ব্লগে সকলের নানারূপ গদ্য-পদ্য ইত্যকার রচনা দেখিতে দেখিতে একদা আমার মনেও সুপ্ত বাসনা জাগিয়া উঠিল, 'আহ!! আমিও যদি এরূপ লিখিতে পারিতাম!
কিন্তুক, ভাবিলেই কি আর কার্জ উদ্ধার হয়, যতই ভাবি এই পোড়া কি-বোর্ড হইতে সেই রদ্যি মার্কা ইতিহাস পাতিহাস ব্যাতিরেকে আর কিছুই বাহির হইলো না।
শেষ কালে একদিন কতিপয় শুভ্যানুধ্যায়ী কিঞ্চিত বিরক্ত হইয়া কহিল "আপনি শুধু এরূপ আতলামী মাতলামী লিখা লিখেন কেন, সৃজনশীল কিছু লিখিতে পারেন না?"
এহেন স্নেহ মিশৃত ভৎসর্না শুনিয়া মরমে মরিয়া গিয়া মারিয়া হইয়া ভাবিলাম আর নয় এইবার আমাকে একখানি গল্প লিখিতেই হইবে, নইলে ইহ জীবন বৃথা।
ভাবিয়া দেখিলাম সাহিত্য জগতে গল্পের মধ্যে কুলিন হইলো বিয়োগান্তক প্রেম উপখ্যান! মোক্ষম মতন একখানি লিখিতে পারিলে, একবার পাঠকের মর্মমূলে আঘাত করিতে পারিলে এই এক গল্পেই ২০০ লাইক, ৪০০ মন্তব্য, হাজার হাজার হিট।
তাই সমস্ত দিবস রজনী জুড়িয়া উঠিতে বসিতে, হাসিতে কাশিতে, নাইতে খাইতে ভাবিতে ভাবিতে শেষ কালে একদিন গল্পের একখানি ছক কাটিয়া ফেলিলাম। ঘটনা এরূপ...একদা গল্পের নায়ক-নায়িকার শিশুপার্কে দেখা হইবে, এরপরে প্রেমে গদগদ হইয়া উাহারা শিশু পার্কের ট্রেনে চড়িয়া, মেরি গো রাউন্ডে ঘুড়িয়া, চিড়িয়াখানায় চিড়ায় দেখিয়া, বাদাম খাইয়া বেড়াইবে।
বিস্তর ঘুরাঘুরি করিয়া সাধ মিটিবার পরে একদিন নায়ক কহিবে, 'অনেক তো হইলো,এইবার তুমি তোমার পথ দেখ, আমি এক্ষনে বিবাহ করিব'.....বলিয়া চলিয়া যাইবে!
এহেন মর্মান্তিক গল্প ফাঁদিয়া নিজের কৃতিত্বে নিজেকেই পিঠ চাপড়াইয়া দিলাম!
কিন্তু কি বলিবো দু:খের কথা, এইটুকুতেই আমার লেখক প্রতিভার অবসান হইলো, গল্পের ছক হইলেই তো হয় না, আরও পাত্র পাত্রী লাগিবে, উহাদের মুখে ভাষা লাগিবে আর সে সব ভাবিয়া আমি নিজেই ভাষাহীন হইয়া পরিলাম!
এক্ষনে আমাকে দয়াপরবশত হইয়া সাহায্য করিলেন দূর্যোধন! তিনি গল্পের নায়ক নায়িকার মুখে কথা যোগাইবার একটা অভূতপূর্ব ফর্দ ঠিক করিয়া দিলেন........
''এই শোনো''
-''বলো গো''
-''শুনছো?''
-''শুনছি গো''
-''না তুমি শুনছো না''
-''কি যে বলো না গো''
-''হ্যাঁ গো''
-''কি গো?''
-''ও গো''
-''মা গো''
শুন্যস্থান পূরনের মতো করিয়া বসের প্রদর্শিত পথে আমি হাটিতে লাগিলাম, আর ভাবিতে লাগিলাম এইবার আমায় আর ঠেকায় কে! এক গল্প দিয়াই হাসান মাহবুব, মাহী ফ্লোরা, ইত্যকার গাল্পিকদের ভাত মারিব!
এমন সময়ে আমার অনুজ আসিয়া, কহিল কি লিখিতেছিস দেখি দেখি বলিয়া আমার খাতা খানি টানিয়া লইল! আমি কহিলাম, একখানা নভেল লিখিতেছিলাম, দেখ তো কেমন হইলো', বলিয়া উদাস হইয়া আড়চোখে তাহার দিকে তাকাইয়া রইলাম!
