somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ইউনিকোড টাইপিং টিউটর নিয়ে একটি প্রস্তাবনা।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভ্র বিজয়ের ঝামেলা মিটেছে। মোস্তফা জব্বার অভ্রর জনপ্রিয়তার কাছে নতি স্বীকার করেছেন। অভ্র তার নতুন ভার্সনগুলো থেকে ইউনিবিজয় লেআউট বাদ দিয়েছে এবং তাদের নতুন সংস্করন “অভ্র ৫” এর দূর্দান্ত সব ফিচার যোগ করতে যাচ্ছে। অভ্র-বিজয় বিতর্কে মোস্তফা জব্বারের কি সুবিধা হয়েছে, তা জানি না। তবে অভ্র যে সাধারন মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই বিতর্ক সাধারনমানুষদের ভাবিয়েছে যে মাতৃভাষা নিয়ে কাজ করা জরুরী। অনেকেই এর পর বাংলা ভাষার বিভিন্ন সফটঅয়্যার নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিলেন। তার কিছু কাজও আমরা দেখেছি। এখানে অবাক করার মত একটা বিষয় হল বাংলা ভাষা নিয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ন কাজ হয়েছে, তার অধিকাংশই হয়েছে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে, বিনা পারিশ্রমিকে এবং নিজ উদ্যোগে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের কোন সহযোগিতাই উদ্যোক্তারা নেননি অথবা পাননি। এখানথেকেই বোঝা যায় বাঙালীরা মায়ের ভাষা নিয়ে কতটা সচেতন।

আজ বাংলা ভাষার একটি সফটঅয়্যার নিয়ে আলোচনা করতে চাই। মোস্তফা জব্বারের সাথে অভ্র বিতর্কে জড়িয়েছিল ইউনিবিজয় লেআউট এর কারনে। মোস্তফা জব্বার এই লেআউট বা এর আংশিক অনুকরনে কোন লেআউট কে নকল এবং চুরি করা বলে প্রচার করছিলেন। লেআউট এর প্যাটেন্ট হওয়া উচিৎ কি উচিৎ না, সেটা চিন্তা করার আগেই জব্বার সাহেব সেটার পেটেন্ট নিয়ে ফেলেছেন। এখন একটা বিষয় লক্ষ্য করুন, ইউনিবিজয় লেআউট ছাড়াও অনেক লেআউট আছে, কিন্তু কেন বেশির ভাগ মানুষ (যারা ফিক্সড লেআউটে লেখেন) বিজয়ের কাছাকাছি অথবা বিজয় লে আউটে অভ্যস্ত? আমার মনে হয় এর মূল কারন হল আমাদের সবার কীবোর্ডে বাংলা লেখাটা বিজয় লেআউটে সাজানো থাকে, আর আমরা বেশির ভাগ মানুষই কীবোর্ডের দিকে তাকিয়ে বাংলা টাইপ করি (হয়তো পরে কীবোর্ডে না তাকিয়ে লিখতে পারি, কিন্তু শুধুমাত্র বিজয় লেআউট তাদের আয়ত্তে চলে আসে)। আবার আর একটি কারন হতে পারে বিজয়ে বাজারে অনেক আগে থেকেই রয়েছে, সেকারনে অনেক ব্যবহারকারীই বিজয় লেআউটে টাইপ করে অভ্রস্ত হয়ে গিয়েছেন। তারা আবার নতুন করে কোন লেআউট মুখস্ত করতে চান না। এসবের কারনেই বিজয় লেআউটের প্রতি একটা দূর্বলতা দেখা যায়।

সমস্যা যেমন আছে, তার সমাধানও আছে। এ সমস্যা টা দূর হয়ে যাবে যদি যে যার ইচ্ছে মত কোন লেআউটটে কীবোর্ড না দেখে টাইপিংটা (টাচ টাইপিং) শিখে নেয়। কিন্তু এটা শেখা বেশ কষ্টকর (আমার মত অনেকের জন্য)। এখন যদি একটা টাইপিং টিউটর বানানো যায়, যাতে যে কোন লেআউটের বাংলা টাইপিং প্রাক্টিস করা যাবে, তাহলে ব্যহারকারীদের কোন নির্দিষ্ট লেআউট নির্ভরতা কমে যেত। বিজয়ে টাচ টাইপিং শেখার জন্য একটা সফটঅয়্যার আছে। কিন্তু খুব সম্ভবত ইউনিকোডে তেমন কোন সফটঅয়্যার নাই। এমন একটি টাইপিং টিউটর যদি তৈরি করা সম্ভব হয়, যাতে যে কোন লেআউট (ফিক্সড অথবা ফোনেটিক) অনুশীলন করা সম্ভব হয়, তবে নির্দিষ্ট লেআউট নির্ভরতার পাশাপাশি কম্পিউটারে বাংলা লেখা ভীতিও কমে যেত। শুধু তাই না, এর মাধ্যমে দ্রুত টাইপিং করাও আয়ত্ত্বে চলে আসত। এছাড়া যারা বিদেশে থাকেন অথবা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তারাও যে কোন জায়গায়, যে কোন সময় বাংলা টাইপ করতে পারতেন। আর কিবোর্ড দেখে দেখে টাইপ করা কত যে বিরক্তিকর, সেটা বলে বোঝানো সম্ভব না। একটা উদাহরন দিই। কোন একটা লেখায় বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে লিখতে হচ্ছে। সে কারনে কিছুক্ষণ পরপর ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজিতে কিবোর্ড পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলা লেখার সময় ভূল করে কিবোর্ড ইংরেজী থেকে বাংলায় পরিবর্তন করতে মনে থাকল না। আপনি টাইপ করছেন কীবোর্ডের দিকে তাকিয়ে। সেই অবস্থাতেই আপনি মোটামুটি এক প্যারা লিখে ফেলার পর দেখলেন পুরোটা ইংরেজীতে হিজিবিজি লেখা হয়ে আছে। তখন মাথার চুল ছেঁড়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এমন বিপদে আমাকে প্রায়শই পড়তে হয়।

