somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

..........পটের গান.........বাংলার বাঘ

১৯ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যদি বলা হয় বাংলা রূপকথার ও লোক কাহিনীর একটা বড় অংশ জুড়ে কোন প্রাণীর অবস্থান, নির্দিধায় সাবাই বলবে বাঘ.....শুধু বাঘ না বাঘ আবার মামাও। মানুষের আত্মীক সম্পর্ক গুলোর মধ্যে সবচাইতে মধুর সম্ভাষন। এই রাজসিক বঙ্গ শার্দুলের হলুদ ও কালো ডোরাকাটা দাগের মধ্যে তাকালে একটা অদ্ভুত গতির ব্যাঞ্জনা টের পাওয়া যায়, হলুদ কালোর একটা চমৎকার অপটিক্যাল ইলিউশন।
একসময় জংগলময় বাংলার জীবনের সাথেই জড়িয়ে ছিল বাঘ , শুধু সুন্দরবন বলে নয়, বাংলার প্রতিটি অঞ্চলেই কিন্তু বাঘের গল্প শোনা যায়। ডাঙ্গায় বাঘ, জলে কুমির আর জঙ্গলে সাপ এটাই ছিল একসময়ের বাংলার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ্য।
বর্তমানের নগর সভ্যতার অগ্রাসনে এরা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও আমাদের অবচেতন স্বত্তায় এই সব প্রাণীরা মূর্তিমান সবসময়েই। এই কারনেই বাঘ নিয়ে অনেক প্রবাদ প্রবচন, কথকথা, রূপকথায় ছেয়েছিল জীবন। 'বাঘে মোষে এক ঘাটে জল খায়', 'তিনি ব্যাঘ্র হয়ে বললেন' 'বাঘিনী মেয়ে', বাঘের মাসী.....বিশাল এক তলিকা। এদের নিয়েই আমাদের লোকগল্প, গাথা, টোটেম ট্যাবুর মতো আদিকাল থেকে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভয়ে স্মরন করে চলেছে এদের মানব জাতি।
সেদিন বেঙ্গল গ্যালারীতে "পটের গান বাংলার বাঘ" একটা ব্যাতিক্রমী প্রদর্শনী দেখতে গিয়ে এর প্রভাবটা আরেকবারটের পেলাম। পট শিল্পের প্রতি একটা আলাদা আগ্রহ ছিল আমার বরাবরই, তাই পেপারে খবরটা দেখে আর দেরি না করে হাজির হলাম এক বৃষ্টির সন্ধ্যায়।
পটশিল্পী নাজির হোসাইনের সেই বাংলার বাঘ সংক্রান্ত আখ্যানধর্মী লোককলাসংলগ্গ চমৎকার পটশিল্পের কিছু নমুনা দেখুন.........

তার পট চিত্রগুলোতে ফ্যান্টাসির ছড়াছড়ি, লোক কাহিনী নির্ভর.........
গরুর বদলে অমায়িক চেহারার বাঘ গাড়ি টানে


আবার হাল চাষও করে :)


বাঘের পিঠে বসে হুকো খেতে খেতে কৃষক গল্প করে কিষানীর সাথে!


লাল বাঘ, নীল বাঘ, হাসি হাসি গন্ধ :)


তার ছবিতে গায়ের বধু মাছে কোটে, পাশে স্বামী বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকায় আর হুকো খায়!


সারসের বাঘের গলার কাঁটা বের করার গল্প আর বাঘের নৌকা বাইচ!!


জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ আর সেই পথে বেহুলার ভাসান....


বাঘের পাশে বসে কেউ কি কখনো দোতারা বাজিয়ে গান শুনে দেখেছে কেমন লাগে? আবার মৎস কুমারীর সাথে মৎস বাঘ মামা!


এইটা একটা চরম ছবি। হাস্যমুখি হেলিকপ্টার, সাথে ট্যাংক, কামান, হাতি, সাপ[ পরিবেশ্টিত অত্যাচারী জমিদার আর তার সমানে বাঘের পিঠে মনের সুখে বংশিবাদনরত নায়ক :|


ঘুরি ওড়ায় বাঘ মামা :)


দুই বেহারা পালকি চালায়, হালুম রে.....হুলুম রে :D


গাছের যদি সত্যিই এমন মানুষে মতো মুখ থাকতো তাহলে কেমন হতো!


অক্টোপাস মর্দিনী চতুর্ভুজা বাঘিনী !


এই ছবিটা খুবই মজার, ভাল করে খেয়াল করেন :)


এরকম আরো অনেক চমৎকার সব পট চিত্রের সমাবেশ ঘটেছিল সেদিন, শিল্পীর কল্পনার দৌড়, বর্ণনারিতী, অলংকরণ, শিল্পরিতী সব কিছুই ছিল চমকপ্রদ!
ভাল কথা অনেকেই হয়তো জানেন পটচিত্রটা কি, তারপরও বলছি আবার.....পটের উপর আঁকা চিত্রকে পটচিত্র (Scroll painting) বলাহয়। এটি প্রাচীন বাংলার অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রাচীনকালে যখন কোন রীতিসিদ্ধ শিল্পকলার অস্তিত্ব ছিলনা তখন এই পটশিল্পই বাংলার শিল্পকলার ঐতিহ্যের বাহক ছিল। যারা পটচিত্র অঙ্কন করেন তাদেরকে সে যুগে এবং এ যুগেও পটুয়া বলা হয়। পট শব্দের প্রকৃত অর্থ হল কাপড়। শব্দটি সংস্কৃত "পট্ট" থেকে এসেছে। বর্তমানে এই শব্দটিকে ছবি, ছবি আঁকার মোটা কাপড় বা কাগজের খন্ড ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহার করা হয়। কাপড়ের উপর গোবর ও আঠার প্রলেপ দিয়ে প্রথমে একটি জমিন তৈরি করা হয়। জমিন তৈরির পরে শুরু হয় আঁকার কাজ। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশজ রংয়ের ব্যবহার উল্লেকযোগ্য; যেমন: ইটের গুঁড়া, কাজল, লাল সিঁদুর, সাদা খড়ি, আলতা, কাঠ-কয়লা ইত্যাদি। পটটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে কাজ করা হয় এবং রংয়ের প্রকারের মধ্যে লাল, নীল, হলুদ, গোলাপী, বাদামী, সাদা এবং কালো ব্যবহৃত হয়।
তবে আপনি যদি মনে করেন যে দেশীয় শিল্পের এমন একটি কপি আপনি আপানার বাসায় আনবেন , তাহলে আপনার গুনতে হবে মাত্র পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত /:)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:০৭
৭৯টি মন্তব্য ৮১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×