সে পড়িতে লাগিলো, পড়িতে পড়িতে দেখি বহুরূপি গিরগিটির মতন তাহার গাত্রবর্ন পরিবর্তিত হইয়া রক্ত বর্ন ধারন করিতেছে~
আমি ভাবিলাম, আহা কতইনা ভাল হইয়াছে আমার প্রথম লেখা খানি, পড়িয়া দু:খে ভ্রাতার এই অবস্থা!
স্মিত হাসিয়া জানিতে চাইলাম, কেমন লাগিলো?
উত্তরে সে কহিল "ফের যদি গল্প লিখিবি তো তোকে পোটলা পেটা করিব, মারিতে মারিতে একদম সাবার করিয়া দেবো"......বলিয়া খাতাখানি ফেলিয়া দিয়া চলিয়া গেলো!
কলিকালের ছেলেপুলেরা এমনই হয়, গুরুজনদের সন্মান করিতে জানে না! দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া নিজের অজান্তেই কখন যে খাতাখানি কাঁচি দিয়া হৃদয় আকারে কাটিতে শুরু করিলাম কে জানে!
হঠাৎ আম্মার হুংকারে ধ্যান ভাঙ্গিল! চমকাইয়া উঠিয়া শুনি তিনি বলিতেছেন " এই দূর্মুল্যের বাজার কোন আনন্দে কাগজ কাটিয়া পাহাড় করিতেছো? থাবরা যদি খাইতে না চাহিস তো ভালয় ভালয় সব জোড়া দে আবার"........বুঝিলাম এই বাক্যবান আমাকেই উদ্দেশ্য করিয়া নিক্ষেপিত হইতেছে!
আরেকটা প্রলম্বিত দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া ভাবিয়া দেখিলাম, এই বয়সে মায়ের হাতে থাবরা খাওয়া কোন কাজের কথা নয়! তাই গ্লু সহযোগে জোড়া লাগাইতে বাসিলাম ছেড়া কাটা হৃদয় গুলা...........
বোকা বেড়াল!
হাস্যমুখি হাতি!
গিয়ানী পেঁচা!
দেঁতো ঘোড়া!
ভ্যাবলা কুকুর!
ভুড়িওয়ালা ভেড়া!
পাজী প্রজাপতি!
সিংহ মামা!
অমায়িক গন্ডার!
লম্বু সারস!
নীল খরগোশ!
সুইট গরু!!
ছবি গুলো পেপার কাটিং ক্রাফট, আঁকা ছবি না! মানে হইলো কিনা, রঙিন কাগজ বিভিন্ন মাপের হৃদয় আকারে কাটিয়া, গ্লু দিয়া জোড়া লাগাইয়া বানানো হইয়াছে!
সুতরাং বুঝিতেই পারিতেছেন, কবি যতই বলুক 'এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে জানো কি তা, লাগে না লাগে না জোড়া".....সে সকল বাজে কথায় না দিয়া খুব আয়েশেই ভাঙ্গাচোড়া, কাটাছেড়া হৃদয় দিয়া বানাইয়া ফেলিতে পারিবেন গরু, বেড়াল, ভেড়া কিংবা গন্ডার!'
প্রেমিক মৎস যুগল!
শেষ কথা:
আপনাদের জন্য আমার সেই করুন গল্পের কিয়দাংশ তুলিয়া দিলাম
......
''এই শোনো''
-''বলো গো''
-''শুনছো?''
-''শুনছি গো''
-''না তুমি শুনছো না''
-''কি যে বলো না গো''
-''হ্যাঁ গো''
-''কি গো?''
-''ও গো''
-''মা গো''
-''কি আমাকে মা বললে!''
-''না মানে মায়াবতী বলতে গিয়ে মা বলে ফেলেছি''
-''মায়াবতী বলতে গিয়ে মা বলেছো, ফাইজলামি করো আমার সাথে? আমি কি লবন ছাড়া ভাত খাই ভাবছো?''
-''ফাজলামি কি করলাম! আর আমাকে ফাজিল বললে মনে হয়''
-''হ্যাঁ বলেছি, ফাজিল মানুষরে ফাজিল বলবো না তো কি পীর বলবো?''
-''হাঁসের মতো গ্যাক গ্যাক করো না''
-'এত বড় কথা, আমার গলা হাঁসের মতো! ঘুরাইয়া একটা থাবরা দেবো''
আর না আগাই, কি বলেন?
একটি হাউকাউ পার্টি পরিবেশনা!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫১