somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২য় বিশ্বযুদ্ধঃ আকাশ কাঁপানো সেরা ১০টি যুদ্ধবিমান

০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ব ইতিহাসের সব থেকে বড় অধ্যায় ২য় বিশ্বযুদ্ধ। নিজেদের সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শক্তিধর দেশগুলো। চলুন সেই সময়ের আকাশ কাঁপানো কিছু যুদ্ধবিমানের হাল হলিকত দেখে আসি।

Chance Vought F4U-4 Corsair :
এই শক্তিশালী ফাইটারের সব থেকে বড় ভুক্তভোগী ছিল জাপান। এর নির্মাতা আমেরিকা। আর F4U-4 Corsair এর প্রধান বহর মোতায়েন ছিল প্যাসিফিক এ। আইওজিমা আর ওকিনাওয়া এর যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয় F4U-4 Corsair। এর গড় গতিবেগ ছিল ৪১৫ মাইল প্রতি ঘণ্টায়। কিন্তু ৩০,০০০ ফীট উচ্চতায় গতিবেগ ৪৩৫ কিমি তে পৌছাত। F4U-4 Corsair এর রেঞ্জ ছিল ১০০৫ কিমি আর সজ্জিত ছিল ৫০ ক্যাল এর ৬ টা মেশিনগান, ২০০০ পাউন্ড বোমা আর ৮ টা ৫ ইঞ্চি রকেট দ্বারা।




Focke-Wulf FW 190 D-9:
কিছু কিছু দিক দিয়ে এই জার্মান ফাইটার বিমানটি ছিল সেরা আর ২য় বিশ্বযুদ্ধে P51 D আসার আগ পর্যন্ত Focke-Wulf FW 190 D-9 এর দখলেই ছিল ইউরোপের আকাশ। এটি ছিল অনেক হালকা আর খুব সহজেই একে নিয়ন্ত্রন করা যেত। এ কারণে পাইলটদের কাছেও অনেক জনপ্রিয় ছিল এটি। সুরক্ষিত আর্মারের পাশাপাশি এটি সজ্জিত ছিল ২ টি ৭.৯ মিমি মেশিনগান ও ৪ টি ২০ মিমি কামান। যদিও FW 190 D-9 এর রেঞ্জ ছিল অনেক কম, মাত্র ৩৯৫ মাইল। এর টপ স্পীড ছিল ৪৫৯ মাইল প্রতি ঘণ্টায় এবং ৩৮০০০ ফিট উপর দিয়ে ওড়ার ক্ষমতা ছিল।




Grumman F8F Bearcat:
প্লেন টি ছিল আকারে অনেক ছোট এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন। ২য় বিশ্বযুদ্ধে ইউএস বিমান বাহিনী দ্বারা বহুল ব্যবহৃত ফাইটার। এর রেঞ্জ ছিল ১১০৫ মাইল এবং গতিবেগ ছিল ৩৫৮ মাইল প্রতি ঘণ্টায়। F8F Bearcat সজ্জিত ছিল ৪ টি ২০ মিমি কামান এবং ৪ টি ১২৭ মিমি রকেট দ্বারা, সেই সাথে ২০০০ পাউন্ড বোমাও বহন করতে পারত।




Lockheed P-38J Lightning:
আকাশে ডগ ফাইটে পারদর্শী এই বিমান ২য় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে যোগ দেয় ১৯৪২ সালের ১৪ই আগস্ট। এটিও ইউএসএ এর তৈরি। আকারে অন্যগুলো থেকে বেশ বড় হলেও এর কার্যকারিতা ছিল অসাধারন। এটি সবথেকে সফল ছিল প্যাসিফিক অঞ্চলে কারন Lockheed P-38J Lightning এর সব কিছু এই অঞ্চলের সাথে খাপ খেয়ে যেত। এর গতিবেগ ছিল ৪২৬ মাইল প্রতি ঘণ্টায় এবং মাত্র ৬ সেকেন্ডে ২০০০০ ফুট উচ্চতায় উঠতে পারত। এর অস্ত্র ছিল ১ টি ২০ মিমি কামান ও ৪ টি ৫০ ক্যাল এর মেশিনগান।




Messerschmitt Bf 109K:
Messerschmitt Bf 109K ছিল জার্মানদের ফাইটার এবং এর প্রথম ডিজাইন করা হয় ১৯৩৩ সালে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে এটিই ছিল জার্মান বিমান বাহিনীর প্রধান শক্তি। একক মডেল হিসেবে Messerschmitt Bf 109K ইতিহাসের সব থেকে বেশি সংখ্যক তৈরি করা বিমান এবং ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত প্রায় ৩৪০০০ এই মডেলের বিমান তৈরি করা হয়েছিল। এটি ইস্টার্ন ফ্রন্ট এ ৯২৮ টি ডগ ফাইট এ জেতার দাবী রেখেছিল। এটি চালানো ছিল অনেক সহজ আর এর গতিবেগ ছিল ৩৫৪ মাইল প্রতি ঘণ্টায়। Messerschmitt Bf 109K এর ওড়ার রেঞ্জ ছিল ৮২০ মাইল। ২ টি ৯ মিমি বন্দুক এবং ৪ টি ২০ মিমি কামান একে করেছিল অপ্রতিরোধ্য।




