ফেসবুকে পরিচয় দুজনের। প্রথম দিকে হালকা কথাবার্তা, কিছুটা দুষ্টুমি।
- কি করছ পরী?
- পড়ি...
- আস্তে পর যেন ব্যাথা না লাগে।
পরী খিলখিলিয়ে হাসে। এই কথায় কথায় দুষ্টুমি পরীর বেশ ভালো লাগে। দিনে দিনে দুজনের বন্ধুত্ব বেশ গভীর হয়। ফেসবুকে পরীর কোন ছবি দেয়া নেই। শুভ্র দেখতে চায়ওনা। ঘুরতে খুব ভালবাসে শুভ্র। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর ভ্রমণ পাগলের পালে আরও হাওয়া লাগল। এডভেঞ্চার এর নেশায় একদিন বন্ধুরা মিলে ঠিক করল কাল সকালেই তারা কুয়াকাটা রওনা হবে। বাসায় বলে ম্যানেজ করা, ব্যাগ গুছানো আর উত্তেজনায় সেদিন রাত এ আর ফেসবুকে ঢোকা হয়না। পরীর সাথে লম্বা লম্বা মেসেজ এর চ্যাট ও আর হয়না। পরদিন সকালে হইহই করতে করতে বাস এ করে কুয়াকাটা রওনা হয় শুভ্র। আগে সাগর দেখেনি সে। ভাবতেই গা এর মধ্যে কাটা দিয়ে উঠছে তার।
হাসি আড্ডা গানে সময় যে কি করে পার হয়ে গেল টের এ পেলোনা তারা। এমনকি এবড়ো থেবড়ো রাস্তা ও তাদের আনন্দে দাগ ফেলতে পারেনি। রাত ৮ টায় তারা কুয়াকাটা পৌছালো। বাস থামল কুয়াকাটা-ইন হোটেলের সামনে। ওখানেই ২টা রুম নিয়ে কোনমতে ব্যাগ রেখেই সবাই ছুটল সাগরপানে। দৌড়ে সাগরের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল ওরা। আকাশভরা মেঘ। চাঁদ তারার চিহ্নও নেই। শুধু আছে অদৃশ্য সাগরের বিরামহীন গর্জন। সাগরের বিশালতা আর অন্ধকারের গভীরতা সম্মহিত করে ফেলে শুভ্র কে। হটাত করে তার মনে হয় ঠিক এই মুহূর্তে তার পাশে আরেকটা মানুষের খুব দরকার ছিল। পরী। হটাত করে পরীকে এত কেন মনে পড়ছে? কেন ওর কথা মনে পড়ে বুকের ভিতর ফাকা লাগছে? শুভ্র’র মনে পড়ে গেল কাল রাত থেকে ওর সাথে কোন যোগাযোগ করা হয়নি। নিজেকে অপরাধী মনে হল তার। মোবাইল দিয়ে ফেসবুকে ঢুকতে গিয়ে আবিষ্কার করল নেটওয়ার্ক ই নেই। হতাশ হল শুভ্র। কিছুই ভালো লাগছে না তার। বন্ধুদের সৈকতে রেখে দৌড়ালো যদি কোন সাইবার ক্যাফে খুজে পাওয়া যায়। বিধিবাম এই বস্তুও নাই আসেপাশে। আনন্দ কেমন যেন মিইয়ে গেল। দুইদিন তারা কুয়াকাটা ছিল কিন্তু শুভ্র এর মনে হল তার চারপাশ ফাকা। মনের আনন্দ যদি পরীর সাথে ভাগই না করা গেল তাহলে লাভ কি?
দুইদিন পর তারা বাড়ীর পথ ধরল। শুভ্র এর মনে নতুন চিন্তার উদয় হল। আচ্ছা পরীকে কখনো তার পারসোনাল জীবন নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। ও কি একা? না অন্য কেউ তার হৃদয় দখল করে বসে আছে। খুবই অস্থির লাগছে শুভ্রর। এ কেমন অনুভূতি??!! মনে হচ্ছে বুকের ভিতর সবই ফাকা হয়ে আছে। হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাবে নাকি? বাড়ি ঢুকেই এক ছুটে নিজের ঘরে গিয়ে ফেসবুক খুলল শুভ্র। এত্ত স্লো কেন নেটের লাইন? ধুত্তরি!! পরী ১৭ টা মেসেজ দিয়েছে।
“শুভ্র আজ আসলে না যে, অনেক ব্যস্ত তাই না? বুঝছি পরীর কথা ভুলে গেছ :। যাই হোক ভালো থেকো”
“শুভ্র রোজ তোমার সাথে চ্যাট করে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। তুমি আজ আসবেনা? আমার ঘুম আসবেনা তোমার মেসেজ না পেলে। ওই গাধা মিস করছিতো কই তুমি”
.
.
“শুভ্র তুমি ভালো আছতো? কি হইছে তোমার? সুস্থ আছতো? আমার অনেক টেনশন হচ্ছে তোমাকে নিয়ে। কি হইছে বল আমাকে। ৩ দিন কোন খবর নাই। পরশু থেকে ঘুমাতে পারছিনা। প্লিজ কিছু বল। আমার উপরে কোন কারনে রাগ করলে সেটা আমায় বল, বকা দাও তবু এমন চুপ করে থেকনা। অনেক মিস করছি তোমাকে।”
শুভ্রর বুকে ঝড় উঠল। পরী তাকে এত মিস করে? সব জানিয়ে মেসেজ লিখল পরীকে। না বলে যাবার জন্য হাজার বার সরি বলল। বুকে এক চিলতে হিমেল বাতাস নিয়ে বের হয়ে আসল সে। একটু পর আবার ফেসবুকে ঢুকল, পরী রিপ্লাই দিয়েছে। কিছুটা বকা, কিছুটা অভিমান, কিছুটা স্বস্তি মেশানো মেসেজ। হাজার বার পড়ল শুভ্র। মেসেজের শেষের লাইনে শুভ্রর ফোন নাম্বার চেয়েছে পরী কিছুটা আদেশের সুরেই। এই কর্তৃত্ব হাসি মুখে মেনে নিয়ে মেসেজ এর উত্তর দিল সে। মনে এখন অনেক প্রশান্তি। সব কিছুই এত্ত ভালো কেন লাগছে কে জানে!!
রাত এ অচেনা নাম্বার এর ফোন। কানে দিয়ে শুভ্র বলল “কে?”। অপাশ থেকে কপট রাগ “কতজনকে নাম্বার দিছ যে বুঝতে পারছনা কে ফোন দিছে??” পরীর কণ্ঠ এত মিষ্টি??!! এত্ত আদুরে??!! কিছু কথা বলে ফোন রেখে দিল শুভ্র। বিছানায় শুয়ে গুনগুন করতে করতে হটাত মনে পড়ল কে যেন বলেছিল যাদের কণ্ঠ অনেক মিষ্টি তারা দেখতে ভালো হয়না। গুনগুন থেমে গেলো তার। পরমুহূর্তেই মনে হল দেখতে যেমনই হোক ওর সাথে শুভ্রর মনের অনেক মিল। এই মেয়েটাকেই সারা জীবন তার পাশে লাগবে।
কিছুদিন কথা বলার পর ওরা ঠিক করল দেখা করবে। সামনে পহেলা বৈশাখ। ওই দিন ই দেখা করবে তারা। পরী শাড়ি পরবে, শুভ্র বলল লাল পাড়ের শাড়ি আর লাল টিপ পড়তে। শুভ্রর সাদা লালের পাঞ্জাবীও পরীর আবদারের।
চলবে.............