মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে পুরান দিনের কথা, হারিয়ে যাই ছোট বেলার স্মৃতিগুলোর মাঝে। নিজে নিজে চিন্তা করি সেই কতদিন আগের কথাগুলো, হাসি, মন খারাপ করি। কত কিছু আর স্পস্ট মনে আসে না, কেমন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে সময়ের সাথে সাথে, সেইদিন খুব চেস্টা করছিলাম সেই বন্ধুটার কথা যার সাথে কতই না খেলেছি, কতই না মারামারি করেছি…… মনে আসলো না নামটা, চোখের সামনে চেহারাটা ভাসছে।
যখন বিভিন্ন বাংলা গল্পের বই গুলাতে কারো ছোটবেলার কথা পড়ি মনে হয় আরে এতো আমারি ছোট বেলা, কত মিল….. আসলে কি গ্রাম বাংলার সব বালকেরি ছোট বেলা একইরকম? একই রকম উত্তেজনা ও ঘটনা বহুল! খুব অবাক লাগে ভাবতে। আহা… আমি যদি লেখক হতাম তাহলে লিখতে পারতাম এই গল্প গুলা।
এই এলোমেলো স্মৃতির লেখা গুলো সম্পূর্নই নিজের জন্য লেখা, কিছু বছর পর যেন পড়তে পারি।
যতদুর মনে পড়ে….
বেশ অনেক্ষন ধরে চেষ্টা করে যতদুর মনে পড়ছে: অনেক ছোট্ট একটা আমি, রাজশাহীর বাসার খোলা বারান্দায় বসে আছি, সামনে একটা বর্ণমালার বই মনে হয়, মাঝে মাঝে কেউ এসে দেখিয়ে দেয়। আমার কিন্তু বইএ কোন মনোজোগ নাই, তাকিয়ে দেখছি সামনের লেবু গাছে চড়ুই পাখির খেলা, অথবা মাটিতে পিঁপড়ার দল। কত বয়স হবে, ৩ বা ৪, সামনে স্কুলে ভর্তি করা হবে শুনছি, স্কুলের জন্য নতুন ড্রেস বানানো হয়েছে এটা জানি। ভর্তি পরীক্ষার দিন দাদি নিয়ে গেছিল এটুকু মনে করতে পারছি, কেজি স্কুলের অফিসঘর, ছোট্ট আমি টিচারদের মাঝে। মনে আছে পিঁপড়া ইংরেজি কি জানতে চেয়েছিল (এটা কি কেজি তে ভর্তির সময় নাকি ৩ তে ভর্তির সময়? আওলিয়ে গেলো)।
নতুন জীবন, সকাল সকাল সাদা জামা নীল হাফপ্যান্ট পড়ে স্কুলে যাওয়া, ঘাড়ে বইখাতার ব্যাগ। ডালিয়া ফুফু আমাকে জামা কাপড় পড়িয়ে রেডি করে, মোজা জুতা পড়িয়ে দেন, ফিতা বেঁধে দেন, স্কুলে নিয়ে যান রিক্সায় করে। আমাকে প্রতিদিন একটা কমন রিক্সাওয়ালা নিয়ে যেত মনে আছে।
স্কুল থেকে ফিরে এসে অপেক্ষা করতাম কখন আমাকে কেউ সাথে করে পুকুরে নিয়ে যাবে আর আমি দাপাদাপি করবো। সাঁতার জানতাম না তখনো, একা একা পুকুরে যাওয়া নিষেধ। বাচ্চু চাচা বেশি নিয়ে যেত সাথে করে গোসল করতে, কিন্তু তার বদলে কাজ করতে হতো অনেক আমাকে। কাজ আর কি, চাচা বারান্দায় একটা বড় বেন্চে শুয়ে থাকতো আর আমাকে পিঠের উপর উঠে হাঁটা হাঁটি করতে হতো। আমি এই ভাবে হাঁটাহাঁটি করতাম আর বলতাম কখন যাবো? চাচা বলতো আর ৫ মিনিট… এই ৫ মিনিট আর শেষ হতো না, আমিতো তখন ঘড়িই চিনতাম না।
একদিন আমাকে দুই চাচা মিলে পানিতে ফেলে দিলো, সাধারনত তারা আমাকে পিঠে করে নিয়ে সাঁতার কাটতো, সেইদিন কি হলো আমাকে ধাক্কা দিয়ে দুরে ফেলে দিল, আমি যতই প্রানপন চেষ্টা করি যেকোন একজনের কাছে যাবার তারা ততই সরে যেতে থাকে। এইভাবে আমি সেইদিন সাঁতার শিখে গেলাম। আমাদের বাড়ির সামনে বিশাল পুকুর, দিঘী বলা উচিত, সেইখানে আমি পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে সারাদিন দাপিয়ে বেড়াই, আহা কি আনন্দ।
এই লেখাটি আমার ওয়েব সাইটে পূর্বে প্রকাশিত।