somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আষাঢ় মাসে একটা আষাঢ়ে গল্প

১৭ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগের কথা, এক বনে ছিলো দু'টো শিয়াল!
একজনের নাম বড় শিয়াল, আরেক জন ছোট শেয়াল।

দুই শিয়ালের খুব গলায় গলায় খাতির, সারাদিন এক সাথে ঘুরে বেড়ায়। ছোট শিয়াল বড় শিয়ালকে মজাদার সব শিকারের খবর এনে দেয়, এরপর বড় শিয়াল শিকারের ঘাড় মটকালে দু'জনে মজা করে খায়।

মাঝে মধ্যে ছোট শিয়াল আবার পাশের লোকালয়েও হানা দিয়ে একা একা মুরগি হাঁস চুরি করে খায়। বড় শিয়ালের সাথে ঘুরলে কি হবে, চুরি করা যার অভ্যাস সে তো চুরি করবেই।


বড় শিয়ালের সাথে ঘুরলে কি হবে, মুরগি চুরি করা যার অভ্যাস সে তো চুরি করবেই!

একদিন এমন মুরগি চুরি করতে গিয়ে গ্রামবাসীর পেতে রাখা ফাঁদের আটকা পরে গেলো ছোট শিয়াল। গ্রামের লোকজন তাকে ধরে একটা খাঁচায় আটকে রেখে চলে গেলো, পরদিন সকালে উত্তম মাধ্যম দেবে এই জন্য। ছোট শিয়াল আটকা পরে বসে বসে ভাবছে কিভাবে বের হওয়া যায় এখান থেকে, ঠিক এমন সময়ে ওদিকে দিয়ে যাচ্ছিল বড় শিয়াল।

সে এমন গাধা; জীবনে ফাঁদ, খাঁচাটাচা এসব দেখেনি, ছোট শিয়ালকে বাঁশের খাঁচার মধ্যে দেখে ভাবলো "আরে এ আবার কি রে।"
সে ছোট শিয়ালেকে শুধালো, 'কি করছো ভাগ্নে ওখানে?'
ছোট শিয়াল ভেতরে বসে একাট আরামের আড়মোড়া ভেঙে বললো "এই তো মামা একটু শ্বশুড় বাড়ি বেড়াতে এসছি।"

এই তো মামা একটু শ্বশুড় বাড়ি বেড়াতে এসছি।

বড় শিয়ালের কোন শশ্বুড়বাড়ি নেই, সে ভাবলো আহা শ্বশুড় বাড়িতো খুবই সুন্দর দেখতে, ভেতরে নিশ্চয়ই আরও অনেক সুন্দর হবে!

সে ছোট শিয়ালকে বললো "ভাগ্নে শ্বশুড় বাড়িতে কি করতে হয়, খাইদাই আরাম আয়েশ কেমন"?
ছোট শিয়াল বলে, "আর বলো না মামা, শ্বশুড় বাড়িতে শুধু আরাম আর আরাম, শুয়ে বসে থাকবে আর তিনবেলা 'মুগরী' খাবে তবে মাঝে মাঝে শালাশালীরা একটু চিমটি কাটে, তবে সেটা কোন ব্যাপার না'।

এই শুনে তো বড় শেয়ালের তো একদম জিবে পানি এসে গেলো, তার আর ভাল লাগছে না, ভাবছে আহারে আমারও যদি এমন একটা শ্বশুড় বাড়ি থাকতো। তখন সে খুব অনুনয়ের স্বরে বললো, 'ভাগ্নে তোমার শ্বশুড় বাড়িটা আমাকে দাও না একদিনের জন্য"!

শুনে ছোট শিয়াল তো মনে মনে খুশিতে ডগমগ, মুখে বললো 'নিতে চাও! এমনিতে আমি আমার শ্বশুড় বাড়ি কাউকে দেই না, কিন্তু তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি মামা, তাই দিলাম।
নাও দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে চলে আসো।"

তখন বড় শিয়াল খাঁচার দরজা খুলে দিল, ছোট শিয়াল এক লাফে বাইরে বেড়িয়ে এলো! আর বড় শিয়াল মনে আনন্দে হেলেদুলে খাঁচায় গিয়ে ঢুকলো।
ছোট শিয়াল বললো "তাহলে থাকো মামা, সকালে শালাশালিরা তামাশা করতে পারে, চিমটি দিতে পারে, তুমি আবার রেগে যেও না। একটু বেলা হলেই তোমাকে 'মুগরী' খেতে দেবে"!

বড় শিয়াল বলো 'আচ্ছা ভাগ্নে, তুমি ভেবো না"। এই বলে মনের সুখে বসে বসে গোঁফে তা দিতে দিতে পা নাচাতে লাগলো।

মনের খুশিতে বড় শিয়াল মুচকি মুচকি হেসে গোঁফে তা দিতে লাগলো

পরদিন সকালে ভোরের আলো ফোটার পরে গ্রামের লোকেরা এসে দেখে, ওরে বাবা, শিয়াল কোথায় এ তো দেখি মোটা কেঁদো বাঘ একটা!

