somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনাদিয়া দ্বীপ (ফটোব্লগ -৪ ) শেষ ।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা ভ্রমণ বাংলাদেশ এর সদস্যরা সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর দিয়ে থাকি, সাধারণত ঈদের পরের ট্যুরগুলো একটু বিশালার হয়ে থাকে । এবার আমাদের ট্যুরে সদস্য ছিলাম আমরা ৩৬ জন । আর ট্যুরের স্থান নির্বাচিত হয়েছে সোনাদিয়া দ্বীপ ।

“সোনাদিয়া” কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার একটি সুন্দর দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৭ বর্গ কিমি.। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিনে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালি দ্বীপ থেকে বিছিন্ন হয়েছে। তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া- নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন এবং বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি দ্বীপটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।

সোনাদিয়া দ্বীপের মানব বসতির ইতিহাস মাত্র ১০০-১২৫ বছরের। দ্বীপটি ২টি পাড়ায় বিভক্ত। পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া। দ্বীপের মোট জনবসতি প্রায় ২০০০ জন। পূর্ব পাড়ায় তুলনামূলকভাবে জনবসতি বেশী। মাছ ধরা এবং মাছ শুকানো, চিংড়ি ও মাছের পোনা আহরন দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা। কিছু মানুষ ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও কাঠের সাধারন নৌকা এবং উহা চালানোর সহকারী হিসাবে কাজ করেও জীবিকা নির্বাহ করে। চারিদিকে নোনা পানি বেষ্টিত হওয়ায় এই দ্বীপে তেমন কোন খাদ্য শষ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। দৈনন্দিন প্রয়োজনাদি জিনিস পত্র সব মহেশখালি থেকে ক্রয় করে আনতে হয়।

এই দ্বীপে ২টি মসজিদ, ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি সাইক্লোন সেন্টার, আনুমানিক ১২টি গভীর নলকূপ রয়েছে।
----------------------------------------------------------------------------------
জীব বৈচিত্রঃ



বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্ব উপকূলীয় প্যারাবনের অবশিষ্টাংশ দেখা যায় সোনাদিয়া দ্বীপে। এর বিস্তীর্ন প্যারাবনে রয়েছে সাদা বাইন, কালো বাইন, কেওড়া, হারগোজা, নুনিয়া ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ সহ প্রায় ২৭ প্রজাতির প্যারাবন সংশিষ্ট উদ্ভিদ। দ্বীপের বালিয়াড়িগুলোতে ৩৫ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ জন্মে।

দ্বীপে ৭০ প্রজাতির জলজ ও উপকূলীয় অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এখানে দেখা যায় পৃথিবীব্যাপি বিপন্ন ৩ প্রজাতির পাখি- স্পুনবিল স্যান্ডপাইপার, এশিয়ান ডউইচার এবং নরডম্যানস্ গ্রীনশ্যান্ক। সোনাদিয়া সৈকত এলাকায় পৃথিবীব্যাপি বিপন্ন জলপাইরঙ্গা কাছিমের আদর্শ স্থান। একসময় দ্বীপে সবুজ কাছিম এবং লগারহেড কাছিমের আগমনও ঘটত।

সোনাদিয়ার প্যারাবন, কাদাময় এলাকা, খাল ও মোহনায় নানা প্রজাতির মাছ ও অমেরুদন্ডী প্রানীর আবাসস্থল হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীপের জলভাগে ৮০ প্রজাতির মাছ বিচরন করে, যার মধ্যে বাটা, কোরাল, তাইলা, দাতিনা, কাউন, পোয়া ইত্যাদি প্যারাবন সংলগ্ন খালগুলোতে পাওয়া যায়। এছাড়াও সোনাদিয়ায় ১৯ প্রজাতির চিংড়ি এবং ১৪ প্রকারের শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়। দ্বীপের খাল ও তীরবর্তী সমুদ্র এলাকায় পৃথিবীব্যাপি হুমকিগ্রস্থ ইরাওয়াদি ডলফিন, বটল্নোস ডলফিন এবং পরপইস দেখা যায়।
----------------------------------------------------------------------------------

প্রতিবেশগত সংকাটাপন্ন এলাকা সোনাদিয়া দ্বীপঃ


কোন স্থানের উদ্ভিদ, প্রানী, এবং পরিবেশের অন্যান্য উপাদানসমূহের পারস্পরিক ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক নিয়েই গঠিত হয় সে স্থানের প্রতিবেশ অবস্থা। কিন্তু মানুষের অপরিকল্পিত কার্যকলাপের কারনে দেশ জুড়ে প্রতিবেশ ব্যবস্থা দিন দিন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা রোধে বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী সোনাদিয়া দ্বীপ সহ দেশের ৮টি এলাকাকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ ( Ecologically Critical Area- ECA ) ঘোষনা করেছে।



