (৬৯১ খ্রীষ্টাব্দ) পর্যন্ত খলীফার রাজধানী মক্কা নগর অবরোধ করে রাখে। তারপর সিরিয়ান সৈন্যগন বারুদের সাহাজ্যে (Vide-Historians History of the World- Voll.III-P.275) নগর প্রাচীর ধ্বংশ করে মক্কা নগর আধিকার করে। খলীফা আব্দুল্লাহ্‌ প্রাণ ভয়ে কাবা শরীফে আশ্রয় নেন। তাকে কাবা শরীফের ভেতরেই হত্যা করে কাবা শরীফে প্রথম মুসলিমের রক্ত প্রবাহিত করে হাজ্জায ইবনে ইউসুফ। তার কাটা মাথা দামেস্কে প্রেরন করেন এবং শরীরের বাকি অংশ কয়েকদিন ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে রাখা (Hitti’s History of the Arabs-P.193) হয়। অবশেষে তার বৃদ্ধা জননী (হজরত আবু বকর (রা)-এর কন্যা) আসমাকে প্রদান করা হয়, হাজ্জাযের কঠোর শাসনে অচিরেই সমগে হিজায, ইয়ামেন ও ইমামা প্রেদেশ উমাইয়া খলীফার বশ্যতা স্বীকার করে। খলীফা ইবনে যুবাইর নহত হইলে আবদুল মালেক সমগ্র মুসলিম সম্রাজ্যের একচ্ছত্র সম্রাট ও খলীফা রূপে গণ্য হন। এর ফলে ইমাম বংশ, আব্বাস বংশ ও উমাইয়া বংশীয়দের ভেতরে শুরু হয় কলোহ। যার শেষ হয় উমাইয়া বংশীয় খলিফাদের উচ্ছেদের মাধ্যমে। কিন্তু আব্বাসী ও ইমাম বংশের অযৌক্তিক কলোহ মুসলিম বিশ্বের শেষ খলিফা পর্যন্ত টিকে ছিলো।
৬৯৬ খ্রীষ্টাব্দে হজরত আলী (রা)-এর অন্যতম পূত্র মুহম্মদ হানিফা জাজিরা নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। উল্লেখ্য মীর মোশার্‌রফ হোসেন লিখিত ‘বিষাদ-সিন্ধু’ও সৈয়দ হামযা লিখিত ‘শাহীদ-ই-কারবালা’য় ইয়াযিদের সঙ্গে মুহাম্মদ হানিফার ত্রিশ বছর কাল যুদ্ধের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা সম্পুর্ণ কাল্পনিক। হজরত ফাতিমার মৃত্যুর পর হজরত আলী ২৭ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তিনি এই সময়ের ভেতরে বেশ কয়েকটি বিয়ে করেন। তাঁদের গর্ভে আলীর তের জন পুত্র ও পনের জন কন্যার জন্ম হয়। পরবর্তী পুত্রদের মুহাম্মদ হানিফা সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন।
৭১৩ খ্রীষ্টাব্দে যখন পারস্যের কুখ্যাত শাসনকর্তা হাজ্জায বিন ইউসুফ ইরাকের টাইগ্রীস নদীর তীরে সুপ্রতিষ্ঠিত ওয়াসিত নগরে গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন কেউ মানুক আর না মানুক তখন চলছিলো ইসলামের স্বর্ণযুগ। উমাইয়াদের দ্বারা বিজিত হয় স্পেন, এশিয়া মাইনর, সিন্ধু। মুহাম্মদ বিন কাশিম, হুসাইন ইবনে নোমান, উত্তর আফ্রিকার বীর শাসন কর্তা মুসা, তারিক বিন জিয়াদের মত বীরদের জন্ম হয়।