আমি নেটে এ নিয়ে বেশ খোঁজাখুজি করেছিলাম। ভাবলাম ওপেন সোর্স কিছু পাওয়া যায় কিনা, যাতে তার সোর্সকোডে খানিকটা পরিবর্তন করে বাংলা ইউনিকোড টাইপিং সফটঅয়্যার বানানো যায় কিনা সেটা চেষ্টা করে দেখতে। সেরকম একটা সফটঅয়্যার পেলাম, নাম Klavaro। এটাতে অবাক হয়ে দেখলাম এদের ফিচারে বাংলা ইউনিকোড টাইপিং করা যায় বলে উল্লেখ আছে। আর একটু ঘেটেঘুটে দেখলাম অংকুর এর বাংলা লোকালাইজেশনে কাজ করছে। তারা এই প্রজেক্টের নাম দিয়েছে “Bengali Unicode Typing Tutor” । দেখে বেশ ভাল লাগল। সফটঅয়্যারটা নামিয়ে দেখলাম এটা এখনো ব্যবহার উপযোগি হয় নি। উইন্ডোজে বাংলা ফন্টগুলো ভেঙে যাচ্ছে। কাজ এখনো চলছে। তবে নিঃসন্দেহে এটা একটা ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এই প্রোজেক্ট কবে যে শেষ হবে, তার কোন সময় সীমা নেই।

এই বিষয় নিয়ে অমিক্রন ল্যাবের ফোরামে লিখলাম। সেখানে বলেছিলাম এমন একটা টাইপিং টিউটর অভ্রর সাথে জুড়ে দেওয়া যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখতে। তারা এখন “অভ্র ৫” নিয়ে প্রচন্ড ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে। তাদের লোকবলেরও অভাব রয়েছে। এসব বিভিন্ন কারনে তারা এখনই এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে। তবে অভ্র সংশ্লিষ্ট একজন আমাকে জানিয়েছেন যে এই বিষয়টি অভ্র ভবিষ্যতে তাদের সফটঅয়্যারে যোগ করবে। তবে কতদিনের মধ্যে করবে, সেবিষয়ে তারা কোন কথা দিতে পারছেন না। এখানে কমেন্ট নং ১৪ দ্রষ্টব্য )
সামহয়ারইন ব্লগে এসব বললাম এজন্য যে এখানে টেকি মানুষের সমাগম কম নয়। বাংলার প্রতি অন্তরের টান আছে দেখেই আমরা এখানে লিখতে বা পড়তে আসি। সুতরাং এমন একটি টাইপিং টিউটরের কথা কি আমরা ভাবতে পারি না? এটাতে খুব একটা সময় দিতে হবে বলে মনে হয় না। আর একবার যদি এটা তৈরি করা যায়, তাহলে কম্পিউটারে বাংলার জনপ্রিয়তা আরও বাড়ত। এতে বাংলা ওপেনসোর্স সফটঅয়্যারের সম্ভারে আর একটি সফটঅয়্যার যুক্ত হত।
আমি একেবারে প্রোগ্রামিং-এ অন্ধ মানুষ। সেকেন্ড ইয়ারে কিছুটা সি প্রোগ্রামিং শিখেছিলাম। এছাড়া আর কোন প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা হয়নি। আবার এখন ব্যাস্ততার জন্য নতুন কিছু শেখাও সম্ভব না। যেহেতু নিজে পারছি না, তাই বিষয়টা সকলের সামনে তুলে ধরলাম। আশা করি বিষয়টা নিয়ে ব্লগাররা চিন্তা ভাবনা করবেন আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করব। এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।

আমি নতুন এই সফটঅয়্যারের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রস্তাব করছি।

১. সফটঅয়্যার টি হবে ওপেন সোর্স।

২. যেকোন অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করার উপযোগি করে তৈরি করতে হবে।

৩. যেকোন লেআউট এখানে অনুশীলন করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৪. ব্যবহারকারীর নিজে নতুন লেআউট তৈরি করে সেটাও অনুশীলন করতে পারবেন।

৫. কোন অখ্যাত ব্যক্তি বিশেষের নামে এর নামকরন না করে আলোচনার ভিত্তিতে এর একটি সুন্দর নামকরন করা হবে।



আপাতত এই কয়েকটি প্রস্তাবনা থাকল। পরবর্তিতে আলোচনার ভিত্তিতে আরও বৈশিষ্ট্যের সংযোজন করা যেতে পারে।
আশা করছি এই উদ্যোগে উপযুক্ত কেউনা কেউ এগিয়ে আসবেন। এবং চমৎকার একটি বাংলা টাইপিং টিউটর সফটঅয়্যার আমাদের উপহার দেবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:৪১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×