ইসিএ এলাকায় প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কর্তন, প্রবাল-শামুক-ঝিনুক আহরন, বন্যপ্রাণী শিকার বা হত্যা করা, উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট করা এবং মাটি ও পানির গুনাগুণ নষ্ট করতে পারে এমন যে কোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সকল বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অনধিক ১০ ( দশ ) বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা ১০ ( দশ ) লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।


সংকটের কারণ সমূহঃ



১) চিংড়ি ও লবন চাষের জন্য ব্যাপক হারে প্যারাবন নিধন।

২) দরিদ্র দ্বীপবাসীর জ্বালানীর প্রয়োজন মেটাতে প্যারাবন কাটা।

৩) গরু-মহিষের চরণভূমি হিসাবে প্যারাবনের যথেচ্ছ ব্যাবহার।

৪) বন্যপ্রানী শিকার ও তাদের আবাসস্থল নষ্ট করা।

৫) সামুদ্রিক কাছিমের ডিম অন্যায় ভাবে সংগ্রহ ও বিক্রয় করা।

৬) অতিরিক্ত মৎস্য আহরন ও প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ধরা।

৭) চিংড়ি পোনা আহরনকালে অন্যান্য জলজ প্রানীর ক্ষতি সাধন করা।

৮) মাছ ধরার জন্য অবৈধভাবে জালের ব্যবহার করা।

৯) নির্বিচারে শামুক ও ঝিনুক আহরন করা।

১০) মানুষ ও গবাদী পশুর চলাচল দ্বারা বালিয়াড়ি ক্ষতিগ্রস্থ করা।

১১) কৃষি জমিতে রাসায়নিক সার ও কিটনাশকের ব্যাবহার দ্বারা মাটি ও পানির গুনাগুন নষ্ট করা।

১২) আর্থিক অনটনের কারনে গাছ-পালা নিধন ও বিক্রয় এবং পুনরায় গাছের চারা রোপন না করা।



সোনাদিয়ার অনেক জায়গায়ই এখন ধান করার চেষ্টা চলছে যদিও বালির উপর তাহার আশানুরুপ আবাদ হচ্ছে না ।




তবে বেশীর ভাগ এলাকাই ধূধূ বালুকাময়..........


বন্ধুদের গোসল


সতর্ক অবস্থানে একটা লাল কাকড়া, মানুষের সারা পেলেই হাওয়া হয়ে যাবে ।


ওনারা কিন্তু শেষ বিকালে লেফট্ রাইট করছেন ।


সোনাদিয়ায় আমাদের শেষ বিকালের আলোটা কি কিছুটা বিষণ্ণ ছিল, আমরা চলে আসবো বলে ।




বারবিকিউ টা কিসের বুঝতে পারছেন তো, না বুঝলে বলেই দেই কাকড়া বারবিকিউ হচ্ছে ।


এটা কিন্তু কাকড়া না, ইলিশের বারবিকিউ ।


এতোসব মজার খাবারের পর ঝাউবনের তাবুতে নিদ্রা যাওয়ার কোন তুলনাই হয় না, আর মজাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল শেষ রাতের বৃষ্টি ।


ফিরে আসার আগে শেষবারের মতো সাগরের বালুকাবেলায়...........


বালিতে পা ঢুবিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে দুই বন্ধু


এই ছবিটা মিজান ভাইয়ের তোলা


দু'একজন বাদে আমরা সবাই


এখন ভাটা চলছে, কিন্তু নৌকা আমাদের চাই ই চাই


আমাদের মালামাল উঠানো হচ্ছে ছোট নৌকায়, বড় নৌকা ভাটার সময় তীরে ভীরতে পারে না তাই ।


আমাদের ফিরে আসা..............


বিদাই সোনাদিয়াবাসী, আবার আসিব ফিরে সোনাদিয়া নামক এই সোনার দ্বীপে, তোমাদের দ্বীপকে মনে থাকবে চিরদিন ।



সোনাদিয়া দ্বীপ (ফটোব্লগ) -১

সোনাদিয়া দ্বীপ (ফটোব্লগ) -২

সোনাদিয়া দ্বীপ (ফটোব্লগ) - ৩
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×