হাজ্জাযের ব্যাপারে বলা যেতে পারে প্রথম জীবনে তিনি তায়ফ নগরে শিক্ষাদান কাজে নিয়োযিত ছিলেন। তাঁর বুদ্ধি বলে তিনি হিজায ও ইরাকে প্রেদেশের শাসনকার্যে দক্ষতার পরিচয় দেন। তার কঠোর শাসনে অচিরেই উমাইয়া বংশের বিরুদ্ধে সর্বসাধারণের উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহভাব শান্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই নিষ্ঠুর শাসনকর্তার কোপে এক লক্ষ কুড়ি হাজার লোয়াকের প্রাণদন্ড ও অসংখ্য লোক কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো। তারপরও হাজ্জায বহু জনহিতকর কাজে করে গিয়েছেন। ইরাকের ফুরাত ও টাইগ্রীস নদী থেকে বহু খাল খনন করে কৃষিকাজের সুবিধা করেছিলেন। তিনিই প্রথম আরবী বর্ণমালার অক্ষর সমূহের পার্থক্য-বাচক বিন্দু বা নুক্‌তার প্রচলন করেছিলেন। (Vide-Hitti’s History of the Arabs-P.219)
এই ইতিহাসের আর মাত্র একটি অধ্যায়ের বাকি আছে। আর এই অধ্যায়টি ইতিহাসে এক জায়গায় না বরঞ্চ বিক্ষিপ্ত আকারে ছড়িয়ে আছে। আমি সংক্ষিপ্তে এর বর্ণনা দেবো। ৭১৯ খ্রীষ্টাব্দে উমাইয়া বংশীয় খলীফা হজরত উমর ইবনে আবদুল আযীয সিরিয়ার (রা) হোমস নগরের নিকটবর্তী ‘দিয়ারে সমান’ নামক স্থানে গুপ্তভাবে বিষ প্রয়োগে নিহত হন।
মু’য়াবিয়া থেকে সুলাইমান পর্যন্ত উমাইয়া খলীফারা রাজকোষের ধনসম্পদে প্রজাসাধারণের সত্ত্ব অগ্রাহ্য করে নিজেদের ভোগ বিলাসে ব্যায় করেছিলেন; কিন্তু রাজর্ষি উমর রাজকোষের ধন-সম্পদ প্রজাসাধারণের মঙ্গলের জন্য ব্যায় করার আদেশ দিতেন। তিনি তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি ও স্ত্রীর অলঙ্কার পর্যন্ত রাজকোষে জমা দিয়ে দৈনিক দুই দিরহাম বেতন নিতেন। তিনি পূর্ববর্তী খলীফাদের স্বজনপ্রীতি পরিত্যাগ করে যোগ্যতম ব্যাক্তিকেই প্রাদেশিক উচ্চ রাজকার্যে নযুক্ত করতেন। সম্রাট মারওয়ান ‘ফেদাক’ নামক উদ্যান হজরত ফাতেমার বংশধরদের নিকট থেকে অন্যায় ভাবে দখল করেছিলেন খলীফা উমর ইবনে আবদুল আযীয ঐ উদ্যান প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি রাজস্ব সংগ্রহ বিষয়ে রেশেদিন খলীফাদের নিয়ম পুনঃপ্রবর্তন করেন। তার আদেশে ভূমির মালিকরা ইসলাম গ্রহন করে ইচ্ছা করলে রাজকোষ থেকে বৃত্তি পাবার অধিকার প্রাপ্ত হতো। এই বিধানে আফ্রিকার বার্বার জাতি ও মধ্য এশিয়ার তুর্কমানরা দলে দলে ইসলাম গ্রহন করতে থাকে (Hitti’s History of the Arabs-P.219) মু’আবিয়ায়ার শাসনকাল থেকে প্রতি শুক্রবার মসজিদে জুমা’র খুৎবায় হজরত আলী ও তার বংশধরদের উদ্দেশ্যে ‘তার্বারা’ (অভিশাপ) পাঠ করা হতো। উমর ইবনে আবদুল আযীযের আদেশে ঐ ‘তার্বারা’ রহিত করা হয়। অধিকন্তু তার আদেশেই জুমা নামাজের দ্বিতীয় খুৎবায় পবিত্র কুরানে ‘ن و كذ تن -- لعد با تعمر لله ا ان’ (সুরা নহল) বাক্য সংযোগ এবং বিশ্ববাসী সমস্ত মুসলমানদের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করার নিয়ম প্রচলন করেন। তার নিরপেক্ষ ও ন্যায়বিচার, ধর্মনিষ্ঠা প্রভৃতি নানাবিধ সদগুনের জন্য তাকে হিজিরী দ্বিতীয় শতকে ‘মোজাদ্দিদ’ বলে ডাকা হয়ে থাকে।
উমর ইবনে আবদুল আযীযের মৃত্যুর পর তার ভাই দ্বিতীয় ইয়াযিদ সিংহাসনে বসেন। উনার দ্বিতীয় স্ত্রী সম্প্রর্কে একটি মজার গল্প প্রচলন আছে। এক সময় তাদের প্রমোদ-কাননে ক্রীড়ারতা অবস্থায় ইয়াযিদের স্ত্রী সুকন্ঠী গায়ীকার গলায় আঙ্গুর ফল আটকিয়ে দম বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। শোকাতুর ইয়াযিদ তিন দিন পর্যন্ত তার প্রণয়িনীর লাশ সামধিস্থ না করে অশ্রু বিসর্জন করতে থাকেন। দারুন কষ্টে সাত দিন পর দ্বিতীয় ইয়াযিদ নিজেও মারা যান।
এর পর বেশ কয়েক জন উমাইয়া খলীফা সিংহাসনে বসেন। ৭৪৭ খ্রীষ্টাব্দে সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, ও স্পেনে সিরিয়া ও ইয়মেন বাসী আরবদের মধ্যে শিয়া সুন্নী মতবাদ উপলক্ষ্যে গৃহযুদ্ধ আরাম্ভ হয়। আছারাও উমাইয়া খলীফাগনের কার্যকপলাপে সম্রাজ্যের সর্বত্র জনসাধারণের মনে আসন্তোষ কাজ করছিলো।
এখানে একটু অতীত চারন করি উমাইয়া বংশের প্রথম নেতা আবু সুফিয়ান বহুকাল পর্যন্ত মুহাম্মদ (সা)-এর বিরুদ্ধচারণ করেছিলো এ কথা সবারই জানা। তার পুত্র মু’আবিয়া রাসুলুল্লাহ ও পরবর্তী খলীফারা শাসনকালে সরল পথে অবস্থান করলেও হজরত উসমান (রা) এর সময়ে আর্থ লোভ ও স্বার্থপরতার বশবর্তী ইসলামী সাধারণতন্ত্র যথেষ্ঠ ক্ষতি সাধিত করেন। এরপর খিলাফাতের প্রশ্ন নিয়ে হজরত আলী (রা) এর সঙ্গে বিবাদ ও ষড়যন্ত্রে, ইমাম হাসানের প্রাণনাশ, ইসলামের সনাতন নির্বাচন প্রথার (যাকে প্রথম গণতন্ত্রও বলা যায়) বিলোপ সাধন, ইত্যাদি কাজ-কর্মে জনসাধারণের তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তার ছেলে ইয়াযিদের আদেশে কারবালায় ইমাম হুসাইনের হত্যা, নবী পরিবারের উপরে অত্যাচার, মদীনা ও মক্কার জনসাধারণের প্রতি অত্যাচার, আবদুল মালেকের শাসন কালে হেজ্জায ইবনে ইউসুফের কঠোর শাসন ও হাসেমী বংশের উপর সাম্রাজ্যের সর্বত্র জনসাধারণের মনে আসন্তোষ দেখা দেয়। এজন্য হজরত মুহম্মদ (সা) পিতৃব্য আব্বাস (রা) ও হজরাত আলী (রা) বংশধরগণের পক্ষে জনমত গঠিত হতে থাকে। এই সুযোগে আব্বাসীয় বংশধর ইব্রাহীমের আনুগত আবু মুসলিম জোরজানের যুদ্ধে খোরাসানের শাসনকর্তা নসর ইবনে সাইয়ারকে পরাজিত করেন। ৭৪৮ খ্রীষ্টাব্দে খলীফা ৩য় মারওয়ান খুরাসানের বিদ্রোহের মূল উৎস আব্বাস বংশীয় ইমাম ইব্রাহীমকে কারারুদ্ধ করেন। ইবনে মুহম্মদ ইবনে আলী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস তার পুরো নাম। ইব্রাহীম উমাইয়া উমর উবনে আবদুল আযীযের শাসকাল থেকেই জনসাধারণের কাছ থেকে ‘বায়াৎ’ গ্রহন করতেছিলেন।
বিদ্রোহী আবু মুসলিমের সেনাপতি কাহতাবা ইবনে শাবির তুস, জোরজান, হামাদান ইত্যাদি শহর দখল করেন। এই সংবাদ শুনে খলীফা মারওয়ান কারারুদ্ধ ইমাম ইব্রাহীমকে অতি নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেন।
৭৪৯ খ্রীষ্টাব্দে আবু মুসলিমের সহায়তায় নিহত ইব্রাহীমের ভাই আব্দুল আব্বাস ইরাকের রাজধানী কূফার মসজিদে ইসলাম জগতের খলিফা ঘোষিত হন।
৭৫০ খ্রীষ্টাব্দে উমাইয়া বংশের তের তম ও শেষ খলিফা তৃতীয় মারওয়ান দাজলার উপনদী জাব নদীর তীরে যুদ্ধে আব্বাসীয়া সেনাপতি আব্দুল্লাহ কতৃক পরজিত হয়ে পালিয়ে যান। আব্দুল্লাহ পলায়মান মারওয়ানের পিছনে-পিছনে গিয়ে দেমস্ক নগর দখল করেন। হতভাগ্য মারওয়ান মিসরে পলায়ন করেন; কিন্তু অচিরেই নীলনদের মোহনায় বিসুরী নামক স্থানের এক খ্রীষ্টান গির্জায় আব্বাসীয় সৈন্যের হাতে নিহত হন।
আব্বাসীয়া সেনাপতি আব্দুল্লাহ সিরিয়ার জাফ্‌ফা শহরের নিকট সামরিক শিবিরে উমাইয়া বংশের আশিজন পুরুষকে বিশ্বাসঘাতকতা সহকারে হত্যা করেন।(Vide-Hitti’s Historys of the Arabs.P. 285-286)
আব্দুল্লাহর হুকুমে উমাইয়া বংশের বহু নিরাপরাধ রাজপূত্রেকে মেরে ফেলা হয়। শুধু মাত্র একজন ব্যাক্তি সেদিন সেই হত্যা কান্ড থেকে বেঁচে পালাতে পেরেছিলো। তার নাম আবদুর রহমান।৭৫৫ খ্রীষ্টব্দ পর্যন্ত ছদ্মবেশ ধারন করে জিব্রাল্টার প্রানালীর দক্ষীন তীরস্থ কিউটা (Ceuta) শহরে উপস্থিত হন। সেখান থেকে তিনি স্পেন গমন করেন।
এদিকে উমাইয়া রাজবংশ নির্মূল করেও আব্দুল্লাহর প্রতিহিংসা খান্ত হয় নি। তার আদেশে দামেস্ক, কিনাসিরিন প্রভৃতি স্থানে প্রতিটি উমাইয়া খলীফাদের কবর উৎখাত করা হয়। দামেস্কে সুলাইমানের সবদেহ উত্তলোন করে অপমানিত করা হয় এবং রোসাফায় খলীফা হিশামের কবর খুরে তার সংরক্ষিত লাশের উপরে আশিবার বেত্রাঘাত করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। শুধু মাত্র দিয়ারে সমান নামক স্থানে খলীফা উমর ইবনে আবদুল আযীযের সামাধি স্বসন্মানে রাক্ষা করা হয়। এছাড়া আব্দুল্লাহর ক্রোধ থেকে প্রথম ইয়াযিদের লাশও ছাড় পায় নি। এর মাধ্যমে কারবালার ইতিহাসের সামাপ্তি ঘটে। যেখানে কোন দলই নিজেদের পাশবিকতা দেখাতে পিছ পা হয় নি। মুসলিম বিশ্ব আজও শিয়া সুন্নী দাঙ্গায় ভোগে। ততদিনে নতুন এক সম্প্রদায়ও বানিয়ে ফেলেছিলো নবীজির ইমাম বংশ। সে সমপ্রদায়টির নাম বাতেনী সম্প্রদায় বা ইসমাইলী সম্প্রদায়ও বলা হয়। শিয়াদের এই সম্প্রদায়টিকে নিয়ে অন্য আরেকদিন বিস্তারিত লিখবো। আজ থাক।

রেফারেন্স বই সমূহ
১. Historys of the Arabs- P. K. Hitti
২. Historians History of the World- Voll.III
৩. আল কোরান (সুরা নাহল)
৪. ঐতিহাসিক অভিধান- মোহাম্মদ মতিউর রহমান

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:২৫
২৫টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×