তখন লোকজন যে যেখানে পারে বল্লম, শরকি নিয়ে এসে দূর থেকে খাঁচার ফাঁক দিয়ে বাঘকে খোঁচাতে লাগলো। বড় শিয়াল ভাবলো, এরাই মনে হয় শালা-শালী, আমার সাথে দুষ্টামী করছে, এই ভেবে লাজুক লাজুক হাসতে লাগলো।
আর গ্রামবাসি সেই হাসিকে মনে করলো ভেংচি, তারা রেগে গিয়ে মুগুর নিয়ে এসে কাছ থেকে মুগুর পেটা করতে লাগলো তাকে।
তখন বড় শিয়ালের হুশ হলো, সে বুঝলো ছোট শেয়াল তাকে ভুল বুঝিয়েছে, এই মুগুরই হলো তাহলে 'মুগরী"।

রেগেমেগে সে দিল একটা ভয়ংকর হুংকার, সেই হুংকার শুনে গ্রামবাসীর গলা গেলো শুকিয়ে। তারা তিন লাফে পিছিয়ে গেলো আর এই ফাঁকে বড় শেয়াল খাঁচার দরজা ভেঙে পাগার পাড়!
রাগে গজগজ করতে করতে সে ভাবতে লাগলো, ছোট শিয়ালকে দেখা মাত্র ঘাড়টা দেবো মটকে।
কিন্তু ছোট শিয়াল কি আর তার সামনে পরে, সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে লাগলো।

এদিকে শীত গেলো, গ্রীষ্ম গেলো এলো বর্ষা কাল। বনের চারিদিকে পানি আর পানি, বনের পশুদের খুব খাদ্যাভাব চলছে। ছোট শিয়ালও আর চুরি করতে গ্রামে যেতে পারে না, এদিকে খিদায়ও প্রাণ যায় যায় অবস্থা!
একদিন সে কিছু শুকনো হাড় খুঁজে পেলো, সেই হাড় গুলো নিয়ে একটা উলুর ঢিবির উপরে বসে বসে চিবোতে চেষ্টা করছিল। এমন সময়ে সেখানে এসে বড় শিয়াল হাজির, এখন যাবে কোথায় বৎস। বড় শিয়াল বলে, "ওখানে কি করছিসরে হতচ্ছাড়া, নীচে নেমে আয়। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন"


ওখানে কি করছিসরে হতচ্ছাড়া, নীচে নেমে আয়, আজ তোর একদিন কি আমার একদিন

ছোট শিয়াল ভাবে, মরেছি এবার! সে তখন কড়মড় করে একটা হাড্ডি চিবাতে চিবাতে বললো" মামা খুব খিদা লেগেছিল, তাই নিজের হাত পা গুলো চিবিয়ে খাচ্ছিলাম আর কি"!
বড় শিয়াল বলে "বলিস কিরে, নিজের হাত পা নিজে খাচ্ছিস!"


ছোট শিয়াল বললো, 'হ্যাঁ, কেন তুমি জানো না, বর্ষায় উলুর ঢিবির উপরে বসে নিজের হাত পা নিজেই খাওয়া যায়। এরপর বৃষ্টি নামলেই আবার নতুন হাত পা গজাবে', এই বলে আবার গভীর মনোযোগ দিয়ে হাড় চিবাতে লাগলো!

ওদিকে বড় শিয়ালও বেশ কিছু দিন অভুক্ত, কোন শিকার পায়নি, সে ভাবলো বুদ্ধি তো ভালই!
সেই না ভেবে পাশে আরেকটা উলুর ঢিবির উপরে উঠে নিজের চার হাত'পা নিজেই খেয়ে ফেললো, তারপর বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে রইলো! বৃষ্টি নামলোও ঝমঝম করে, বৃষ্টি ভিজে চুপচুপে হয়ে গেলো সে, কিন্তু হাত পা তো আর গজায় না!
সে হাঁক দিল, ভাগ্গে পা তো গজায় না, কি করি এখন?

পাশ থেকে ভাগ্নে খেক শিয়াল খ্যাক খ্যাক করে হেসে লেজ তুলে পালিয়ে গেলো এক দৌড়ে ....

আর বড় শিয়াল হাত পা হারিয়ে গড়িয়ে নামতে গিয়ে পরে মরেই গেলো একদিন!



চরিত্র রূপায়নে :

বড় শিয়াল: রয়েল বেঙ্গল টাইগার ওরফে বাঘ!

ছোট শিয়াল: পাতি শিয়াল/খ্যাক শিয়াল!

শালা-শালী: গ্রামবাসী!




এটি একটি হাউকাউ পার্টি প্রোডাকশন (চুরি করা)





সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:২৮
৯১টি মন্তব্য ৯২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×