Mitsubishi A6M Zero:
অনেক দূর পাল্লার যুদ্ধ বিমান এটি। এর নির্মাতা এবং ব্যবহারকারী জাপান। এর রেঞ্জ ছিল ১৮৪৪ মাইল এবং গতিবেগ ছিল ৩৫৮ মাইল প্রতি ঘণ্টায়। মূল ভূখণ্ড থেকে অন্যান্য দ্বীপ ও এশিয়ার দক্ষিণ ভাগ এ পৌছাতে দীর্ঘ সাগর পাড়ি দিতে হত বলে জাপানীরা রেঞ্জ এর দিকে বিশেষ খেয়াল করত। ২ টি ৭.৭ মিমি মেশিনগান ও ২ টি ২০ মিমি কামান দ্বারা সজ্জিত থাকলেও বিপক্ষরা ভয় পেত আরও একটি কারণে। গুলি আর বোমা ফুঁড়িয়ে গেলে Mitsubishi A6M Zero এর পাইলট ফিরে যেত না। পুরা প্লেনটাকেই বোমা বানিয়ে প্লেন সহ ঝাঁপিয়ে পড়ত শত্রুর মাঝে। এর প্রথম অপারেশন ছিল ১৯৪০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর যেখানে ১৩ টি Mitsubishi A6M Zero ডগ ফাইটে নামে ২৭ টি চিনা ফাইটারের সাথে যেগুল ছিল রাশিয়ার তৈরি এবং তারা সবকটি চিনা বিমান শ্যুটডাউন করে ফিরে আসে নিজেদের কোন ক্ষতি ছাড়াই।




North American P-51D Mustang:
অনেক ইতিহাসবিদের মতে এটি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সব থেকে সেরা বিমান। এর একটি এক্সটারনাল ট্যাঙ্ক ছিল যার সহায়তায় রেঞ্জ বেরে দাড়ায় ২২০০ মাইল। North American P-51D Mustang ছিল অনেক দ্রুতগতির এবং খুব সহজে কন্ট্রোল করা যেত। ৪৪৫ কিমি বেগে উড়তে সক্ষম North American P-51D Mustang এর ভিসিবিলিটিও ছিল অসাধারন ফলে পাইলট খুব সহজেই একে ওড়াতে পারত। ৩০০০০ ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম P-51D Mustang এ ছিল ৬ টি ০.৫ ক্যালিবারের মেশিনগান। ১৯৪২ সালে প্রথম অপারেশনে নামে P-51D Mustang এবং প্রথম মাসে ২৮ টি সফল মিশন সম্পন্ন করে যেখানে লস রেট ছিল মাত্র ২%।




Republic P-47D Thunderbolt:
এটি ছিল সিঙ্গেল পিস্টন ইঞ্জিন বিশিষ্ট ফাইটার বিমানের মধ্যে অন্যতম ভারী আর বড়। প্রতি ডানায় ৪টি করে মোট ৮টি ০.৫ ক্যালিবারের মেশিনগান দ্বারা সজ্জিত ছিল Thunderbolt। এর আর্মার ছিল অনেক শক্তিশালী এবং অনেক গোলাগুলি সহ্য করেও দিব্যি উড়তে পারত। বিমান প্রতি লক্ষ্যভেদ আর শত্রুর নিহত হবার হিসাব করলে Thunderbolt ২য় বিশ্বযুদ্ধের অন্য যেকোনো ফাইটার প্লেন থেকে এগিয়ে থাকবে। এটি সাথে করে ২৫০০ পাউন্ড বোমা ও বহন করতে পারত আর এর গতিবেগ ছিল ৪৩৩ কিমি প্রতি ঘণ্টায়।




Soviet Yakovlev Yak-3:
সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটিকে বলা হয় ইস্টার্ন ফ্রন্টের সব থেকে ভালো ডগ ফাইটার। দ্রুত বাক নেবার ক্ষমতা এবং খুব সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিলো বলে এটি হয়ে উঠেছিল শত্রু পক্ষের যম। ৪২৮ কিমি বেগে উড়তে সক্ষম Soviet Yakovlev Yak-3 এর রেঞ্জ ছিল ৫৫৮ মাইল। ১টি ২০ মিমি কামান ও ২টি ০.৫ ক্যালিবারের মেশিনগান সজ্জিত এই বিমান জার্মানদের ঘুম হারাম করে ছেড়েছিল।




Supermarine MKs 24 Spitfire:
বিধ্বংসী ফায়ার পাওয়ার আর সহজ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা Supermarine MKs 24 Spitfire কে করেছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ জঙ্গি বিমান। এটি নিমিষে অনেক উচ্চতায় উঠে যেতে পারত। এটি ৩৯০ মাইল রেঞ্জ এর মধ্যে ৪৫৪ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে উড়তে পারত। ৪টি ২০ মিমি কামানের সাথে ১০০০ পাউন্ড বোমাও বহন করতে পারত এই ব্রিটিশ বিমান টি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের অনেক বিখ্যাত ডগ ফাইটের সাক্ষী এই Supermarine MKs 24 Spitfire।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×